হোঁচট খাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে উপবৃত্তি প্রদান

রূপালী ব্যাংকের সাথে চুক্তি থেকে সরে আসছে বাংলালিংক

স্টাফ রিপোর্টার: প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দিতে রূপালী ব্যাংকের নেয়া কর্মসূচি থেকে সরে আসছে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক। চুক্তি অনুযায়ী নিয়মকানুন সঠিকভাবে না মেনে প্রতিষ্ঠানটির সেবা ব্যবহার করায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলালিংকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর চিঠি দিয়ে আগামী ৩ নভেম্বরের পর এ সেবা থেকে সরে আসার কথা জানানো হয়েছে। তবে এখনই চুক্তি শেষ হচ্ছে না বলে আশাবাদী রূপালী ব্যাংক।

বাংলালিংকের চিঠিতে বলা হয়, রূপালী ব্যাংকের সাথে ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তাদের একটি অংশগ্রহণ চুক্তি হয়। পরবর্তীতে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই রূপালী ব্যাংকের শিওরক্যাশ গত ১ মার্চ থেকে তাদের সেবা ব্যবহার করছে। যা তাদের সাথে করা চুক্তির সুস্পষ্ট লংঘন। চুক্তি থেকে সরে আসার বিষয়টি অবহিত করে এর আগে গত মে মাসে ৬ মাসের আগাম চিঠি দেয় বাংলালিংক। এখন সেই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে রূপালী ব্যাংককে আবার চিঠি দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান গতকাল বলেন, বাংলালিংকের চিঠি পেয়েছি। আগামী সোমবার তাদের সাথে আমরা বৈঠকে বসবো। এ বিষয়ে এর আগেও একাধিকবার মিটিং হয়েছে। তবে চুক্তি শেষ করার মতো কোনো পর্যায় আসেনি। আমার মনে হয় না সরকারের এতো বড় একটি উদ্যোগ থেকে তারা সরে যাবে। সোমবারের বৈঠকের পরে চুক্তি বহাল থাকবে বলে আশাবাদী তিনি।

রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সার্ভিস চার্জ থেকে যতো বেশি আয় করতে পারবে তাদের ততো লাভ। আমার মনে হয় সার্ভিস চার্জ ইস্যুতেই তারা কথা বলতে চায়। তবে তাদের সাথে রূপালী ব্যাংকের চুক্তি আছে। সেই চুক্তিতে কোনো সুবিধা পাওয়ার জন্য হয়তো তারা কিছু বলতে পারে।

জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। রূপালী ব্যাংকের এজেন্ট ও টেকনিক্যাল পার্টনার শিওরক্যাশের মাধ্যমে সারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ের এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।  শিক্ষার্থীর মায়েদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে এ টাকা দেয়া হয়। গত পহেলা মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। উপবৃত্তির টাকা বিতরণে ভোগান্তি ও অনিয়ম-দুর্নীতি দুর করতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা দেয়ার এ উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এ কার্যক্রমের মোবাইল অপারেটর পার্টনার বাংলালিংক যদি তাদের চুক্তি থেকে সরে আসে তাহলে কার্যত এ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে।

বাংলালিংকের কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার আংকিত সুরেকা লিখিত বক্তব্যে বলেন, কোনো ধরনের আইন বহির্ভূত কার্যক্রমকে বাংলালিংক সমর্থন করে না। বাংলালিংকের অনুমতি ও প্রযুক্তিগত ছাড়পত্র ছাড়া রূপালী ব্যাংক সরকারের একটি প্রকল্প চালু করেছে। এটি সুনির্দিষ্টভাবে দুই প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার চুক্তির লঙ্ঘন। রূপালী ব্যাংকের প্রতিনিধি শিওরক্যাশের মাধ্যমে চুক্তি লঙ্ঘন করায় বাংলালিংকের কাছে চুক্তিটি বাতিল করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। লক্ষণীয় বিষয় হলো, বাংলালিংক চুক্তিটি তত্ক্ষণাৎ বাতিল করতে পারতো। কিন্তু রূপালী ব্যাংকের সাথে আমাদের চুক্তি ও গ্রাহকদের সম্ভাব্য অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ৬ মাসের নোটিস জারি করে বাংলালিংক লিখিতভাবে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, উপবৃত্তির টাকা বিতরণে স্বচ্ছতার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে তার সঠিক চিত্রও পাওয়া যাবে এমন চিন্তা থেকেই এ প্রকল্প শুরু হয়। এর ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরির আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের। আর ডাটাবেজ তৈরি হলে  প্রতিবছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বই ছাপানোর জন্য অতিরিক্ত যে টাকা খরচ হচ্ছে তা কমে আসবে। এ অতিরিক্ত খরচ প্রায় ৫০ কোটি টাকা।