২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের প্রথম দিন পালিত

স্টাফ রিপোর্টার: ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের প্রথম দিন গতকাল রোববার পালিত হয়েছে। রাজপথ ছিলো পুলিশের দখলে। হরতালের পাশাপাশি অবরোধও পালিত হয়েছে। রোববার ছিলো অবরোধের ২০তম দিন। হরতাল-অবরোধে দোকানপাট ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান খোলা ছিলো। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা থাকায় বিভিন্ন স্থানে ছিলো উৎসবমুখর পরিবেশ। যানবাহনে পেট্রোলবোমা, অগ্নিসংযোগ, অতর্কিত হামলার আতঙ্ক ছিলো চালক ও যাত্রীদের মধ্যে। হরতালে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকলেও ট্রেন চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। রংপুর, বগুড়া, বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা হয়েছে। এতে ৬০ জনের বেশি আহত হন। যৌথবাহিনী চার শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। অর্ধশতাধিক বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। চট্টগ্রামে আগামীকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়েছে।

সারা দেশেব্যাপি ৩৬ ঘণ্টা ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে হরতাল আহ্বান করা হয়। হরতালে মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো ভারী যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। অভ্যন্তরীণ রুটেও কোনো লোকাল বাস চলাচল করেনি। শহরে দোকান-পাট আংশিক খোলা থাকলেও বেচা-কেনা ছিলো তুলনামূলক কম। অফিস-আদালত খোলা থাকলেও কার্যক্রমে ছিলো ধীরগতি। শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে রাজধানীতে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা ৩৬ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিন। গতকাল রোববার অবরোধ-হরতালে রাজধানীর চিত্র ছিলো মোটামুটি স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেই কাওরান বাজারে যাত্রীবাহী বাসে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থকরা। এতে কয়েকজন যাত্রী আহত হন। সকালে গণপরিবহনের চলাচল কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে তা বাড়তে থাকে। স্বল্প দূরত্বের জেলাগুলোতে বেশকিছু গাড়ি ছেড়ে গেছে। তবে দূরপাল্লার রুটে গাড়ি চলাচল কার্যত বন্ধ ছিলো। রেলে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত সিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। নৌপথে নির্ধারিত সব লঞ্চ ছেড়ে গেলেও যাত্রী সংখ্যা কম ছিলো। সদরঘাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। লঞ্চে ওঠা যাত্রীদের ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছে। বেশিরভাগ দোকানপাট ও মার্কেট এবং পেট্রোল পাম্পগুলো ছিলো খোলা। নাশকতা এড়াতে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। অন্যান্য দিনের মতো রোববার বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশের পাহারায় অবরুদ্ধ ছিল। সেখানে সাঁজোয়া যান, জলকামান ও প্রিজন ভ্যান রাখা হয়। ওই এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের তৎপরতা দেখা যায়নি।

গত ৬ জানুয়ারি থেকে চলা লাগাতার অবরোধের মধ্যেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, সরকারের নাশকতার ষড়যন্ত্র এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের দশ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশব্যাপী এ হরতালের ঘোষণা দেয় ২০ দলীয় জোট। সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ হরতাল চলবে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সকাল ১০টার দিকে কারওয়ান বাজারে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে ৩-৪টি ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। দুটি ককটেল বাসের জানালা ও বডিতে লেগে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হুড়াহুড়ি করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। আহতদের একজন মো. শওকত আলী। তিনি জানান, হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি ধীরে চলা ওই বাসের জানালা দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ে আহত হন। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে এখন কানে আর কিছু শুনতে পাচ্ছেন না। বাস থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে অন্য যাত্রী কবীর হোসেনের পা ভেঙে গেছে। ককটেল বিস্ফোরণে গাড়ির জানালার কাচে গুরুতর আহত হয়েছেন শফিকুর রহমান। আহত তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তেজগাঁও থানার এসআই মাহবুব জানান, ককটেল বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলের অদূরে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তবে পুলিশের গুলিতে কেউ আহত হননি।

এদিকে হরতাল সমর্থনে শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেট এলাকায় মিছিল বের করে ছাত্রদল।ও কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে এ মিছিলে আরও অংশ নেন সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমির আমজাদ মুন্না, স্কুলবিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লা খান প্রমুখ। বকশীবাজার মোড় থেকে পলাশী পর্যন্ত ছাত্রদলের সহসভাপতি আলমগীর হাসান সোহানের নেতৃত্বে ঝটিকা মিছিল করে ছাত্রদল। এতে সহসাংগঠনিক সম্পাদক উজ্জ্বল হোসেন, অর্থ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রজিবুল ইসলামসহ কয়েকজন নেতাকর্মী অংশ নেন। এ ছাড়া কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রিন্টুর নেতৃত্বে ধোলাই পাড়ে একটি মিছিল বের হয়।

সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের অফিস সম্পাদক ইমরান ইসলামের নেতৃত্বে একটি মিছিল ডেমরার তালতলা থেকে শুরু হয়। মিছিলটি বড়ভাঙ্গায় এসে সমাবেশ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ধাওয়া দিলে মিছিলকারীরা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে হরতালের সমর্থনে মালিবাগ এলাকায় মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী রমনা থানা শাখা। এর আগে সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় কেন্দ্রীয় প্ল্যানিং ও ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক শাহিন আহমেদ খানের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। প্রায় একই সময় ডেমরা এলাকায় শিবিরের একটি মিছিল থেকে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকালে উত্তর বাড্ডায় জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিল থেকেও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও মগবাজার, ওয়্যারলেস, নয়াটোলা, মধুবাগসহ রাজধানীর বেশ কয়েক স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে জামায়াত কর্মীরা।