হাসপাতালে মাকে নিয়ে তিন ভাই-বোনের টানাটানি : নেপথ্যে তিন বিঘা জমি!

 

 

মায়ের যত্নে নেই : জমি নিতে মরিয়া দু ছেলে?

স্টাফ রিপোর্টার: সবই গেছে। আছে শুধু তিন বিঘা জমি। ওই জমির জন্যই বৃদ্ধা আমেনা খাতুনকে হাসপাতাল থেকে জোরাজরি করে বাড়ি বেগমপুর রাঙ্গিয়ারপোতায় নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন দু ছেলে। শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধা দু ছেলের বাড়ি তথা স্বামীর ভিটেয় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মেয়ে বাড়ি মুন্সিগঞ্জেই গেছেন।

মেয়ের বাড়ি যাওয়ার সময় বৃদ্ধা খানেকটা ক্ষোভ উগলে বলেন, যে ছেলের বাড়িতে কেউ খোঁজ রাখে না। অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলাম। দেখলো না। যেই মেয়ে এনে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করেছে অমনি খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে নিতে এসেছে। পক্ষান্তরে দু ছেলে ইউনুস আলী ও ফজলুর রহমান অভিন্ন ভাষায় বলেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে বোন ভুল বুঝিয়েছে। মায়ের জমি লিখে নেয়ার জন্যই বোন এ নাটক করছে। আমরা ভূমি অফিসে আগেভাগেই অভিযোগ করে রাখবো। দেখি বোন কীভাবে মায়ের জমি লিখিয়ে নেয়!

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বেগমপুর ইউনিয়নের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের আক্কাস আলী মারা গেছেন আনুমানিক ১০ বছর আগে। তিনি তার ৮৪ বিঘা জমির মধ্যে দু বিঘা করে ৪ মেয়ের নামে ও বাকি জমি দু ছেলের নামে লিখে দেন। আক্কাস আলীর স্ত্রী আমেনা বেগমের নামে ছিলো ১৪ বিঘা জমি। এর মধ্যে তিন বিঘা বাদে সবই দু ছেলেকে দিয়েছেন তিনি। ৬৫ বছরের বৃদ্ধা আমেনা খাতুন এ বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিন বিঘা জমি এখনও আমার নামে আছে। ছেলেদের সবই দিয়েছি। এরপরও বাড়ি পড়ে থাকলে কেউ খোঁজ রাখে না। দিন দশেক আগে মেয়ে আয়েশা বাড়িতে গিয়ে দেখে আমি জ্বরে কাতরাচ্ছি। দেখে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। এ দশদিনের একদিনও দু ছেলের এক ছেলেও দেখতে আসেনি। আজ (বুধবার) হাসপাতাল থেকে মেয়ের বাড়ি যাবো। এখন এসে ওরা দরদ দেখাচ্ছে। বাড়ি নিয়ে যাবে বলে টানাটানি করছে। আমি ওই ছেলেদের বাড়ি এখন যাবো না।

দু ছেলে ও মেয়ে আয়েশা তাদের মা আমেনা খাতুনকে নিয়ে গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে টানাটানি শুরু হয়। বাগবিতণ্ডায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদ রানা তাদেরকে শান্ত হওয়ার পুনঃপুন আহ্বান জানিয়েও থামাতে না পেরে বলেন, যা করবা হাসপাতালের বাইরে গিয়ে করো। আমাদের কাজে সমস্যা হচ্ছে। এ সময় উৎসুক জনতা বৃদ্ধার নিকট জানতে চান, আপনি কোথায় যাবেন? তিনি বলেন, যে মেয়ে সুস্থ করেছে তার বাড়িতেই যাবে। এ কথায় উপস্থিত জনতা দু ছেলেকে খানেকটা ধমকের সুরে শূন্যহাতে বাড়ি ফিরতে বলে। আয়েশা তার মাকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। আয়েশা মুন্সিগঞ্জের নাসির ডাক্তারের স্ত্রী।

আয়েশা যখন তার মাকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন, তখন তার দু ভাই তথা বৃদ্ধার দু ছেলে বলেন, মায়ের জমি তুমি লিখিয়ে নিবা? তা হবে না। আমরা আগেই ভূমি অফিসে নালিশ করে রাখবো। এ কথা শুনে উপস্থিত অনেকেই তাদেরকে কটাক্ষ করে বলেন, মাকে দেখার বেলায় নেই, মায়ের জমি হাতছাড়া হতে পারে ভেবে তো এখন তোমাদের তর সইছে না। হায়রে কলি কাল! মায়ের চেয়ে জমিই এখন বড়?