৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে শেষ হয়নি কেরুজ চিনিকলের আধুনিকায়ন : আজকালের মধ্যে শুরু হচ্ছে বয়লারের কাজ

দর্শনা অফিস: ১৮৪৭ সালে মি. রাবর্ড রাসেল কেরু অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ওই মদ কারখানার সাথে যুক্ত হন এবং কালক্রমে তা কিনে নেন। উত্তর ভারতের রোজাতে অবস্থানকালীন ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের সময় কারখানাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা পুনর্নির্মাণ করে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি গঠন করে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছিলো। রোজাতে ব্যবসায় উন্নতি লাভ করলে আসানসোলে ও কাটনিতে কোম্পানির শাখা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ১৯৩৮ সালে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ১ হাজার টন আখ মাড়াই ও ১৮ হাজার লিটার স্পিরিট তৈরির লক্ষে আরও একটি শাখা স্থাপন করা হয় তৎকালীন নদীয়া জেলার বর্তমানে দর্শনায়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর এ কারখানাটি পরিণত হয় শত্রু সম্পত্তিতে। ১৯৬৮ সালে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি পাকিস্তান লিমিটেডের স্থলে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইপিআইডিসির ওপর ন্যাস্ত করার সরকারি প্রচেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তা অকার্যকর হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। তখন থেকেই কেরুজ চিনিকলটি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। ৭৯ বছর বয়সী পুরোনো এ মিলটির অবস্থা দু বছর আগে ছিলো একেবারেই নাজুক। জোড়াতালি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চালানো হতো আখ মাড়াইয়ের কার্যক্রম। সরকার এ মিল থেকে প্রতি বছর শ শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আধুনিকায়নের জন্য সরকারের সংশিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ২০১২ সালে ৪৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৩ সালের জুনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস (বিএমটিএফ) আধুনিকায়নের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়নি। যে কারণে ২০১৬ সালের জুন মাসে মিলের বয়লিং হাউজের কাজ শুরু হয়। বিএমটিএফ’র কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নেয় ভারতের সাইসিদা সুগার ইকুইমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। এরই মধ্যে বেশ কিছু কাজ শেষ করেছে সাইসিদা কোম্পানি। এখনো পর্যন্ত টার্বাইন, বয়লার ও মিল হাউজের কাজ বাকি রয়েছে। তবে মিল হাউজের কাজের জন্য পুণরায় টেন্ডার হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এদিকে ৪০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সর্ম্পন্ন বয়লার আধুনিকায়নের কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাইসিদা কোম্পানি। এরই মধ্যে সাইসিদা কোম্পানি প্রকৌশলী বিজয় কামলে ও ডিকে বিজয় পাওয়ার কেরুতে অবস্থান করেছেন। ২/১ দিনের মধ্যে বয়লারের কাজ শুরু করে আগামী ৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ করা হতে পারে বলে বিজয় কামলে ও ডিকে বিজয় পাওয়ার জানিয়েছেন। এ কাজের শ্রমিক ঠিকাদারীর দায়িত্ব পেয়েছে দর্শনা হোসেন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের পক্ষে মাহবুবুর রহমান ছট্রু। কেরুজ চিনিকলটির আধুনিকায়নের কাজ শেষ হলে একদিকে যেমন যান্ত্রিক ক্রুটির কবল থেকে রেহায় পাবে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হবে মিলকর্তৃপক্ষ। চিনি কারখানা থেকে গুণতে হবেনা লোকসান। রক্ষা পাবে সরকারের মূল্যবান সম্পদ।