হাসান আলীর ফাঁসির আদেশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে কিশোরগঞ্জের পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালের অপর দু সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। হাসান আলীর বিরুদ্ধে আনীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগের জন্য মৃত্যুদণ্ড ও ২, ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগের জন্য আমৃত্যু কারাদণ্য দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয়া হয়। গত ২০ এপ্রিল উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ রাখা হয়। গত বছর ছয় অভিযোগে হাসান আলীর বিচার শুরু হয়। ৮ ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ৩১ মার্চ পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৬ জন সাক্ষ্য দেন। এরপর দুপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী ও আবুল কালাম আজাদ। অপরদিকে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান যুক্তিতর্ক পেশ করেন।

গত বছরের ২৯ জুন হাসান আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসান আলীর বাবা সৈয়দ মোসলেম উদ্দিন একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কিশোরগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বাবার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হাসান আলী রাজাকার বাহিনীতে যোগদেন এবং কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান। গত বছরের ৩ এপ্রিল তাকে গ্রেফতারে ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করলেও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এরপর গত ২৪ আগস্ট হাসান আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে পলাতক হাসান আলীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। পরে তাকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়।

ছয় অভিযোগ: হাসান আলীর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ হলো, একাত্তরের ২৭ এপ্রিল তাড়াইল থানার সাচাইল পূর্বপাড়া গ্রামের হাসান আহমদ ওরফে হাচু ব্যাপারীর সাতটি ঘর লুট করে অগ্নিসংযোগ করে হাসান আলী, তার সহযোগী রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা। পরে হাচু ব্যাপারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগ হলো- একাত্তরের ২৩ আগস্ট হাসান আলী, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা কোনাভাওয়াল গ্রামের তফাজ্জল হোসেন ভুঁইয়াকে হত্যা করে দুটি ঘর লুট ও দুজনকে অপহরণ করেন।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে- ৯ সেপ্টেম্বর হাসান আলী, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা শিমুলহাটি গ্রামের পালপাড়ার অক্রুর পালসহ ১০ জনকে হত্যা করে ঘরবাড়িতে আগুন দেয়।

চতুর্থ অভিযোগ- ২৭ সেপ্টেম্বর বড়গাঁও গ্রামের মরকান বিলে বেলংকা রোডে সতীশ ঘোষসহ আটজনকে হত্যা করে হাসান আলী ও সহযোগী রাজাকাররা।

পঞ্চম অভিযোগ হলো- ৮ অক্টোবর হাসান আলী, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা আড়াইউড়া গ্রামের কামিনী কুমার ঘোষ ও জীবন ঠাকুরকে হত্যা করে ঘরবাড়ি লুট করেন।

ষষ্ঠ অভিযোগ- ১১ ডিসেম্বর হাসান আলী ৩০-৪০ জন রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের সাথে নিয়ে সাচাইল গ্রামের শতাধিক ঘরে আগুন দেয় এবং গ্রামের আবদুর রশিদকে হত্যা করে।