৩ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে তিন ঘাতকের নৃশংসতা : র‌্যাবের কাছে শিকার

আপহৃত কলেজছাত্রকে খুন করে ইট বেঁধে পদ্মায় নিক্ষেপ

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: শ্বাসরোধে যখন খুন করা সম্ভব হয়নি তখন পেটে চাকু মেরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। শুধু তাই নয় খুন করার পরেও তাকে ১০টি ইট বুকের সাথে পেচিয়ে দিয়ে পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে খুনি।

গতকাল রোববার সকালে কুষ্টিয়া র‌্যাব ক্যাম্পে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে খুনের বর্ণনা করেন র‌্যাব-১২ ক্যাপ্টেন আলী হায়দার চৌধুরী। তবে খুনিদের উদ্দেশ্য ছিলো ভিন্ন। বড়লোকের একমাত্র ছেলে তৌহিদুল ইসলাম লিপুর ব্যবহৃত দামি মোটরসাইকেল এবং তাকে অপহরণ করে তার পিতার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ায় ছিলো মূল কারণ। এজন্য কয়েক দফায় লিপুর পিতার নিকট মোবাইলফোনে ৩ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে অপহরণকারীরা। কিন্তু অপহরণকারীকে চিনতে পারায় সব ফাঁস হয়ে যেতে পারে বলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে অপহরণকারীরা। শুধু হত্যাই করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার লাশের চিহ্ন যেন না পাওয়া যায় সেজন্য তার লাশ পদ্মায় ভাসিয়ে দেয়। এজন্য গত ৬ মাস ধরে আসামিরা বিভিন্ন পরিকল্পনা করে। লিপুর খুনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়ার একটি দল ৩ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মূল হত্যাপরিকল্পনাকারী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উদিবাড়ী এলাকার জহুরুল হকের ছেলে রাকিবুল ইসলাম বাপ্পী (২২) ও তার সৎ মা আনোয়ারা ( ৩৮) এবং লিপুর দূর সম্পর্কের চাচা শুভ।

র‌্যাব সাংবাদিকদের জানায়, গত ৩১ আগস্ট বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর খোঁজ মেলেনি লিপুর। এরপর লিপুর পিতা অপহরণের অভিযোগে ৪ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এর ভিত্তিতে লিপুকে উদ্ধার এবং আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করি। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে রাকিবুল ইসলাম বাপ্পী ও তার সৎ মা আনোয়ারাকে আটক করে পরে বাপ্পীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক শুভকে গ্রেফতার করি। র‌্যাব-১২ শনিবার ভোরে বাপ্পীকে গাজীপুর থেকে আটক করে। পরে বাপ্পীর দেয়া তথ্যমতে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী শুভ (২২) ও হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতা বাপ্পীর সৎ মা আনোয়ারাকে (৩৮) কুষ্টিয়া উদিবাড়ি থেকে আটক করা হয়। র‌্যাব-১২’র ক্যাপ্টেন কমান্ডার আলী হায়দার বলেন, বাপ্পী এ হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত ১নং আসামি। শুরু থেকেই তাকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছিলাম। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বাপ্পীকে আটক করতে সক্ষম হই। এরপর তার দেয়া তথ্যেই অপর দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের পর এ হত্যার সাথে আরও যারা জড়িত সবাইকে আটক করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

প্রেস ব্রিফিঙে র‌্যাব আরও জানায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মাজদিয়া গ্রামে ১ সেপ্টেম্বর রাতে হত্যার পর লিপুর লাশ পদ্মা নদীতে ফেলে দিয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পী জানিয়েছে। তার এমন তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার দুপুরে বাপ্পীকে নিয়ে র‌্যাব-১২ ও র‌্যাব-১’র সদস্যরা মাজদিয়া এলাকায় অভিযান চালান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়েও লিপুর লাশ পায়নি। র‌্যাব জানায়, সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বাপ্পী। তার ভাষ্যমতে, গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় তারা ছয়জন মিলে লিপুকে মাদকসেবনের কথা কথা বলে পাবনার ঈশ্বরদীতে নিয়ে যান। সেখানে মাজদিয়া গ্রামের সুমন নামে এক যুবকের পরিকল্পনায় লিপুকে সেখানে নিয়ে মাদকসেবন করানো হয়। পরে রাত ১০টার দিকে তাকে সুমনের বাড়িতে রাখেন। ১ সেপ্টেম্বর সারা দিন সুমনের বাড়িতে রাখার পর সন্ধ্যার দিকে মাজদিয়া গ্রামের মাঠে আখক্ষেতে লিপুকে শ্বাসরোধে হত্যার পর বুকে ছুরি দিয়ে কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ১০টি ইট বেঁধে লাশ পদ্মায় ফেলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় কুষ্টিয়ায় লিপুর দূর সম্পর্কের এক চাচাসহ ছয়জন জড়িত।

উল্লেখ্য, তৌহিদুল ইসলাম লিপু অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া প্রধান কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ওয়াহিদুল ইসলামের ছেলে। লিপু ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের ছাত্র ছিলো।