৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি : টর্চার করে মা-বাবাকে শোনানো হচ্ছে ছেলের কান্না

ফলোআপ: দামুড়হুদার কোষাঘাটা থেকে মুজিবনগর বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ৬ বছরের শিশুকে অপহরণ

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার কোষাঘাটা থেকে শিশু আব্দুল্লাহকে অপহরণ ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অপহরণকারী কথিত মকবুল মুক্তিপণের টাকা পেতে অপহৃত শিশুকে টর্চার করে মোবাইলফোনে মা-বাবাকে শোনাচ্ছে ছেলের কান্না। ছেলেকে জীবিত ফিরে পেতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণকারীর সাথে দেনদরবার অব্যাহত রাখা হয়েছে। থানা পুলিশ অপহৃত শিশুকে উদ্ধারের বিষয়ে জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও এখনও পর্যন্ত ছেলেকে ফিরে না পেয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে অপহৃত শিশুর পরিবার। শঙ্কিত হয়ে পড়েছে তার মা-বাবা। গ্রামবাসীরা জানান, প্রায় বছর দেড়েক আগে কোষাঘাটা গ্রামের আকুব্বার কুমড়ো বেঁচতে যান ফরিদপুরে। ওখানেই আকুব্বারের সাথে পরিচয় হয় ওই মকবুলের। মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখে মকবুল। পরিচয়ের ৪/৫ দিন পর ওই মকবুল হঠাত তার দু ছেলে জয় ( ১৫) ও জনিকে (১৩) সাথে নিয়ে চলে আসে কোষাঘাটা গ্রামে। কোষাঘাটায় বসবাসের কথা বললে প্রথমে রাজি না হলেও অনেক কাকুতি-মিনতির পর আকুব্বারের বাড়িতেই ঠাঁই মেলে তাদের। দু ছেলেকে নিয়ে শুরু করে বসবাস। দু বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদের পাশাপাশি আমবাগানে ওষুধ দেয়ারও কাজ করতো ওই মকবুল। তার দু ছেলে পড়ালেখা না করলেও জয় ও জনি ছিলো খুবই চালাক প্রকৃতির। মাঝে মধ্যে ইটভাটায় কাজও করতো বড় ছেলে জয়। বসবাসের মাস তিনেক পর চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ঝোড়াঘাটার সখের বানুর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে করেন মকবুল। স্ত্রীকে কথায় কথায় মারধর করার কারণে স্ত্রী সখের বানু মাস দেড়েকের মাথায় পাড়ি জমায় পিতার বাড়িতে। আর ফেরেনি। এ ঘটনার মাসখানেক পর পুনরায় তৃতীয় বিয়ে করে দামুড়হুদার মোক্তারপুরে। মাত্র ৮ দিন সংসার করার পর সেও পালিয়ে যায় পিতার বাড়িতে। বিয়েসাদির বিষয় নিয়ে মকবুলের সাথে আশ্রয়দাতা আকুব্বারের মনোমালিন্যের এক পর্যায়ে আকুব্বারের বাড়ি ছেড়ে চলে আসে আরেক প্রতিবেশী কোষাঘাটা গ্রামের লোকমানের ছেলে ঠাণ্ডুর বাড়িতে। কিছুদিন বসবাসের পর ওখান থেকে সর্বশেষ মাস সাতেক আগে ঠাঁই মেলে একই গ্রামের মসজিদপাড়ার মৃত লোকমান মণ্ডলের ছেলে খাইরুল ইসলামের বাড়িতে। ওখানেই একটি ছোট চাটাইয়ের ঘর তুলে শুরু করে বসবাস। দিন পনের আগে থেকে মকবুলের বড় ছেলে জয় ওই হ্যাবার বাড়িতে গরুর রাখাল হিসেবে কাজ করে আসছিলো।

গ্রামবাসীরা আরো বলেন, আমরা এতোটাই বোকা যে আমাদের গ্রামে একটি অপরিচিত লোক এক বছর ধরে বসবাস করছে অথচ তার বাড়ি কোথায় আমরা কেউ কোনো দিন জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করিনি। সে যে দু বিঘা জমি লিজ নিয়েছিলো তাও গোপনে অন্যজনের কাছে লিজ দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে। গ্রামের প্রতিটি দোকানে ৪/৫ হাজার টাকা করে সব মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক টাকা বাকি রয়েছে মকবুলের। তার দু ছেলেও ছিলো খুব চালাক প্রকৃতির। ঘটনার দিন মকবুলের দু ছেলে জয় ও জনি সিপ দিয়ে মাছ ধরার অজুহাতে শিশু আব্দুল্লাহকে ডেকে নিয়ে যায় গ্রামের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙ্গা নদীর ধারে। তাকে ফুঁসলিয়ে মুজিবনগরে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে নদীর ধার দিয়ে উজিরপুরে পৌঁছায়। ওখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলো অপহরক মকবুল। তাদের সাথে নিয়ে করিমনযোগে চুয়াডাঙ্গা পৌঁছায়। তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা কবরী রোড়ে কেউ কেউ দেখেছে বলেও জানায় গ্রামবাসী।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে কোষাঘাটা গ্রামের খালেক ওরফে হ্যাবার ছেলে কোষাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহকে মুজিবনগর বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে কৌশলে অপহরণ করে গ্রামেরই এক আশ্রিত কথিত মকবুল। হ্যাবা মাঠ থেকে বাড়ি ফিরে ছেলেকে না পেয়ে শুরু করে খোঁজাখুঁজি। এরই একপর্যায়ে হ্যাবার সন্দেহ হয় মকবুলের দু ছেলে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলেছিলো। হ্যাবা তখন ওই মকবুলের কাছে মোবাইল করে ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করলে মকবুল বলে তোমার ছেলে আমাদের সাথেই আছে। টেনশন করো না কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি চলে আসবো। হ্যাবা তখনও বুঝতে পারেনি তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও তারা ফিরে না আসায় হ্যাবা পুনরায় মোবাইল করে মকবুলের কাছে। তখন মকবুল বলে তোর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। আমি এখন ঢাকা বনানীতে অবস্থান করছি। ছেলেকে জীবিত ফিরে পেতে চাইলে থানা পুলিশ না করে ৫ লাখ টাকা বিকাশ করে দে অথবা ঢাকায় চলে আই।

এদিকে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ শিশু আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করতে না পারায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে অপহৃত শিশুর পরিবারের লোকজন। একমাত্র ছেলেকে ফিরে না পেয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মা শিল্পী খাতুন। ছেলেকে জীবিত ফিরে পেতে অব্যাহত রাখা হয়েছে দেনদরবার।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শিশুপুত্রকে জীবিত উদ্ধারসহ ওই অপহরকচক্রকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। অচিরেই ওই অপহরককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।