১০৪ দিনেও সচল হয়নি ইবি : হুমকির মুখে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন

ইবি প্রতিনিধি: গত ৯ মার্চ মঙ্গলবার কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বন্ধ অবস্থার শতদিন পূর্ণ হয়েছে। এরপর পেরিয়ে গেছে আরও দু দিন। অথচ দীর্ঘ ১০৪ দিনেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হয়নি। গত ৩০ নভেম্বর উদ্ভূত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ক্যাম্পাস সচল করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে নির্দেশনা থাকলেও তা আমলে নিচ্ছে না ইবি কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাস চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহতের জের ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। অনির্ধারিত ছুটি শেষে ৭ জানুয়ারি আবাসিক হল খুলে দেয়া হলেও ৯ জানুয়ারি শিবিরের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রয়েছে। তবে অফিস খোলা থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় তিন শতাধিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কবে নাগাদ ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হবে এটাও প্রায় অনিশ্চিত। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ মাসে ক্লাস হয়েছে মাত্র ৪০টি। এর আগে ২০১২ সালে প্রশাসন বিরোধী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৬ মাস বন্ধ ছিল।

জানা গেছে, গত ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সাথে বৈঠক করে। বৈঠকে যেকোনো মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস পরীক্ষা চালু করতে উপাচার্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়। ইউজিসির নির্দেশনার পর সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্যাম্পাস সচল করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে তারা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করেছে। অচিরেই ক্যাম্পাস খুলে না দিলে আমরণ অনশনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আশিক ক্ষোভ প্রকাশ করে, দেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৩টিতেই ক্লাস পরীক্ষা হচ্ছে। শুধুমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ই বন্ধ রয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা। কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা না থাকার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় মাসের পর মাস বন্ধ থাকছে। বাংলা বিভাগের ছাত্র সাজ্জাদ সাজু বলেন, ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারা আমাদের ভবিষ্যত নষ্ট করে দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সেশনজট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সমস্যা। গুটি কয়েক বিভাগ বাদে বেশির ভাগ বিভাগে দেড় থেকে আড়াই বছরের সেশনজট বিরাজ করছে। কোনো বিভাগে তিন থেকে চার বছরের সেশনজট রয়েছে। যেসব বিভাগে সেশনজট ছিলো না সেসব বিভাগেও এক থেকে দেড় বছরের সেশনজট দেখা দিয়েছে। গত বছরের ২৭ নভেম্বর ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলেও এখনও ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি।

এদিকে ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে অনেকটা নীরব রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার ও উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান। তারা ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা বলতে চাচ্ছেন না। কবে নাগাদ ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হবে তা জানতে চাইলে উভয়েরই বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষেয়ে যোগাযোগ করা হলে উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান বলেন, আমি মনে প্রাণে সবসময়ই চাই ক্যাম্পাস সচল থাকুক। ক্লাস পরীক্ষা হোক। তবে বর্তমানে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য উপাচার্যকে আগে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। তবে ক্যাম্পাস সচল করার ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে তার করণীয় কিছু নেই বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ক্যাম্পাস সচল করতে ইতোমধ্যে আমি শিক্ষক সংগঠনের নের্তৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। ছাত্র সংগঠনের নের্তৃবৃন্দের সাথে কথা বলার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি অচিরেই ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। তবে কবে নাগাদ ক্যাম্পাস সচল হবে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।