১৮ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস

 

স্টাফ রিপোর্টার: চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৮ হাজার ৩৭০ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে। বাজেট বরাদ্দের চেয়ে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত খরচ করায় গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এই সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে। আগের অর্থবছরে (২০১৫-২০১৬) ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অতিরিক্ত খরচের জন্য ১৯ হাজার ৮০৩ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ-সম্পর্কিত নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০১৭ উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের মূল বাজেটে ৫৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিলো। পরে তিনটি নতুন বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। সংশোধিত বাজেটে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ ১৮ হাজার ৩৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা বাড়লেও ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ ৭৩ হাজার ৫২১ কোটি ৫১ লাখ টাকা কমেছে। সার্বিকভাবে ২৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা কমে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা।
সাংসদেরা মোট ১৪৯টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মঞ্জুরি দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। সম্পূরক বিলের ওপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সাংসদদের দেয়া ছাঁটাই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। চলতি অর্থবছরের কাজের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে সংযুক্ত তহবিল থেকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়ায় তা অনুমোদনের জন্য সম্পূরক বিলটি পাস করা হয়।
বিভিন্ন সাংসদের আলোচনার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রথমেই জানিয়ে দেন যে তিনি জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ছিলেন না। বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির সদস্যও ছিলাম না, মন্ত্রী তো দূরের কথা। এইচ এম এরশাদ ১৯৮২ সালে ঘোষণা করলেন যে তিনি অন্তর্বর্র্তীকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন করেছেন। এর দুই বছর পর তিনি পার্টি গঠন করেন। পার্টির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চাইলে আমি পদত্যাগের কথা জানিয়ে দিই এবং পরে পদত্যাগ করি। এটা সবার জানা উচিত। ইতিহাসে আমি বোধ হয় একমাত্র মন্ত্রী, যাকে অনুষ্ঠান করে বিদায় দেওয়া হয়। এ জন্য ধন্যবাদ এরশাদকে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা বারবার বলা হয়েছে, ব্যাংকের আমানতকারীদের ওপর আবগারি শুল্ক। এটা নতুন কিছু নয়। সবাই দিচ্ছেনও। এবার হারটা কেবল একটু বাড়িয়েছি। বহু বছর ধরে এই কর গ্রাহকেরা দিয়ে যাচ্ছেন।’
টাকা পাচার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা পাচার বেআইনি। এটা বন্ধ করা কঠিন। তবে পাচারের সুযোগটা কমাতে পারি। কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী মাসেই দেখতে পাবেন।’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি নিয়ে আলোচনার সময় স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ১১টি নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সেগুলো কী, জানানো হলে ভালো হতো। প্রতিরক্ষা বিভাগ আলাদা বা গোপন বিষয় নয়। এটাকে বারবার লুকিয়ে না রেখে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা উচিত।
এর জবাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রতিরক্ষা খাতে উন্নয়ন-অনুন্নয়ন সব খাতেই স্বচ্ছতা রক্ষা করা হচ্ছে। সংসদে প্রশ্নোত্তর ও পত্রিকার খবরের মাধ্যমে এসব আসছে। জেনেও না জানার ভান করলে সে দোষ মন্ত্রণালয়ের নয়।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দাবির ওপর পাঁচজন ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। তাদের প্রায় সবাই ঢাকায় প্লট দেয়ার দাবি জানান।
পরে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর পক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, পাঁচজন বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের মূল কথা হলো ঢাকায় প্লট। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সম্পূরক বাজেট পাসের আগে গত দুদিনে মোট ১৫ জন সাংসদ আলোচনায় অংশ নেন।
সম্পূরক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সব টাকা খরচ করার পর সংসদে বৈধতা চাওয়া অনৈতিক। তিনি প্রশ্ন রাখেন, মানুষ কেন ব্যাংকে টাকা রাখবে? এক লাখ টাকা তিন মাস রাখলে ফেরত পাওয়া যাবে ৯৯ হাজার ৯৬০ টাকা।
জাতীয় পার্টির হুইপ নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, ‘ব্যাংকে এক লাখ টাকা এক মাস রাখলে পুরো টাকা পাওয়া যাবে না, এটা যেভাবে প্রচার পেয়েছে, তাতে এই শুল্ক কমিয়ে দেয়া হলেও সরকারের যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে তা পূরণ হবে কিনা, প্রশ্ন আছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন এক লাখ টাকা যাদের আছে তারা ধনী। এই বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য? সরকারের জন্য কতটুকু লাভ বয়ে আনবে দেখা দরকার। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বের সব ব্যাংকে চুরি হয়। কিন্তু আমাদের মতো সাগর চুরি হয় কি?’
জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম বলেন, ‘মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইছে না। তাহলে কোথায় যাবে? মাটির নিচে? মাটির নিচেও প্রবলেম। মাটির নিচের সম্পদও সরকারের।’ তিনি আরও বলেন, ‘ নানা ভৌতিক প্রকল্পে মুড়ি-মুড়কির মতো টাকা বরাদ্দ হয়। প্রশ্ন করলে বলা হয়, ওরা উন্নয়ন চায় না। মেগা প্রকল্পগুলো মেগা জটে পড়েছে। আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও দায়িত্বে অবহেলার কারণে দুই বছরেও এসব প্রকল্প শেষ হবে বলে মনে হয় না। পদ্মা সেতু ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোও চ্যালেঞ্জের মুখে।’