১১ মেডিকেল কলেজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার মান বজায় রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, মেডিকেল কলেজ থেকে যেন রোগী মারা কোনো চিকিত্সক বের না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। একই সাথে অর্থ নয়, সেবার দিকে চিকিত্সকদের আরো বেশি মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল শনিবার সকালে গণভবনে ১১টি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, পর্যায়ক্রমে দেশের সবগুলো বিভাগে ১টি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হবে।

চিকিত্সকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত, আর এ কারণেই একজন ডাক্তারের ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ে। তাই দেশে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন অনেক বেশি মেডিকেল কলেজ। শিগগিরই আরো ৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ চালু হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি, এসব মেডিকেল কলেজ যেন মানসম্মত হয়। সেখান থেকে যেন রোগী মারা চিকিৎসক বের না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে, রোগে-শোকে কষ্ট না পায়, সে জন্য সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, চিকিত্সা সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। মানুষ চিকিত্সা সেবা না পেয়ে ওষুধের অভাবে কষ্ট পেয়ে মারা যাবে এটা স্বাধীন দেশে হতে পারে না। তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পূর্ববর্তী শাসনামলে এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা দেশে প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম, তারমধ্যে ওই সময়ে এ ধরনের ১১ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করাও হয়েছিল। কিন্তু দেশবাসীর জন্য দুর্ভাগ্য যে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সকল কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরে আমরা ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করে আবার সেগুলো চালু করেছি। এই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা দেশের স্বাস্থ্য সেবার দিকে লক্ষ্য রেখেই দেশে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। শিগগিরই চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরো দুইটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে।

ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নতুন মেডিকেল কলেজগুলো দক্ষ ডাক্তার তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে দেশে বিপুল সংখ্যক চিকিত্সক চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই কলেজগুলো থেকে সফলভাবে নতুন চিকিত্সক বেরিয়ে এসে ডাক্তারদের ওপর বাড়তি চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নবপ্রতিষ্ঠিত ৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক নবপ্রতিষ্ঠিত ৫টি আর্মি মেডিকেল কলেজ উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রেসসচিব একেএম শামীম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে আজ এক সাথে নতুন প্রতিষ্ঠিত ১১টি সরকারি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দিনে এসব মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধূর প্রতি সত্যিকার শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশে এখনো অনেক চিকিত্সক ও নার্স প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে অবকাঠামোগত সমস্যা থাকলেও যে সকল জেলায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে এবং উপযুক্ত স্থাপনা আছে সেসব জেলায় ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় উল্লিখিত ১১টি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য অসম্পূর্ণগুলো দ্রুতই সমাধান করে পূর্ণ শক্তিতে এ কলেজগুলো শুধু কার্যক্রমই চালিয়ে যাবে না, প্রখ্যাত মেডিকেল কলেজ হিসেবে এগুলো একদিন পরিচিতি লাভ করবে। তিনি বলেন, নতুন মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরুর মধ্যদিয়ে আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কয়েক হাজার নতুন তরুণ চিকিত্সক উপহার দিতে পারবো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শহর-গ্রাম-গঞ্জের সব এলাকায় দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। দেশে সুশিক্ষিত একটি দক্ষ চিকিত্সক শ্রেণি গড়ে তোলা হবে ইনশাল্লাহ।

প্রসঙ্গত, নতুন চালু হওয়া ৬টি মেডিকেল কলেজ হলো টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, পটুয়াখালী ও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ। আর পাঁচটি আর্মি মেডিকেল কলেজ চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর, বগুড়া ও কুমিল্লা সেনানিবাসে অবস্থিত। নতুন এ ১১টিসহ দেশে মোট সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা হলো ৩৮।