১৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সর্বনিম্ন ব্যয় ৩১ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা

আগামী ২৯ মার্চ দামুড়হুদার নতিপোতা ও নাটুদহ ইউপির নির্বাচন

 

রফিকুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার উপজেলার নতিপোতা ও নাটুদাহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের বেধে দেয়া ব্যয়সীমা চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে পারবেন। অথচ দুটি ইউনিয়নের ১৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী তাদের জমা দেয়া হলফনামায় সর্বনিম্ন ৩১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ দু লাখ টাকা সম্ভাব্য খরচের হিসাব দাখিল করেছেন। এ ১৩ জন প্রার্থীর ১০ জনের আয়ের উৎস ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষিকাজ বলে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে দাখিলকৃত ব্যয়ের ২০ গুণ খরচ করে থাকেন প্রার্থীরা।

দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। ২০০৩ সালের ১৮ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন হোগলডাঙ্গার মনিরুজ্জামান মনির। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন সময় চেয়ারম্যান মনির এলাকায় না থাকায় ৪ নং ওয়ার্ডের তৎকালীন ইউপি সদস্য হোগলডাঙ্গার মিজানুর রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর রাতে নিজবাড়িতে মিজানুর রহমানকে কুপিয়ে খুন করে সন্ত্রাসীরা। এরপর ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ভগিরতপুরের আবু তালেব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২ মে চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির পুনরায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ডিবি পুলিশের হাতে আটক হন।

দীর্ঘ ১২ বছর পর নতিপোতা ইউপি বিভক্ত হয়ে দুটি ইউপি গঠন করে আগামী ২৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নতিপোতা (পুনর্গঠিত) ইউপির ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৩৩ জন ও নাটুদাহ (নবগঠিত) ইউপির ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ২৬৩ জন।

নতিপোতা ইউনয়িন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও নাটুদাহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে লড়ছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পোস্টার, নির্বাচনী ক্যাম্প, ঘরোয়া বৈঠক, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, স্টিকার, ডিজিটাল ব্যানার, পথসভা, মাইকিং ও দড়িসহ বিবিধ খরচের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

নতিপোতা ইউপির চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী আব্দুল আজিজ (দুটি পাতা) সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা, কামরুজ্জামান টুনু (তালগাছ) ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা, রবিউল হাসান (টেবিল ফ্যান) ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা ও মনিরুজ্জামান মনির ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা সম্ভাব্য খরচের হিসাব নির্বাচন অফিসে দাখিল করেছেন।

অপরদিকে নাটুদাহ ইউপির চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ইয়াছনবী (অটোরিকশা) ১ লাখ ৪ হাজার টাকা, শফিকুল ইসলাম (তালগাছ) ৯৩ হাজার টাকা, ফজলুল হক (টেবিল ফ্যান) ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, আব্দুল হালিম (ফ্রিজ) ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আব্দুল খালেক (রজনীগন্ধা) ৭৭ হাজার টাকা, আব্দুল মালেক (দুটি পাতা) ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, মাসুম আলী (সাহেবী টুপি) ৩১ হাজার টাকা, আমিনুল ইসলাম (পাগড়ি টুপি) ১ লাখ ৩ হাজার টাকা এবং আলিম উদ্দিন (ঢোল) ৫০ হাজার টাকা সম্ভাব্য খরচের হিসাব নির্বাচন অফিসে দাখিল করেছেন। তবে নাটুদাহ ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুম আলী ও নতিপোতা ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী রবিউল হাসান আয়ের উৎস সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করেননি। নাটুদাহের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল খালেকের আয়ের উৎস চাকরি ও কৃষিকাজ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্য ১০ জন প্রার্থী সকলেই আয়ের উৎস ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষিকাজ বলে উল্লেখ করেছেন।

এ ব্যাপারে নাটুদাহ ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুম আলী জানান, কোনো নির্বাচনী অফিস তার থাকবে না। পোস্টার ও লিফলেট শুভাকাঙ্ক্ষীরা সরবরাহ করবেন। এছাড়া জনগণকে ইউপির দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে নির্বাচনের মাধ্যমে জানাতে পারছি। তিনি তার নির্বাচনী ব্যয় ৩১ হাজার টাকার মধ্যে সারতে পারবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নতিপোতা ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আজিজ বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যয়ের হিসাব তার জানা আছে। তার নির্বাচনী ব্যয় ২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. এসএম সাঈদুজ্জামান গনি টোটন বলেন, নির্বাচনে একজন সদস্য প্রার্থী কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা ও চেয়ারম্যান প্রার্থী কমপক্ষে ২০-২৫ লাখ টাকা খরচ করে থাকেন। অথচ নির্বাচন অফিসে দাখিল করা সম্ভাব্য খরচ দেখিয়েছেন তা যথাযথ ও বাস্তবসম্মত নয়। প্রকৃতপক্ষে যে ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছেন তার ২০ গুণ খরচে করে থাকেন।

এ ব্যাপারে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু দাউদ বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বেধে দেয়া সীমা হচ্ছে চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত খরচ ৫০ হাজার টাকা করতে পারবেন। এছাড়া ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত ১০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন। তবে ব্যয়ের টাকা নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে।