হিজবুত তাওহিদ ও গ্রামবাসী সংঘর্ষ : নিহত ৩ : নোয়াখালীতে পুলিশসহ আহত দুই শতাধিক

 

স্টাফ রিপোর্টার: নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষিরহাট ইউনিয়নের পোরকরা গ্রামে হিজবুত তাওহিদ (হুমায়ুন খান পন্নীর অনুসারী) ও গ্রামবাসীর মধ্যে গতকাল সোমবার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ কয়েক হাজার গ্রামবাসী হিজবুত তাওহিদের অনুসারীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সংঘর্ষ চলাকালে হিজবুত তাওহিদের ইব্রাহিম খান রুবেল (৩২) ও মো. সোলেমানকে (২৮) হাত-পায়ের রগ ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুল হক মজিব (৫০) নিহত হয়েছে বলে ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় চাষিরহাট বাজারের দোকান পাট, ব্যাংকে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে সংঘর্ষের সময়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পাঁচ শতাধিক রাবার বুলেট ও অসংখ্য টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রামবাসীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামানসহ ৫০ পুলিশ সদস্য আহত হন। সন্ধ্যার আগে গ্রামবাসী পুলিশের ওপর পুনরায় হামলা ও গুলি ছুঁড়লে পুলিশ সদস্য আবদুর রহিম গুলিবিদ্ধ হন। হিজবুত তাওহিদের অনুসারী এবং গ্রামবাসীসহ দেড়শতাধিক আহত হয়। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস। গতকাল রাত পৌনে ১০টায় এলাকাবাসী সোনাইমুড়ী থানার সামনের সড়কে সমবেত হলে পুলিশ গুলি করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান জানান, গুলিবিদ্ধ ও আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর থেকে পোরকরা গ্রামে হুমায়ুন খান পন্নীর অনুসারী হিজবুত তাওহিদের কর্মীদের সাথে স্থানীয় মুসল্লিদের নানা বিষয়ে বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় মুসল্লিদের অভিযোগ, হিজবুত তাওহিদের কর্মীরা এলাকায় ইসলাম বিরোধী নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। দু বছর আগে স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে তারা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। দু মাস পূর্বে তারা পুনরায় এ গ্রামে আসে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চাষিরহাটে তাদের এক সমাবেশে ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য দিলে মুসল্লি ও গ্রামবাসীরা বিক্ষুব্ধ হয়। এর প্রতিবাদে গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেয়। সেখান থেকে বের হয়ে পুনরায় বিক্ষোভ মিছিল করে যাবার পথে চাষিরহাট বাজারে বাধা পেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে হিজবুত তাওহিদের নেতা নুরুল হক মেম্বারের বাড়িসহ দুটি বাড়ির ১০-১২টি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে আবারো সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে হিজবুত তাওহিদের অনুসারী দুজনকে হত্যা করা হয়।

সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে জেলা সদর দপ্তরে খবর দিলে পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জাম দাঙ্গা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। শেষে কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, ৱ্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিকেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে গ্রামবাসীর হাতে আটক হিজবুত তাওহিদের ১১০ অনুসারী নারী-পুরুষকে উদ্ধার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় গ্রামবাসী ফের পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে।