৪৯ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে লিগ্যাল নোটিস

পদত্যাগী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক রোববার

 

স্টাফ রিপোর্টার: পদত্যাগ করার পরও দায়িত্ব পালন করায় ৪৯ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. তুহিন মালিক গতকাল বুধবার এ নোটিস পাঠান। নোটিসে বলা হয়েছে, নোটিস প্রাপ্তির পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলে জানান তার আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এদিকে এক সপ্তার মধ্যে পদত্যাগী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নিয়ে মন্ত্রিসভার আরেকটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামী রোববার পদত্যাগী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসেইন ভুঁইয়া জানিয়েছেন, রোববারই মন্ত্রিসভার আরেকটি বৈঠক হবে এবং সেখানে সকল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর পদ শূন্য ঘোষণার কোনো গেজেট বা পদত্যাগপত্র তার কাছে আসেনি।

ড. তুহিন মালিকের পাঠানো উকিল নোটিসে বলা হয়েছে, গত ১১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রীরা একযোগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। সংবিধানের ৫৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মন্ত্রীরা যেদিন পদত্যাগপত্র পেশ করবেন সেদিন থেকে তারা আর মন্ত্রী নন। কারণ সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো মন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি (ক) তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন…। কিন্তু তার পরেও মহাজোট সরকারের মন্ত্রীরা দাপ্তরিক কাজ করে যাচ্ছেন এবং সরকারি প্রটোকল ব্যবহার করছেন। সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ না মেনে মন্ত্রীদের এ দায়িত্ব পালন অসাংবিধানিক, বেআইনি, অনৈতিক ও আইনের শাসনের পরিপন্থি।

নোটিসে বলা হয়, ১১ নভেম্বরের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসেইন ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন। এ পদত্যাগের পরেও মন্ত্রীদের নাম ও পোর্টফোলিও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েব সাইটে ঝুলছে। নোটিস প্রাপ্তির পর অবিলম্বে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের নাম ওয়েব সাইট থেকে মুছে ফেলার জন্য বলা হচ্ছে। পদত্যাগের পর মন্ত্রীদের অফিস করার বৈধতা জানতে চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেও উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন ড. তুহিন মালিক। এ নোটিসের জবাব দেয়ার প্রশ্নে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

পদত্যাগের পর অফিস করায় আইনি বাধা নেই!
রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগের পর অফিস করা বা সিদ্ধান্ত দেয়ার বিষয়ে আইনগত বাধা নেই বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যতোক্ষণ পদ শূন্য ঘোষণা সম্পর্কিত গেজেট প্রকাশ না হচ্ছে ততোক্ষণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োজনীয় নথি উপস্থাপন বাধ্যতামূলক। সচিবরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত আছেন।  মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগ এবং তাদের অফিস করা বা নথিতে সিদ্ধান্ত প্রদান নিয়ে চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে গতকাল যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসব কথা জানানো হয়েছে। তবে নৈতিকভাবে এটি সমর্থনযোগ্য কি না-এমন প্রশ্ন অবান্তর হবে না বলে মনে করেন কোনো কোনো কর্মকর্তা।

সংবিধানের ৫৮(১) ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে যদি তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেন। এখানে গ্রহণ করা না করার কোনো বিষয় নেই। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র জমা দেন। আইন মন্ত্রী অবশ্য গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে পরিষ্কার করে বলেছেন যে, পদত্যাগপত্রগুলো সাংবিধানিকভাবে দেয়া হয়নি। সুতরাং এগুলো গ্রহণ করা বা না করার প্রশ্ন নেই। পরে আবার ঠিক করে দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভুঁইয়া বলছেন, পদত্যাগ বা পদের অবসানজনিত কারণে কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর পদ শূন্য ঘোষণা না করা হলে তারা স্বপদে বহাল আছে বলে ধরে নিতে হবে। এবং তারা যদি পদ শূন্য ঘোষণা সম্পর্কিত গেজেট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত অফিস চালিয়ে যেতে চান তাতে আইনগত বাধা নেই। এমনকি পদ শূন্য হওয়ার আগ পর্যন্ত যেভাবে তিনি মন্ত্রণালয় চালাতেন সেভাবে চালাতে পারেন। সচিবসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীও মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রধান হওয়ার তার আদেশ-নির্দেশ মানতে বাধ্য।