৮ ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় : ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার

ঢাবি ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ১২ জনের কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার: ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আটঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় বলে জানা গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে এখনো তথ্য প্রমাণ আসেনি। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা হতে ১১টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ মোট ৮৬টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষায় ৯৮ হাজার ৫৪ জন ভর্তিচ্ছু অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে কয়েকজনের ই-মেইলে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার ইংরেজি অংশের ২৪টি প্রশ্ন পাঠানো হয়। পাঠানো প্রশ্নের সাথে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছে বেলা ১০টা ৪৮ মিনিটে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে উল্লেখ করে একজন বাংলা অংশের প্রশ্নপত্র পাঠান। ওই শিক্ষক অনুষ্ঠিত পরীক্ষার বাংলা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পাঠানো প্রশ্নের হুবহু মিল পান। ক্ষোভের স্বরে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বের জায়গা ছিলো ভর্তি পরীক্ষা। সেটাও শেষ হয়ে গেলো! প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী বলেন, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। ডিজিটাল জালিয়াতি করায় মাস্টারমাইন্ডসহ ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে পরীক্ষার সমন্বয়ক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক সাদেকা হালিম  বলেন, আমি প্রশ্নপত্র দেখিওনি, জানিও না। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো খবর আমার কাছে নেই। তথ্য প্রমাণ পেলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে এর জবাবে তিনি বলেন, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে।

উল্লেখ্য, ভর্তি পরীক্ষাকে আশঙ্কামুক্ত করার জন্য সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক এজেএম শফিউল আলম ভুঁইয়া অনুষদেরই একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পরীক্ষা সংক্রান্ত জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বদলির জন্য উপাচার্য বরাবর সুপারিশ করেন। কিন্তু এর কিছু দিন পরেই শফিউল আলমকেই ডিন পদ থেকে সরিয়ে অধ্যাপক সাদেকা হালিম’কে ডিন করা হয়। ওই সময় শফিউল আলম ভুঁইয়া সংবাদ সম্মেলন করে বলেন,‘আমাকে এমন এক সময় সরানো হলো যখন আমি ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছি। সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেনি। পরীক্ষার পরে শুনছি মধ্যরাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।

ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে : ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার, আটক ১৫: ঢাবিতে ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৫ জন আটক হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী জানান, ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার রাতে শহীদুল্লাহ হল থেকে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। আর পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ডিজিটাল ডিভাইসসহ ১৩ জনকে আটক করা হয়। পরীক্ষার আগের রাতে আটক দুজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন রানা এবং ফলিত রসায়নের প্রথম বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন। রানা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র। মামুন অমর একুশে হলের আবাসিক ছাত্র। আটককৃত অন্যরা হলেন- কিশোরগঞ্জের ইশতিয়াক আহমেদ, গাইবান্ধার আব্দুল্লাহ আল মুকিম ও মোহাম্মদ রিশাদ কবির, পাবনার মিরাজ আহমেদ, বগুড়ার জয়সাহা, কুমিল্লার নূর মোহাম্মদ মাহবুব, রেজোয়ানা শেখ শোভা ও মাসুকা নাসরিন রোজা, ময়মনসিংহের তারিকুল ইসলাম, রংপুরের নাসিরুল হক নাহিদ, ফরিদপুরের এমডি ফারহাতুল আলম রাফি, নাটোরের  মিনারুল ও ইশরাক হোসেন। এদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহীদ এলাহী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। আটককৃত দুই ঢাবি ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানানো হয়। প্রশ্ন ফাঁসের সাথে ছাত্রলীগ নেতার জড়িত থাকার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।