৬ হাজার তালেবানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে

পেশোয়ারে আর্মি পাবলিক স্কুলে শিশুদের ওপর বর্বর জঙ্গি হত্যাযজ্ঞে শোকে স্তব্ধ পাকিস্তান

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ৬ হাজার তালেবান সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। পাকিস্তানের স্কুলে ১৪৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় গতকাল বুধবার সকালে পেশোয়ারে সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জঙ্গি তত্পরতার সাথে সংশ্লিষ্ট ওইসব তালেবান সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিলো পাকিস্তান।

এদিকে গত মঙ্গলবারের হত্যাযজ্ঞে নিহতদের জানাজায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনরা প্রিয় সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে যাওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা প্রিয় সন্তানকে বিদায় দিয়েছেন চোখের জলে। নিহতদের স্মরণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে গোটা দেশ। স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সব ধরনের পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, পাড়া-মহল্লায় নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া করা হয়েছে। মঙ্গলবার ১৩২ জন শিক্ষার্থীসহ ১৪১ জন নিহতের পর গতকাল চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান আরো তিনজন।

প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সভাপতিত্বে সব দলের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ডের স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন নওয়াজ শরীফ। সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানান। তালেবানদের সাথে আলোচনা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান নওয়াজ। তিনি বলেন, তাদের সাথে আলোচনার যে পথ উন্মুক্ত হয়েছিলো তা আর এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয় বরং তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আর তালেবানদের মধ্যে ভালো-মন্দের প্রভেদ নেই। এদের রুখে দিতে দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রধান লড়াই। এইসব সন্ত্রাসীকে শেষ না করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সব রাজনৈতিক দলকে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে।

ক্ষমতায় আসার পরই নওয়াজ শরীফের সরকার ৬ হাজার তালেবান সদস্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের আগস্টে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির সাজা কার্যকরের উদ্যোগ নেয় নওয়াজের সরকার। কিন্তু পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সহ-সভাপতি আসিফ আলী জারদারি এবং মানবাধিকার সংগঠনের চাপের মুখে মৃত্যুদণ্ডের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন আদালত। এদিকে প্রধানমন্ত্রী তালেবান সদস্যদের মৃত্যুদণ্ডের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসাইনও ক্ষমার আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির এ ক্ষমার আদেশ ২০১২ সাল থেকে ঝুলে ছিলো। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ তেহরিক-ই তালেবানের প্রধান মোল্লা ফজলুল্লাহকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনতে আফগানিস্তান সফরে গেছেন। আফগান শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে পেশোয়ার হত্যাযজ্ঞের প্রধান পরিকল্পনাকারী ফজলুল্লাহকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করেন। জেনারেল রাহিল আফগানিস্তানে ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এসিসট্যান্স ফোর্সের (ইসাফ) কমান্ডার জেনারেল জোসেফ ডানফন্টের সাথেও দেখা করেন।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের তালেবান অধ্যুষিত দুর্গম অঞ্চলে ও দেশটির সীমান্তবর্তী কয়েকটি স্থানে বুধবার বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই হামলায় বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে সেনাপ্রধান জেনারেল রাহেল শরিফ এক বার্তায় দাবি করেছেন, খাইবার অঞ্চলে ম্যাসিভ এয়ার স্ট্রাইক চালিয়েছেন তারা। গত মঙ্গলবারের হামলার পর তেহরিক-ই-তালেবান দায় স্বীকার করে জানিয়েছিলো তাদের পরিবারের ওপর আক্রমণের জবাব দিতেই স্কুলে ওই হামলা চালানো হয়। আর গতকাল বুধবার সেনাবাহিনীর বিমান হামলার জবাব তারা দিয়েছে আরেকটি বালিকা মহাবিদ্যালয়ে বোমা হামলা চালিয়ে। খাইবারের ডেরা ইসমাইল খান শহরে গার্লস ডিগ্রি কলেজে বিকেলে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।