হামলা-পাল্টা হামলা : জখম মহাসিনের মৃত্যু অপরপক্ষের মন্টু মৃত্যুশয্যায়

দামুড়হুদার গোবিন্দহুদায় জমি নিয়ে মওলা বক্স ও নূরুল হকের দীর্ঘদিনের বিরোধ

মধ্যরাতে মুখোশধারীদের লুটপাটসহ বোমা হামলার অভিযোগ : পুলিশি টহল জোরদার

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদার গোবিন্দহুদা গ্রামে জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে মারামারিতে আহত একজন মারা গেছে। অপরপক্ষের একজন মৃত্যুর সাথে লড়ছে। মহাসিন আলী নামের একজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যায়। অপরপক্ষের মাসুম বিল্লাহ মন্টুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার পঙ্গুতে নিয়ে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।

গত বুধবার মাসুম বিল্লাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। পরদিন গতপরশু বৃহস্পতিবার কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় মহাসিনকে। গতরাতে তিনি মারা গেলে পুলিশে খবর দেয়া হয়। আজ শনিবার মহাসিনের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। পুলিশ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, গোবিন্দহুদা গ্রামে পেশকার নূরুল হক ও মওলা বক্সের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এরই জের ধরে হামলা পাল্টা হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় গ্রামে পুলিশি নজরদারিও বৃদ্ধির আগেই গতরাত পৌনে ১২টার দিকে নূরুল হকের ভাতিজা রবিউলের বাড়িতে ৬/৭ জনের একদল মুখোশধারী লুটপাট ও বোমা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গ্রামে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

‌চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা সদরের গোবিন্দহুদা গ্রামের নূরুল হক জজকোর্টের পেশকার। গোবিন্দহুদার মওলা বক্স স্ট্যাম্পভেন্ডার। দুজনের কেউ কম নয়। গ্রামের সাধারণ মানুষ এরকমই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছে, বিগত দিনে হামলা পাল্টা হামলায় নূরুল হক যেমন রক্তাক্ত জখম হয়েছে, তেমনই মওলা বক্সের ছেলে মাসুম বিল্লাহসহ কয়েকজন দণ্ডিতও হয়েছে। বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটেনি। পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা যেমন অনেক, তেমনই উভয়পক্ষের দায়ের করা মামলার সংখ্যাও কম নয়। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের তো অন্ত নেই। এরই এক পর্যায়ে গত বুধবার সকাল ৯টার দিকে হামলার শিকার হয় মওলা বক্সের ছেলে মাসুম বিল্লাহ মন্টু (৪৭)। তাকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে দামুড়হুদার উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স তথা চিৎলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় খুলনার আইড়শ বেড হাসপাতালে। পরে নেয়া হয়েছে ঢাকায়। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে নৃশংস হামলার শিকার হয় অপরপক্ষের দুখু মণ্ডলের ছেলে মহাসিন আলী (৪৫)। তার স্ত্রীও হামলার শিকার হন বলে জানিয়েছেন তার পক্ষের লোকজন।

মহাসিন আলীর মাথায়সহ শরীরে কোপ লাগে। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সিটি স্ক্যানের জন্য নেয়া হয় কুষ্টিয়ায়। সেখান থেকে সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ফিরিয়ে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহাসিন মারা যান। নিকটজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। লাশ রাখা হয় লাশ রাখা ঘরে। আজ ময়নাতদন্ত শেষে তার নিকটজনদের হাতে লাশ তুলে দেয়া হবে। নিজ গ্রামেই দাফন করা হতে পারে। এ সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলেও স্থানীয়দের কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। পুলিশ অবশ্য বলেছে, বাড়তি নজরদারি শুরু হয়েছে।

নিহত মহাসিনের রয়েছে এক ছেলে লিখন (২০) ও মেয়ে মুন্নি (১২)। দুখু মণ্ডলের ৫ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে মহাসিন ছিলো সকলের বড়। বিরোধে জড়িয়ে তিনি হারালেন প্রাণ। তার স্ত্রী বলেছেন, উনি কোনোপক্ষেই থাকতো না। ওরা চিৎলার যুবলীগের মহাসিনের নেতৃত্বে কুপিয়ে মেরেছে। ঠেকাতে গেলে আমাকেও মারধর করে।