১৩ দিনে ১১ গুন বৃদ্ধির টোপ : ১০ ভরি সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দুই প্রতারক

বাবা লোকনাথ ঠাকুরের প্রতিনিধি পরিচয়ে চুয়াডাঙ্গার মালোপাড়ার পূর্ব থেকে নির্ধারণ করা বাড়িতে প্রবেশ

স্টাফ রিপোর্টার: ১৩ দিনে ১১ গুন বেড়ে যাবে সোনার গয়না। প্রতারকের এমন প্রলোভনে পড়ে চুয়াডাঙ্গা মালোপাড়ার এক নারী ১০ ভরি ওজনের সোনার গয়না হারিয়েছেন। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দু প্রতারক নিজেদের বাবা লোকনাথ ঠাকুরের প্রতিনিধি বলে পরিচয় দিয়ে বাড়ি প্রবেশ করে। এরপর আসনগেড়ে বসে পূর্বে সংগৃহিত তথ্যের ভিত্তিতে গৃহিণীকে ভুলিয়েভালিয়ে ১০ ভরি সোনার গয়না ১৩ দিনে ১১ গুন বৃদ্ধির টোপে ফেলেন। গয়নাগুলো রুমালে বেঁধে মন্ত্রজপের সময় গৃহিণী ওই প্রতারকের একটি ছবিও তোলেন। রুমাল হাতে গছিয়ে দিয়ে সটকানোর ধরন দেখে গৃহিণীর সন্দেহ হয় ঠিকই। কিন্তু তখন দু প্রতারক নাগালের বাইরে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের রজব আলী মার্কেটে নীলা জুয়েলার্সের স্বত্ব¡াধিকারী জুড়ান কর্মকার মালোপাড়ার বাসিন্দা। তিনি গতকাল দোকানে ছিলেন। বাড়িতে ছিলেন তার স্ত্রী নীলা রাণী কর্মকার। বেলা সোয়া ১১টার দিকে দুজন ব্যক্তি হিন্দুবেশে বাড়ি প্রবেশ করে। নমস্কার দিয়ে গৃহিণী নীলা রাণী কর্মকারকে বলেন, মা আমরা কুষ্টিার লোকনাথ ঠাকুরের আশ্রম থেকে মুষ্টির ভিক্ষা নিতে এসেছি। দু প্রতারকের বিনয়ী আচরণ দেখে নীলা রাণী বসতে দেন। সুযোগ পেয়ে দু প্রতারকের একজন বলেন, ‘তোমাদের বাড়িতে তো বসলাম, কিন্তু এখানে তো অনেক সমস্যা। বাবা লোকনাথ ঠাকুরের আদিষ্ট হয়েই আমরা এসেছি, তোমার নাতি শিশু অরিনকে সুস্থ করে দিতে। ওকে তো তোমরা বহু জায়গায় নিয়ছো, বহু চিকিৎসা করিয়েছো। কোনো কাজ হয়নি বলেই বাবা লোকনাথ আমাদের ওর চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার জন্য পাঠিয়েছেন।’ এসব কথায় মন গলে যায় নীলা রাণীর। তিনি ঘরের বাইরে থেকে তুলে নিয়ে ঘরের ভেতর সোফায় বসান। সেখানে আসনগেড়ে বসেন প্রতারকদ্বয়। এরপর এক গেলাস জল দিতে বলে। জলে ফুঁ দিয়ে বলেন এবার খেয়ে নাও। জল মুখে দিতেই নীলা রাণী দেখেন জলের স্বাদ বদলে গেছে। একটু মিঠা মিঠা। অন্যরকম। এরপর আবারও এক গেলাস জল আনতে বলা হয়। সেই গেলাসের জল পান করতে বলে। এ গেলাসের জল স্বাভাবিক লাগছে বলতেই প্রতারক বলে, বাবা লোকনাথ ঠাকুর সবই পারেন। মন্ত্রজপে জল দিলাম। ওতেই তোমার নাতি অরিন কর্মকার ভালো হয়ে যাবে। এরপর নীলা রাণী খুশি হয়ে ৫শ’ টাকা দেন প্রতারকদের হাতে। প্রতারক দুজনই অভিন্ন ভাষায় বলে, বাবা লোকনাথ ঠাকুর আমাদের অনেক দিয়েছেন। এ টাকা দিয়ে তো তুমি আমাদের ঋণী করে ফেললে। তোমার ঋণ আমাদের শোধ করা উচিত। বলো মা, তুমি কীভাবে সম্পদের মালিক হবে? তোমার ঘরে সোনা থাকলে বের করে আনো। চোখের পলকে দ্বিগুন করে দেবো। ১৩ দিন ঘরে রাখলে ১১ গুন বেড়ে যাবে। এ কথায় নীলা রাণী কর্মকার আর বসে থাকেননি। তিনি ঘরে থাকা সোনার গয়নাগুলো সব গুছিয়ে প্রতারকের হাতে থাকা রুমালের ওপর ঢেলে দেন। রুমাল মুড়িয়ে প্রতারক মন্ত্র জপতে থাকে। এরই মাঝে একজন বলে, জলপিপাসা পেয়েছে। এক গেলাস জল আনো তো মা। নীলা জল আনতে গেলে মুহূর্তের মধ্যেই সোনা মোড়ানো রুমালটি বদলে নিয়ে আলুমোড়ানো রুমালটি নীলা রাণীর হাতে তুলে দেন। নীলা রাণীকে বলেন, এই গয়নাগুলো তুমি ঘরে যতেœ রাখো। ১৩ দিনের মাধ্যে এগুলো ১১ গুন বেড়ে যাবে।

