১৮ দলীয় জোটের ৬০ ঘণ্টার হরতালের শেষ দিনেও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ সংঘর্ষ

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের অধিকাংশ স্থানেই পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল : সাতক্ষীরার আহত জামায়াতকর্মীর মৃত্যু

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: তিন দিনের হরতালের শেষ দিনে গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। বিস্ফোরিত হয়েছে ককটেল বোমা। তবে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ তুলনামূলকভাবে ছিলো শান্ত। হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে তিন দিনই মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে মিছিল পিকেটিং হয়েছে।

ঢাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদপুর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, বি-বাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ দু শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। পুলিশ নাশকতায় জড়িত সন্দেহে ১৮ দলীয় জোটের অর্ধশত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। রাজধানীতে বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এ হরতালে শহরের বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিল, পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো হরতালের কার্যক্রম। নগরীতে চলাচল করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন, বহু দোকানপাটও খোলা ছিলো। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দ্বিতীয়বারের মতো টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। টানা হরতাল শেষে নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি তারা। পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে দু-একদিনের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটি ও ১৮ দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে খালেদা জিয়া বৈঠক করবেন বলে দলীয়সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, আগামী সপ্তায় আবারও ৬০ ঘণ্টার হরতালের পক্ষেই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে আন্দোলনে গতি আনতে কর্মসূচি পরিবর্তনের পক্ষেও চিন্তা-ভাবনা চলছে। সেক্ষেত্রে আবার টানা হরতাল না দিয়ে অবরোধের বিষয়ে আলোচনা চলছে।

১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল শুরুর আগের দিন সাতক্ষীরায় হামলায় আহত এক জামায়াতকর্মী গতকাল ঢাকায় নেয়ার পথে মারা গেছেন। রংপুরে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গতকাল ককটেল নিক্ষেপ করে পিকেটাররা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুন দেয়া হয়। গাজীপুরে রেললাইনের স্লিপার তুলে ফেলায় ওই রুটে এক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। পিরোজপুরে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় হরতাল সমর্থকরা।

চুয়াডাঙ্গা বিএনপির দুটি পক্ষসহ মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সমর্থকেরা পৃথক পৃথকভাবে হরতালে পিকেটিং করে। হরতালের তৃতীয় দিন অর্থাৎ শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়ে ব্যানার নিয়ে মিছিল বের করে। মিছিলটি সকাল ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হয়ে শহীদ হাসান চত্বরসহ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে। জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলার নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেয়। জেলা বিএনপির অপরাংশ কেদারগঞ্জস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে সকার ৯টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন এ অংশের সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা সকাল ১১টার দিকে কোর্টমোড়ের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। মিছিলটির নেতৃত্বে ছিলেন খুলনা বিভাগীয় তৃণমূল দলের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক। হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়ে মিছিলটি রাস্তায় বের হলে কোর্টমোড়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে দলীয় কার্যালয়ে ফিরে যায়।

অপরদিকে হরতাল প্রত্যাখানের আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগ বেলা ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কলেজে ফেরে। মোটরসাইকেলযোগে মিছিলটির নেতৃত্বে ছিলেন কলেজ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।

বদরগঞ্জ ব্যুরো জানিয়েছে, হরতালের শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জ ও সরোজগঞ্জ এলাকায় ঢিলেঢালাভাবে শেষ হয়েছে। সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কে ভারী যানবাহনের পাশাপাশি অটোরিকশা, আলমসাধু, নসিমন যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেখা যায়। এছাড়া কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার সম্ভব্য থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা বানচাল হয়ে যায়।

দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদায় ১৮ দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে রাস্তায় কোনো ভারী যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মিছিল সমাবেশ হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল অতিবাহিত হওয়ায় দামুড়হুদা উপজেলা ১৮ দলের আহ্বায়ক লিয়াকত আলী শাহ সকল নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার সকাল ৭টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বামন্দী বাসস্ট্যান্ডে অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমর্থক হরতালের পক্ষে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি বামন্দী বাজার ও আশপাশের সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ শুরু হয়। সেখানে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে প্রধান সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাভেদ মাসুদ মিল্টন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। অবরোধকালে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মুরাদ আলী, বিএনপি নেতা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো, গাংনী উপজেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক বামন্দী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল, উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি গিযাস উদ্দীন, পৌর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহসান হাবীব বাবু, সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম, নারীনেত্রী নুরুন্নাহার, উপজেলা যুবদল নেতা আব্দুল ওহাব বুলবুল, জামাল উদ্দীন, সাইফুল ইসলাম সেলিম, জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলী, বামন্দী ইউপি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন-অর রশিদ বাচ্চু, উপজেলা তৃণমূল দলের সাধারণ সম্পাদক টুল্টু বিশ্বাস, ছাত্রদল নেতা চপল বিশ্বাস ও সাহিবুলসহ নেতৃবৃন্দ।

‌                গাংনী প্রতিনিধি আরও জানিয়েছেন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার পশ্চিম মালসাদহ সড়কে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন ৭ বিএনপি সমর্থক। আহত আড়পাড়া গ্রামের হাসান আলী (৪০), মন্টু মিয়া (৪২) ও আড়পাড়া গ্রামের জনিরুল ইসলামকে (৩০) একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টার দিকে বামন্দী বাজারে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, হরতাল সফল করতে বামন্দী বাজার এলাকায় জাভেদ মাসুদ মিল্টনের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে সমর্থকরা আলগামনযোগে বামন্দীর দিকে যাচ্ছিলেন। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের পশ্চিম মাসলাদহ নামক স্থানে পৌঁছুলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালালে কয়েকজন আহত হয়। গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলম জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ মামলা কিংবা অভিযোগ করেনি।

অপরদিকে মেহেরপুর গাংনীতে তৃতীয় দিনের মতো হরতাল বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বুধবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে সাবেক এমপি মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মিছিলটি শুরু হয়। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। নেতাকর্মী সমর্থকরা লাঠি মিছিল করে হরতাল বর্জনের আহ্বান জানান। একই সাথে দোকানপাট খোলা রাখা ও যানবাহন চালানের আহ্বান জানান তারা। বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিএনপি-জামায়াত বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল, আওয়ামী লীগ নেতা গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী, হাজি মহাম্মদ মহসীন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক মজিরুল ইসলাম ও আনোয়ার পাশা, ধানখোলা ইউপি আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবু, যুবলীগ নেতা হবিবুর রহমান হবি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল আলিম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ক্লাবের সভাপতি আশিকুর রহমান আকাশ, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, উপজেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন লীগের সহসভাপতি জিনারুল ইসলাম দিপু, আব্দুল জব্বার, শামীম আহম্মেদ প্রমুখ।

এদিকে গতকাল দুপুর ১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকনের নেতৃত্বে হরতালবিরোধী একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, উপজেলা কৃষলীগের সভাপতি ফজলুল হক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক আবুল বাশার, যুবলীগ নেতা পৌর ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নবির উদ্দীন, কাথুলী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, আ.লীগ নেতা ইউপি সদস্য ওসমান, মুক্তারুল, ছাত্রলীগ নেতা রতন, সুমন প্রমুখ।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে আলমডাঙ্গা শহরে পিকেটিং ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আলমডাঙ্গার প্রধান প্রধান সড়কে পিকেটিং করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল হক। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর জব্বার, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এমদাদুল হক ডাবু, উপজেলা বিএনপি সহসভাপতি আজিবার রহমান ও উপজেলা কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন। উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম, ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম, হাফিজুর রহমান চমক, উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মিল্টন মল্লিক, মাগরিবুর রহমান, ওহিদুল ইসলাম বাবু, গোলাম হোসেন, শওকত খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের বাকী বিল্লহ, ইউনুস, পৌর যুবদল নেতা মুকুল, মামুন, গোলাম, লাল্টু, বোরহান, আলাল, কাদের, ছাত্রদল নেতা, তৌফিক খান, শওকত, লিমন, রহিদ, বাপ্পি, রাশেদ, তনু, শান্ত, ডালিম, সনি, রুবেল, সাগর, মানিক, তন্ময় আকরাম প্রমুখ।

ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধাক্কা-ধাক্কি ও ঠেলাঠেলির মধ্যদিয়ে শেষ হলো নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শঙ্করচন্দ্র ও পদ্মবিলা ইউনিয়ন ১৮ দল ও শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় ডিঙ্গেদহ বাজারে ১৮ দলের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ডিঙ্গেদহ বাজারে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টায় বিএনপি অহিদুল গ্রুপের উপজেলা সভাপতি অ্যাড. শাহজাহান মুকুল, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি আব্দুল খালেক, পদ্মবিলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু তাহের মণ্ডল, বিএনপি সেক্রেটারি কাজল, শঙ্করচন্দ্র বিএনপির সভাপতি নুরনবী ছামদানী, সেক্রেটারি রমজান আলী, দুদু গ্রুপের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন সেক্রেটারি আতিয়ার রহমান লিটন, পদ্মবিলা সভাপতি প্রফেসার আতিয়ার রহমান, সেক্রেটারি বাবুল হোসেন, উপজেলা জামায়াতে ইসলামের আমির আব্দুর রউফ, শঙ্করচন্দ্র আমির ওসমান গনির নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও পাশাপাশি শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল শেষে ডিঙ্গেদহ সোনালী ব্যাংকের সামনে পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের মণ্ডলের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুদু গ্রুপের ইউনিয়ন সেক্রেটারি আতিয়ার রহমান লিটন জামায়াতের উপজেলা আমির আব্দুর রউফকে ১৮ দলীয় জোটের সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নাম ঘোষণা করলে অহিদুল গ্রুপের সেক্রেটারি রমজান আলী প্রতিবাদ করেন। এ সময় রমজান আলী বলেন, বিএনপির উপজেলা সভাপতি অ্যাড. শাহজাহান মুকুল উপজেলা ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হলে অ্যাড.শাহজাহান মুকুলের হস্তক্ষেপে পরিবেশ শান্ত হয়। পরে আবার ও দুদু গ্রুপের লিটন ও অহিদুল গ্রুপের রমজান আলী সাথে ধাক্কা ধাক্কি শুরু হলে অবস্থা বেগতিক দেখে সমাবেশ শেষ করেন। এ সময় ডিঙ্গেদহ বাজারে উত্তপ্ত ছড়াতে থাকলে সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ গাজি মো. ইব্রাহিমসহ সঙ্গীয় ফোর্স সেখানে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে বুধবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বুধবার দুপরে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে মিছিলটি বের করে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। মিছিলকারীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে গিয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আক্কাচ আলী, মানিক বিশ্বাস মধু, খাইরুল ইসলাম, বিশ্বজিত সাহা মিথুন প্রমুখ।

বক্তরা বলেন, জামায়াত-শিবিরকে রক্ষা করতেই বিএনপি একের পর এক হরতাল দিয়ে দেশবাসীকে দুর্ভোগে ফেলছে। হরতালের নামে তারা নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। বক্তারা এসব দেশবিরোধী হরতালের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার দুপুরে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা শহরের এইচএসএস সড়ক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পোস্ট অফিস মোড়ে ফিরে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে শ্রমিকলীগ নেতা কাজী আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আক্কাচ আলী, জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক লিকু, শ্রমিক লীগ নেতা রোকন উদ্দীন প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বোমা হামলাকারীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি দাবি জানান।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, টানা তিনদিনের হরতালের শেষ দিন গতকাল বুধবার মেহেরপুরে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। মেহেরপুর থেকে দুরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। আন্তঃজেলাতেও বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে রিকসা-ভ্যানসহ ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করেছে স্বাভাবিকভাবে। জেলা শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিলো। তবে বিকেল হওয়ার পরপরই দোকানপাট খুলতে শুরু করে। অফিস-আদালত খোলা ছিলো। তবে লোকজনের উপস্থিতি কম ছিলো। ব্যাংক ও বীমার অফিস খোলা ছিলো। লেন-দেন হয়েছে সন্তর্পণে। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম ছিলো। শহরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এরপরও যেকোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাতে জেলা শহরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিলো। মাঝে মাঝে র‌্যাবের টহল লক্ষ্য করা গেছে।