অবরোধ: চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির দু পক্ষের মিছিল মেহেরপুরে ঝটিকা : বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ গুলি সাতক্ষীরায় যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত : ঢাকায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে পুলিশ কনস্টেবল

স্টাফ রিপোর্টার: টানা ৪ দিনের অবরোধের শেষ দিনে গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে অবরোধকারীরা মিছিল করেছে। তবে তেমন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর গুলিতে এক ভ্যানচালক প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। অপরদিকে রাজধানীতে অবরোধের পর গতরাত সাড়ে ১১টার দিকে বাংলামোটরে পুলিশের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে পুলিশ কনস্টেবল ফের‌দৌস প্রাণ হারান। আহত হন গাড়ির চালকসহ দুজন।

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাংলা মোটর পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশের রিকুইজিশন করা ওই বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। কলাবাগান থানার এসআই হারুনুর রশীদ বলেন, থেমে থাকা বাসে তিন পুলিশ সদস্য ছিলেন, এর মধ্যে একজন পুড়ে মারা গেছেন, আহত হয়েছেন অন্য দুজন। আগুনে পুলিশ কনস্টবল মো. ফেরদৌস (৩৫) নিহত হন। আহত দুজনের মধ্যে একজন কনস্টেবল ফায়জুল ইসলাম (৪১) এবং কুসুমপুর পরিবহনের ওই গাড়ির চালক মো. বায়েজিদ (২৫)। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজারে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে যৌথবাহিনীর গুলিতে হাফিজুল ইসলাম (২৫) নামে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে এক সাইকেল মিস্ত্রি। নোয়াখালীর সেনবাগে সোমবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত ২২টি ট্রাক ভাঙচুর করেছে অবরোধকারীরা। এদিকে, ১৮ দলের অবরোধে গতকালও দেশের বিভিন্নস্থানে যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

একতরফা নির্বাচন বাতিল, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৮৩ ঘণ্টার অবরোধের শেষ দিনে অবরোধের সমর্থনে জেলা বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মিছিলটি দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের শহীদ হাসান চত্বর হয়ে কোর্টরোড অভিমুখে যাওয়ার পথে ভি.জে স্কুলের সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়লে দলীয় কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম জেনারেল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন অ্যাড. আ স ম আবদুর রউফ, অ্যাড. শামিম রেজা ডালিম, শহিদুল ইসলাম রতন, আবু জাফর মন্টু, মজিবুল হক মালিক মজু, লিয়াকত আলী শাহ প্রমুখ।

অপরদিকে বিএনপি একাংশ কোর্টমোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় কোর্টমোড়ে সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মনি। বক্তব্য রাখেন অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, অ্যাড. এসএম শাহাজাহান মুকুল, আব্দুল হালিম হিরু, মাহামুদুল হক পল্টু, রউফুন নাহার রীনা, আবু আলা সামসুজ্জামান, আসাদুজ্জামান, খালেদুজ্জামান খোকন, সাইফুর রশিদ ঝন্টু প্রমুখ। বক্তারা বলেন,  হামলা, মামলা, নির্যাতন করে গণআন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। চুয়াডাঙ্গার ছাত্রদল নেতা ওয়ালিদ হাসান ও বিদ্যুত হোসেনকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা করে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানান। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে ২৯ তারিখে ঢাকামুখি গণযাত্রাতে স্বর্তস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য জেলার সকল শ্রেণিরপেশার মানুষকে আহ্বান জানান।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশের দফতর সম্পাদক আবু আলা সামসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, আজ বুধবার বেলা ২টার দিকে জেলা বিএনপির কেদারগঞ্জস্থ দলীয় কার্যালয়ে এক জরুরিসভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় জেলা বিএনপির সকল দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হলো।

১৮ দলের ডাকা ৮৩ ঘণ্টা অবরোধের শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটে রেল স্লিপারে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে অবরোধ করার চেষ্টা করে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। ঘটনাটি ঘটে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে জীবননগর আনসারবাড়িয়া এলাকায়।

এদিকে, গত সোমবার গভীররাতে জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে অবরোধ সমর্থকরা। মঙ্গলবার সকালে অবরোধ সমর্থনে শহরের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করতেও দেখা যায়। নাশকতা ঠেকাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুজন ভ্রাম্যমাণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৪ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চুয়াডাঙ্গা বিজিবির ৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনিরুজ্জামান জানান, বিজিবির এডিশনাল ডাইরেক্টর সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গা জেলায় তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, অবরোধের শেষ দিনে ঝিনাইদহের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ডে মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি আরাপপুর বাসস্ট্যান্ডের গোলচত্বর প্রদক্ষিণ শেষে রাবেয়া ক্লিনিকের সামনে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করে। অপরদিকে শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিকদলের পক্ষ থেকে অপর একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে পুলিশ এলে নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়।

এদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে গভীররাতে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার রাত ২টার দিকে মুখোশ পরা ৮-৯ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় বাজারের নৈশপ্রহরীকে আটকে রেখে চেয়ার-টেবিলে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে পার্শ্ববর্তী লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শৈলকুপা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিকদার মোশারফ হোসেন সোনা দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত স্বতন্ত্রপ্রার্থী নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অপকর্ম চালাচ্ছেন। তারা এ অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে থানা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরের রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করেনি জোটের নেতাকর্মীরা। তবে মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের রাজনগর ঘোড়ামারা ব্রিজ এলাকায় কয়েক মিনিটের একটি ঝটিকা মিছিল করে। মিছিল শেষে ফিরে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা ফাঁকা স্থানে কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করে। বিকট শব্দে ককটেলগুলোর বিস্ফোরণ ঘটে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অবরোধে রাজপথে আর কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। এদিকে অবরোধের কারণে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করেছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সড়কগুলোতে সতর্ক টহল ছিলো র‌্যাব ও বিজিবির।