২০ ধরনের জৈব বালাইনাশকও ফসলের ভিটামিন এবং জৈব সার আবিষ্কার

 

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মাটি, পানি, বাতাস বাঁচানোর যুদ্ধে নেমেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের এক দম্পতি। তৈরি করেছেন মাটি ও পরিবেশবান্ধব জৈব বালাইনাশক ও জৈবসার। প্রায় ২০ ধরনের জৈববালাইনাশক, ফসলের ভিটামিন ও জৈব সার আবিষ্কার করেছেন এই কৃষক দম্পতি। নিজেরা এগুলো ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তাদের গ্রামের কৃষকরাও এসব ব্যবহার করে বেশি ফসল ঘরে তুলেছেন।

এই দম্পতি প্রথমে নিজেদের তিন বিঘা জমিতে ধানের পাশাপাশি পটল, বেগুন, ঝিঙা, পেঁপেসহ অন্যান্য সবজি চাষ করেন। আশাদুল জানান, শুরুতে বাজারে চালু রাসায়নিক সার ও কীটনাশকই জমিতে ব্যবহার করতেন। কিন্তু একবার ভাইরাসের আক্রমণে সব ধান নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, এরপর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই ধানচাষ শুরু করি। পাশাপাশি আরো উন্নত জৈব সার ও বালাইনাশক তৈরির চেষ্টা করি। ইচ্ছা আছে সব ধরনের বালাইনাশকের পাশাপাশি ২২ রকম জৈব সার তৈরি করার।

সম্প্রতি আশাদুলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পেছনে মাটির নিচে বড় আকারের আটটি মাটির কোলা পোঁতা। ওই সব কোলা থেকে আশাদুল ও তার স্ত্রী তরল কী সব বের করছেন। অনেকেই বোতলে তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির অন্য পাশে একটি শেডের নিচে পোকারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাড়ির পূর্বপাশে কয়েকটি কবরের মতো কী যেন দেখা যায়। এগুলো জৈব সার তৈরির প্রাথমিক স্তর। এর নাম ‘কবর কম্পোস্ট’।

আশাদুলের আবিষ্কৃত আরেকটি উপাদান হচ্ছে জৈব ভিটামিন। এছাড়া তিনি জৈব কীটনাশক উদ্ভাবন করেছেন। তিনি জানান, ২০ কেজি পানি, ২০০ গ্রাম তামাকপাতা, গরুর মূত্র, ৫০০ গ্রাম কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে এ ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে।

আশাদুলের স্ত্রীও একটি জৈব বালাইনাশক আবিষ্কার করেছেন। যেটির নাম যুথী জৈব বালাইনাশক। যুথী জানান, ২০টি মেহেগনি ফল, এক কেজি নিমপাতা, এক কেজি নিম ছাল, এক কেজি ভাটির পাতা, ২০০ গ্রাম তামাক ও ২০ কেজি গরুর মূত্র দিয়ে এই বালাইনাশক তৈরি করা হয়েছে। মাজরা পোকা দমনে এটি খুবই কার্যকর। এছাড়া তিনি মাছের আঁইশ দিয়ে ফসল রক্ষার ওষুধ আবিষ্কার করেছেন। এটি ফসলে স্প্রে করলে গরু-ছাগলে ফসল খাবে না। ওই গ্রামের কৃষক রেজাউল, খাদেম, রজব আলী, মোশারেফসহ অনেকেই জানান, তারা আশাদুল-যুথীর বালাইনাশক ব্যবহার করে ভালো ফসল পেয়েছেন।