৪৮ প্রার্থীর গড় আয় ও সম্পদ বেড়েছে ৫৮২ ও ৩৬৩ ভাগ

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮ প্রার্থীর আয় গড়ে ৫৮২ ভাগ এবং সম্পদ ৩৬৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ২৪৩ ভাগ, প্রতিমন্ত্রীদের ৪৬৪ ভাগ ও জাতীয় সংসদের উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপদের বেড়েছে ৩০৭১ ভাগ। প্রধানমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকারের গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩৬ ও ৪৪৩৫ ভাগ। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবিধানে সরকারের মন্ত্রীসহ বিশেষ আটটি পদে আসীন ব্যক্তিগণের ক্ষেত্রে বেতন ছাড়া অন্যান্য আয় অর্জন নিষেধ করা হয়েছে। অথচ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট প্রার্থীগণ ব্যবসাসহ অন্যান্য উদ্যোগের সাথে জড়িত থেকে তাদের সম্পদ অনেক গুন বাড়িয়েছেন, যা সংবিধানসম্মত নয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুজন কেন্দীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ। প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, সর্বমোট ৪৮ জন প্রার্থীর সম্পদ গড়ে ৩৬৩ ভাগ বেড়ছে। এর মধ্যে মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ২৪৭ ভাগ, প্রতিমন্ত্রীদের ৪৫৯ ভাগ, জাতীয় সংসদের উপনেতা, চিফ হুইপ, হুইপদের ক্ষেত্রে ১৬৮৯ ভাগ। প্রধানমন্ত্রীর সম্পদ ৪৬ ভাগ এবং ডেপুটি স্পিকারের সম্পদ ২৩৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবদুল মান্নান খানের সম্পদ ১০৯৯৭, নূর-ই-আলম চৌধুরীর ৬৪২৪, মোহাম্মদ হাছান মাহমুদের ৩৮৯২, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ১৯৬৯, মির্জা আজমের ১৪১৪, মাহবুবুর রহমানের ১২৬৩ ও ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ১১৩৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ছে। বিগত ৫ বছরে কোটি টাকার অধিক সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, রাজি উদ্দিন আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, শাজাহান খান, মো. মুজিবুল হক, মেহের আফরোজ, দীপংকর তালুকদার, মো. শামসুল হক টুকু, মো. কামরুল ইসলাম, অ্যাড. প্রমোদ মানকিন, শওকত আলী, আবদুস শহীদ এবং সেগুফতা ইয়াসমিনের। মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সম্পদের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮-এ হলফনামায় ঢাকার ৪টি ফ্ল্যাটের মূল্য উল্লেখ করলেও এবারে হলফনামায় করেননি। সুজন সম্পাদক বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন। গুটিকয়েক রাজনৈতিক দল ও স্বল্প সংখ্য প্রার্থী নিয়ে এ নির্বাচন। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যেও তেমন আগ্রহ নেই। তারপরেও আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী কিছু প্রার্থীর তথ্য গণমাধ্যমের সহায়তায় ভোটারদের মধ্যে প্রকাশ করছি। ড. শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধানের ১৪৭ (৪) ধারায় বর্ণিত সরকারের মন্ত্রীসহ ৮টি পদে আসীন ব্যক্তিরা বেতন ছাড়া অন্যান্য আয় অর্জন নিষেধ এবং কোনো লাভজনক পদে আসীন হতে পারবেন না। তাদের বেতন সংসদ কর্তৃক নির্ধারণ করা আছে। তারা এ দায়িত্বে আসীন হওয়ার আগে কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগে অংশীদার থাকলে পদে আসীন হওয়ার পর তার দায়িত্ব অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করবেন। অথচ দেখা যাচ্ছে গত ৫ বছরে অনেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য ব্যবসায়িক উদ্যোগের সাথে জড়িত থেকে তাদের সম্পদ অনেক গুণ বাড়িয়েছেন, যা সংবিধানসম্মত নয়। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রার্থীদের অনেকেই মৎস্য খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন, এর কারণ হলো এ খাতে করের পরিমাণ মাত্র তিন শতাংশ। তাই আসলেই তাদের মৎস্য খামার আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা দরকার। আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ৬০ বিঘার বেশি জমির মালিক হতে পারবেন না। অথচ প্রার্থীদের অনেকের হলফনামায় দেখা গেছে, তারা এর বেশি পরিমাণ সম্পদের মালিক। এক্ষেত্রে সরকার এখন কি পদক্ষেপ নেয়, তা হবে দেখার বিষয়। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামা জনসমক্ষে প্রকাশের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আপত্তি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনও এ আপত্তি আমলে নিয়েছে। এ সংবাদে আমরা ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার যাতে ক্ষুণ্ণ না হতে পারে সে জন্য নাগরিকদের সোচ্চার হতে হবে। গড় আয় বেড়েছে নূর-ই-আলম চৌধুরীর ৩২৯৮৫, আবদুল মান্নান খানের ৮৪২২, মাহবুবুর রহমানের ৮০০৭, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ৪৪৩৫, হাছান মাহমুদের ২০৩৬ ও মো. আফছারুল আমীনের আয় ২৪৮০ ভাগ। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিত, গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মজিবুর রহমান ফকির, ওমর ফারুক চৌধুরী ও আসম ফিরোজের আয় হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের ২০১৩ সালের কোনো আয় দেখানো হয়নি। বিষয়টি বোধগম্য নয়।