হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স চাপায় প্রাণ গেলো ৫ জনের

প্রাণ হারালেন মা-ছেলে ও পথচারী : গর্ভের সন্তানসহ মারা গেলেন আর এক নারী

স্টাফ রিপোর্টার: সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া বাস, ট্রাকের নিচে পড়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে বেপরোয়া অ্যামু্বলেন্সের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা একেবারেই বিরল। গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে খোদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। হাসপাতালের একজন ওয়ার্ড বয়ের মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্সের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান ৫ জন। তারা হচ্ছেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি থানার ছোট মাইজদিয়া গ্রামের গুলেনুর বেগম (৩০), তার ছেলে সাবিক (৭), ঝিনাইদহের মহেশপুরের আমেনা বেগম সূর্যি (৩৫) ও তার গর্ভের সন্তান এবং অজ্ঞাত এক পথচারী (৪৫)।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন গুলেনুরের স্বামী ফেরদৌস (৪০), তাদের সাত মাস বয়সী ছেলে আকাশ, রিকশাচালক মাহতাব (৫০), রজমান আলী (৩০), পথচারী বাচ্চু (৩৫), আমেনা বেগম সূর্যির ছেলে সজিব (৮)। এদের মধ্যে মাহতাব ও বাচ্চু মিয়া প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়েছেন। অন্যরা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় ‘মানব সেবা’ নামের ওই অ্যাম্বুলেন্সের চালকের আসনে ছিলো চালকের সহকারী সোহেল (২৪)। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে দ্রুতগতিতে অ্যাম্বুলেন্স (সিলেট মেট্রো হ-৭১-০০৬৪০) চালিয়ে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়েছিলো সে। পুলিশ সোহেলকে গ্রেফতার করেছে। অ্যাম্বুলেন্সটিও আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় দায়িত্বে থানা পুলিশের বিশেষ শাখার উপপরিদর্শক গোবিন্দ সরকার বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সটিতে কোনো রোগী ছিলো না। কোনো রকম হর্ন না বাজিয়ে সেটি দ্রুত হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়ে। অল্পের জন্য আমি প্রাণে রক্ষা পাই।’ অ্যাম্বুলেন্সের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশু সাবিক ও এক পথচারী ভিক্ষুক। চাকায় পিষ্ট হয়ে মারাত্মক আহত হন গুলেনুর বেগম, ছয় মাসের অন্ত:সত্ত্বা আমেনা বেগম সূর্যিসহ বেশ কয়েকজন। পরে উপস্থিত লোকজন দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে গুলেনুর ও আমেনার মৃত্যু হয়।

নিহত সাকিবের বাবা আহত ফেরদৌস বলেন, দুইদিন আগে সাবিক এলাকায় মোটর সাইকেলের ধাক্কায় আহত হয়। তার উন্নত চিকিত্সার জন্য গত শুক্রবার তারা পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় আসেন। ওঠেন সুত্রাপুরের রায়েবাগে এক আত্মীয়ের বাসায়। গতকাল সকালে রিকশায় স্ত্রী, দুই ছেলেসহ (সাবিক ও আকাশ) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন তিনি। রিকশা থেকে নেমে হাসপাতালে প্রবেশের সাথে সাথেই সেই অ্যাম্বুলেন্স পেছন থেকে তাদের চাপা দেয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আগে থেকে চিকিত্সাধীন আমেনা বেগম সূর্যির স্বামী ট্রাকচালক জাকির হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি গত মাসের ২২ তারিখ থেকে এই হাসাপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। তার সাথে ছিলেন আমেনা বেগম ও তাদের আট বছরের ছেলে সজিব। গতকাল সকালে নাস্তা কিনতে মা-ছেলে একসাথে হাসপাতালের বাইরের দোকানে গিয়েছিলো। ফেরার পথে তারা অ্যাম্বুলেন্সের নিচে চাপা পড়েন বলে তিনি শুনতে পেরেছেন। অন্তঃসত্ত্বা আমেনা অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। এ সময় চিকিসকরা তার পেট থেকে একটি মৃত সন্তান বের করেন। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টার আইসিইউতে চিকিত্সাধীন আমেনা বেগম মারা যান। চিকিত্সরা জানান, দুর্ঘটনার কারণেই তার গর্ভের সন্তান মারা যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোহাম্মদ বাচ্চু বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটির মালিক ঢাকা মেডিকেল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মাহফুজ ও নাসির মিস্ত্রী নামে অপর এক ব্যক্তি।