১০ বছর পর ঝিনাইদহ জেলা আলীগের সম্মেলন ২৫ মার্চ

সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত নেতকর্মীরা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: আগামী ২৫ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংগঠনের গঠনতন্ত্রে প্রতি তিন বছর পর পর জেলা সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ সম্মেলন।
জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী বুধবার সকাল ১০টার দিকে শহরের ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এ সম্মেলনকে ঘিরে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক রঙিন ব্যানার, তোরণ, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। পদপ্রত্যাশী নেতারা দলীয় সভানেত্রী কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে তৈরি করেছেন বিশাল বিশাল তোরণ। সেই সাথে ভবনজুড়ে বিশাল বিশাল আকৃতির ব্যানারে সম্মেলন সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিল-স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে রাজপথ। সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা প্রতিদিন শোডাউন করছেন, স্থাপন করেছেন ক্যাম্প অফিস। সেখানে ভিড় করছেন দলীয় কর্মী সর্মথকরা।
দলীয় সূত্র মতে, ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এতে সরাসরি ভোটে ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাই সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কাউন্সিলের ৬ বছর পর ২০১১ সালে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়। এদিকে গত ১৯ মার্চ শৈলকুপা উপজেলা কমিটির সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। অন্যদিকে কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার সম্মেলন কয়েক বছর আগে অনুষ্ঠিত হলেও জেলা কমিটির অনুমোদন লাভ করেনি। এছাড়া ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুণ্ডু এবং কালীগঞ্জ উপজেলায় যথাসময়ে সম্মেলন হয়নি। পৌরসভাগুলোর মধ্যে সদ্য কালীগঞ্জ পৌর কমিটির সম্মেলন হয়েছে। ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার সম্মেলন করার আগেই ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনে গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে। দলীয় কোন্দল থাকায় সবগুলো ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং উপজেলা কমিটির সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল একটি সূত্র। এ অবস্থায় আগামী বুধবার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী হচ্ছেন। এদের মধ্যে সভাপতি পদে ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য বর্তমান সভাপতি আবদুল হাই প্রার্থী হচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জেলা পরিষদ প্রশাসক আবদুল ওয়াহেদ জোয়ারদার এবং অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক আবেদ আলী তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, অ্যাডভোকেট আবদুর রশীদ এবং যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কাজী এনামুল হক মিলন। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদের যেকোনো একটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সফিকুল ইসলাম অপু।
দলীয় একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জেলা কমিটির সম্মেলন ঘিরে ঝিনাইদহ-২ আসনের বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি দূর থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটিগুলোর ওপর তার পিতা সাবেক সংসদ সদস্য শিল্পপতি নুরে আলম সিদ্দিকীর বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই জানান, সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। নেতাকর্মীদের সমাগম এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের বরণ করতে প্রস্তুত জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দু মেয়াদের মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচন এবং বিরোধী জোটের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলায় নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকায় যথাসময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তবে এতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের কোনো প্রভাব পড়েনি। এবারের সম্মেলনের মধ্যদিয়ে দল আরো সুসংগঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সিলেকশন নয়, ইলেকশনের মধ্যদিয়ে নেতা নির্বাচন করা গেলে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে। জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, যাদেরকে জেলা কমিটির নেতা নির্বাচন করলে দল সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে এবং সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, তাদেরকেই নেতা হিসেবে দেখতে চাই।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে। সম্মেলনের মধ্যদিয়ে যেমন কর্মী-সমর্থকরা চাঙ্গা হবেন, তেমনি নতুন নেতৃত্বের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে।
এদিকে তৃণমূলসহ উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, দল ক্ষমতায় থাকলে নেতাদের সাংগঠনিক দিকে তেমন খেয়াল থাকে না। বিরোধী দলে থাকলে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত থাকে। সম্মেলনও ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। তারপরও দীর্ঘদিন পর নেতাকর্মীদের প্রাণের দাবি পূরণ হতে যাওয়ায় খুশি তারা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ নবী নেওয়াজ বলেন, সম্মেলনের মধ্যদিয়ে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।