ঈদ বিনোদনের নতুন মাত্রা বিভিন্ন পার্ক

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: সারাবিশে^র মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ় করতে আল্লাহর কৃপা ও গুনাহ মাফের ফরিয়াদের মধ্যদিয়ে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ সারাদেশে পবিত্র ঈদ উল ফিতর পালিত হয়েছে। ঈদের ওয়াজিব নামাজ আদায়ের পর বিকেল থেকেই চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের বিনোদন কেন্দ্রগুলোসহ দর্শনীয় স্থানে ভিড় জমতে থাকে। ঈদের পরদিনেও জমজমাট ছিলো বিনোদনকেন্দ্রগুলো। গতকালও কমতি ছিলো না ভিড়ে। বাজারঘাটে জামাই বিদায়ের বাজারও জমেছে বেশ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে শিশুস্বর্গের পাশাপাশি পুলিশ পার্ক চিত্তবিনোদনের প্রাণকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। বিনোদনের নতুন নতুন উপকরণও যুক্ত করা হচ্ছে প্রায় প্রতিবছর। দামুড়হুদার ইব্রাহিমপুরে মেহেরুন নেছা পার্কতো কয়েক বছর ধরেই জমজমাট। একই উপজেলার শিবনগরে ডিসি ইকোপার্কেটিও ঈদে জমজমাট হয়ে ওঠে। যেন মেলায় রূপ নেয়। এসব দেখে একই উপজেলার লোকনাথপুরে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পার্ক। নাম দেয়া হয়েছে ঘুমিয়ে পৃথিবী। দর্শনার দক্ষিণ চাঁদপুরের শাপলা পার্ক উদ্বোধনের দু দিনের মাথায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ১৫ হাজার পেরিয়েছে। মেহেরপুরের আমঝুপি নীলকুঠি, মুজিবনগর ও গাংনীর ভাটপাড়ায় গড়ে তোলা ডিসি ইকো পার্কে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঈদের দিন বিকেল থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় পড়েছে। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন। ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্স ও আমঝুপি নীলকুঠির পাশাপাশি এবারে বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে গাংনীর ভাটপাড়া নীলকুঠিতে নির্মিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইকোপার্ক। জেলার মধ্যে ডিসি পার্কটি বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ভাটপাড়া কুঠি ডিসি পার্কে ঘুরতে এসেছেন অনেক কর্মব্যস্ত মানুষ। সারা বছর কাজের চাপে পরিবারকে তারা সময় দিতে পারেন না। ডিসি ইকো পার্কের নকশাকার গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সেন বলেন, ১০০ বিঘা জমির ওপর পার্কটি স্থাপিত হচ্ছে। পার্কের পশ্চিম পাশের কাজলা নদী পুনর্খনন করা হচ্ছে। নদীর দুপাড়ে দৃষ্টিনন্দন বাগানের মধ্যে বসার স্থান ও পায়ে হাঁটার পথ নির্মাণ করা হবে। পুনর্খনন কাজ শেষে হলে আরো দৃষ্টিনন্দন করা হবে।
আমাদের মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঈদোত্তর বিনোদনের জন্য হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগর আ¤্রকাননে। আ¤্রকাননের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করেতে ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে ঈদের ছুটিতে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় খুশি তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে কেউ যাতে কোনো নাশকতা করতে না পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদের দিন বিকেল থেকে বিনোদন প্রত্যাশীদের ভিড় শুরু হয়। বৃষ্টিও বাধ সাধাতে পারেনি ভ্রমণপিপাসু মানুষকে। সকাল হলেই বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, ট্রাক, শ্যালোইঞ্জিন চালিত নসিমন, করিমন, আলগামন ও মোটরসাইকেলযোগে আসতে থাকেন দর্শনার্থীরা। কেউবা এসেছেন প্রিয়জনের সাথে একান্তে গল্প করেও সময় কাটাতে। লাউড স্পিকারে বাজানো গান ও মিউজিকের মাধ্যমে নেচে গেয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আবার কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে। কচিকাচা শিশুরা মুগ্ধ ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখে।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলা তথা মুজিবনগর আ¤্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছিলেন। মুজিবনগর হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী। মুজিবনগরে শথপ গ্রহণ করা সরকারের অধীনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকহানাদার মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। এ কারণে দর্শনার্থীদের কাছে আ¤্রকানটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত।
আমাদের কুড়–লগাছি প্রতিনিধি হাসেম রেজা জানিয়েছেন, মানুষের পদচারণায় মুখরিত দামুড়হুদার শিবনগর ইকোপার্ক এবং বটতলীর বিলের তীর। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে দামুড়হুদারসহ আশপাশের উপজেলার ও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন বিনোদনপ্রেমী হাজারো মানুষ ভিড় করছেন দামুড়হুদার শিবনগর ইকোপার্ক, বিভিন্ন বিনোদনের তীরগুলোতে। বিনোদন প্রেমীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো প্রাকৃতিক লেক এলাকা। শুধু ঈদের দিনটিতেই নয় গত কয়েকদিন থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোরসহ সব বয়সেরই বিনোদন প্রেমী দর্শনার্থীদের পদচারণায় ও মিলনমেলায় মুখরিত ও প্রাঞ্জলিত হয়ে উঠেছে এবং আশপাশের এলাকা। নাটুদা তালসারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শহিদুল ও স্থানীয় সবুর মেম্বার জানান, ঈদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত হাজার হাজার বিনোদন প্রেমীর ভিড়ে পুরো লেক এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। ইকোপার্কের রক্ষা প্রকল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি দোকান। সেসব দোকানেও চলছে হরদম বেচাকেনা।