৪ দিন পর জামায়াতকর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার : কোটচাঁদপুর ও মহেশেপুরে হরতাল আজ

পরিবারের সদস্যদের দাবি শাদা পোশাকে পুলিশ ধরে তুলে নেয় মাইক্রোবাসে : গ্রেফতারের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি পুলিশের

 

কোর্টচাদপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে অপহরণের ৪ দিন পর ইউপি সদস্য জামায়াতকর্মী হাফেজ আবুল কালাম আজাদের (৪০) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সকালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মামুনশিয়া গ্রামের মাঠে বকুলতলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত কালাম কোটচাঁদপুর উপজেলার বলাবাড়িয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন।

জামায়াতকর্মী ইউপি সদস্য হাফেজ আবুল কালাম আজাদ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় আজ মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যার হরতাল ডেকেছে স্থানীয় জামায়াত। কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় জামায়াতের আমির মাওলানা তাজুল ইসলাম সোমবার বিকেলে দু উপজেলায় হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। নিহতের পরিবার দাবি করছে, আবুল কালামকে আটকের পর ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ শিবু পদ দত্ত জানান, সকাল ৭টার দিকে মামুনশিয়া গ্রামের বকুলতলা এলাকায় কৃষকরা একটি গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে সকাল ৭টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় স্থানীয়রা লাশটি ইউপি সদস্য আবুল কালামের বলে শনাক্ত করে। নিহতের শরীরের বুকের ওপরে ও গলায় দুটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। সম্ভবত সোমবার ভোরের দিকে কে বা কারা হত্যা করে লাশটি ফেলে রেখে গেছে বলে জানান তিনি। তবে এ ঘটনায় এখনও থানায় কোনো মামলা হয়নি।

কোটচাঁদপুর থানার ওসি ফজলুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র ছিনতাই, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন দেয়াসহ রাজনৈতিক সহিংসতার ৯টি মামলা রয়েছে। পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে কারা-কিভাবে তাকে হত্যা করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে আবুল কালামের পরিবারের সদস্যদের বলছেন, পুলিশ তাকে আটকের পর হত্যা করেছে। নিহতের বোন হাওয়া বেগম অভিযোগ করেন, গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে কোটচাঁদপুর উপজেলার সাইনবোর্ড বাজার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে শাদা পোশাকধারী লোকেরা তার ভাইকে নীল রঙের মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। বাজারের শ শ মানুষ তা দেখেছেন। চার দিন পর সোমবার সকালে তার ভাইয়ের লাশ পাড়ে থাকার কথা তারা জানতে পারেন।

আবুল কালাম অপহরণের পর থেকে কোটচাঁদপুর পুলিশ তার আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিলো। পুলিশের বক্তব্য, তারা আবুল কালাম আজাদ নামে কোনো জামায়াত নেতাকে আটক করেননি। এদিকে গত ৯ এপ্রিল আটক ইউপি সদস্য আবুল কালামের ভাই কোটচাঁদপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াতের রাজনৈতিক সেক্রেটারি মোয়াবিয়া হোসেনকে পুলিশ আটক করে। জামায়াতে ইসলামী এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের কর্মী মো. আবুল কালামকেগত ১৮ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে তার নিজ বাড়ি বলাবাড়িয়া থেকে শাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ তাকে আটক করে। গতকাল সোমবার ভোরে পুলিশ তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মামুনশিয়া গ্রামের মাঠে ফেলে যায়। জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ এ হত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ২২ এপ্রিল সোমবার কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল আহ্বান করছিবলেও প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জামায়াতে ইসলামী এ কথা জানিয়েছে।

আবুল কালামের পারিবারিক সদস্যরা জানিয়েছেন, শাদা পোশাকের পুলিশরাই হাফেজ কালামকে তুলে নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলার গুড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রাখে। খবর পেয়ে স্থানীয় দুজন সাংবাদিক গুড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে কালামের ছবি তুলতে ও সংবাদ সংগ্রহে গেলে তাদেরকে মারধর করতে উদ্যত হয় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা। পরে সেখান থেকে ওই দুপুরেই ঢাকা মেট্রো-গ-১১-২২৩১ নাম্বারের একটি মাইক্রোবাসে তুলে কালামকে অজানার উদ্দেশে নিয়ে যায় পুলিশ।ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কোটচাঁদপুর সার্কেল) জাহিদুল ইসলাম জানান,এ ধরনের কারো ক্রস দেয়া হয়নি। গতকালই আইন প্রক্রিয়া শেষে নিহত আবুল আজাদকে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবর স্থানে দফন সম্পন্ন হয়েছে।

নিহতের পরিচয়: বলাবাড়িয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ৩ছেলে ১মেয়ে। বড় ছেলে খর্দ্দখালিশপুর দাখিল মাদরাসারসহসুপারপদে চাকরি করেন। মেজ মোয়াবিয়া কোটচাঁদপুর উপজেলার জামায়েত নেতা ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলার শিশুতলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক। মেয়ে হাওয়া খাতুন কোটচাঁদপুর পৌরসভার দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক।নিহত আবুল কালাম আজাদ ছোট কোরআনের হাফেজ এবং এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার।

নিহত আবুল কালাম আজাদের রয়েছে ১ছেলে ২মেয়ে। বড় ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেজ মেয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী।