হামলা আরও বিস্তৃত করেছে ইসরাইল:গাজায় ঘর-বাড়ি ছাড়ছেন হাজার হাজার বাসিন্দা

 

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বিশ্বব্যাপিতীব্র নিন্দা আর কূটনৈতিক তৎপরতার পরও গাজায় হামলা বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই, বরং হামলা আরও বিস্তৃত করেছে ইসরাইল। গতকাল রোববার গাজায় নতুন করে সেনা পাঠিয়েছেদেশটি। এদিন গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শহর শেজাইয়াতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেইসরাইলি সেনারা। এতে শিশুসহ ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিকলোক। এ নিয়ে গত ১৩ দিনে ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২৫ হাজার আহত হন। একের পর একগোলা ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শেজাইয়ার বহুতল ভবনগুলো মিশে যায় মাটিরসাথে। মনোরম শহর মুহূর্তেই পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। চারদিকে শুরু হয় আহাজারিআর আর্তনাদ। জীবন বাঁচাতে এলাকা ছাড়েন হাজার হাজার বাসিন্দা।

শনিবার গভীররাত থেকে গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শেজাইয়া শহরে কামান ও ট্যাঙ্কের গোলাবর্ষণ শুরুকরে ইসরাইলি সেনারা। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল হাইয়ার বাড়ি লক্ষ্য করেইসরাইলি বিমান হামলায় হাইয়ার ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও তাদের দু শিশুসন্তাননিহত হয়েছেন। এছাড়া একজন ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ও একজন স্বাস্থ্যকর্মীও ওইহামলায় নিহত হন। হামলা শুরুর সাথে সাথে স্থানীয় রেডিও স্টেশন থেকেলোকজনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করা হয়। স্থানীয় অধিবাসী আহমেদ রাবিয়াবলেন, শহরের কাছে ইসরাইলের ট্যাংক পৌঁছানোর পর মধ্যরাত থেকে প্রচণ্ডগোলাবর্ষণ শুরু হয়। ওই অঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্স এবং চিকিৎসক দলের যাতায়াতবিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। রাস্তায় অনেক হতাহত পড়ে আছেন কিন্তু তাদের সাহায্য করাবা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। শতাধিক আহত ফিলিস্তিনিকে গাজার কেন্দ্রীয়হাসপাতাল আশ-শেফায় ভর্তি করা হয়েছে বলে জানায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিভিন্নসংবাদ মাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, শেজাইয়া শহরের বড় বড় ভবনগুলো ভেঙেধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করছেন। কোথাও পড়ে আছেমৃতদেহ, কোথাও চলছে স্বজনদের আহাজারি। কোথাও দেখা গেছে উদ্ধারকর্মীদেরতৎপরতা। গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লড়াই শুরু হওয়ার পর এদিনই সবচেয়ে বেশিগোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ভোর রাতে ইসরাইলি নৌবাহিনীর জাহাজগুলো থেকেনিক্ষিপ্ত গোলার বিস্ফোরণে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি ক্ষণেক্ষণে কেঁপে ওঠে। শেজাইয়ার পার্শ্ববর্তী শহর রাফায়ও হামলা হয়েছে। এখানেগোলাবর্ষণে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা।

অসহায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়েরসন্ধানে ছুটেন। গাজার আল-জাজিরার প্রতিনিধি স্টেফনি ডেকার জানান, ‘আমরা যখনব্যুরোতে ফিরছিলাম তখন দেখেছি শত শত ফিলিস্তিনি তাদের সন্তানদের কোলে নিয়েহেঁটে এলাকা ছাড়ছেন।’ তাদের কেউ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।আবার কেউ কেউ জাতিসংঘের স্কুলগুলোতে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন। দু সপ্তাহ আগেইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই এসব স্কুলকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারহচ্ছে। তবে জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেনকর্মকর্তারা। জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলেওষুধ, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

সাময়িকঅস্ত্র বিরতি: রোববার দুপুরে রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির আহ্বানে গাজারশেজাইয়ায় দু ঘণ্টার জন্য অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। দেশটিরসেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, মানবিক সহায়তা কর্মকাণ্ড পরিচালনায়স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অস্ত্রবিরতি করা হয়েছে। এসময় ওই অঞ্চলে কোনো বিমান বা স্থল হামলা চালানো হবে না বলে জানায় তারা।হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারাও এই সাময়িক অস্ত্রবিরতি মেনে চলবে।

হামাসেরপ্রতিরোধ: হামাস বলেছে, গাজায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তারারকেটচালিত গ্রেনেড দিয়ে ইসরাইলের ছয়টি ট্যাঙ্কে হামলা চালিয়েছে। রোববার তারাএকটি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে। হামাসের সামরিক শাখা ইজাদ্দিন আল-কাসসাম বিগ্রেডবলেছে, তাদের যোদ্ধারা শেজাইয়া ও তার আশপাশের এলাকা থেকে ইসরাইলের সাথেগুলি বিনিময় চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসরাইল দাবি করেছে, চলমান যুদ্ধেইসরাইলের ৫সেনা ও ২ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামাস এ পর্যন্ত ইসরাইলেরঅভ্যন্তরে ১ হাজার ৭০০ রকেট ছুড়েছে। এসব রকেট তেল আবিব, হাইফা, আশকেলোন, এশকোল ও আশদোদসহ বিভিন্ন শহরে আঘাত হেনেছে এবং এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কূটনৈতিকপরতা: চলমান ইসরাইলি হামলা বন্ধের জন্য মিসর, কাতার, ফ্রান্স এবংজাতিসংঘ কূটনৈতিক তৎপরতা চালালেও তারা এতে সফল হয়নি। ইসরাইল হামলা বন্ধ তোদূরের কথা, বরং তা আরও জোরদার করেছে। কাতারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ওজাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের মধ্যে কাতারে একটি বৈঠক হয়েছে। এছাড়া আরবলীগের প্রধান ও কুয়েতের শাসক শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-সাবাহর সাথে বৈঠককরেছেন হামাসের প্রধান খালেদ মিশাল। কুয়েত সিটিতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে গাজায়অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টায় বান এখনমধ্যপ্রাচ্যে আছেন। এ লক্ষ্যে চলতি সপ্তাহে তিনি কুয়েত, মিসর, ইসরাইল, ফিলিস্তিন এবং জর্দান সফর করবেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে জাতিসংঘ।