এরপর প্রতারক দুজন অন্য এক বাড়িতে যাওয়ার তাড়া আছে বলে দ্রুত উঠে পড়ে। তড়িঘড়ি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তার বাঁকে গিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলে নীলা রাণীর সন্দেহ ঘণিভূত হয়। তিনি ঘরে রাখা রুমাল খুলে দেখেন সোনার গয়না নেই, আছে একটি আলু কেটে চারভাগ করা। আর কিছু কাগজ। এরপরই নীলা রাণী কর্মকার কান্নাকাটি জুড়ে দেন। চিৎকার চেঁচামেচিতে পড়শীরা এগিয়ে আসেন। বাড়ির অদূরেই এসএম ইলেক্ট্রনিক্সের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা হতবাক হয়ে পড়েন। ওই সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, দু প্রতারক কাপড় উঁচু করে ধরে দৌঁড়াচ্ছে। তখন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির কারণে মূলত ওদের দৌড় দেখে কেউই সন্দেহ করেনি। বড় সড়কে যাওয়ার পর ওরা কোন দিকে পালিয়েছে তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। ঘটনার বর্ণনা চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশের তরফে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত: প্রায় একই কৌশলে কয়েক বছর আগে চুয়াডাঙ্গার ফার্মপাড়ার এক বাড়ি থেকে সোনার গয়না নিয়ে পালিয়েছিলো প্রতারক। সে দফায় মাটির হাঁড়িতে সোনার গয়না রেখে ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখতে বলেছিলো প্রতারক। ভালাইপুর মোড়েও অভিন্ন কৌশলে প্রতারণার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের প্রতারকরা লোভের টোপ সামনে মেলে ধরার আগে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য পূর্ব থেকেই কিছু তথ্য সংগ্রহ করে বাড়ির গৃহকর্তার বিষয়ে দুর্বল স্থানে আঘাত করে। বাড়ির সব খবর জেনে গেছে অলৌকিক গুণে ভেবেই বিশ্বাস স্থাপন করে বাড়ির লোকজন। আর এই সুযোগেই সামনে লোভের টোপ মেলে ধরে হাতিয়ে নেয় নগদ টাকা, মূল্যবান বস্তু। চুয়াডাঙ্গায় সর্বশেষ এ ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়ার তালিকাভুক্ত হলেন মালোপাড়ার শ্রী জুড়ান কর্মকারের স্ত্রী শ্রীমতি নীলা রাণী কর্মকার। এরপর প্রতারকের শিকার কে? নাকি লোভবর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতারককে পাকড়াও করে দেয়া হবে পুলিশে? দেখার প্রতীক্ষা।