হামলাকারীদের হাত পুড়িয়ে দিলে বুঝবে কী যন্ত্রণা : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপ্রিয় দেশ। এখানে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় একজন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের গর্ভেই তার সন্তান মারা যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে আবেগ-আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি জনগণের জন্য, জনগণকে পুড়িয়ে মারার জন্য নয়। অথচ বিএনপি জোটের সহিংস আন্দোলনের হাত থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কেউই এখন রেহাই পাচ্ছে না। যারা পেট্রোল বোমা ছুড়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে তাদের গ্রেফতার করে হাত পুড়িয়ে দিলে বুঝবে আগুনে পোড়ার কী যন্ত্রণা। যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সংসদ্যদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ জাতীয় গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (এনএসআই) বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলন করতে চাইলে মাঠে নেমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন করতে পারে। কিন্তু তারা কেন ধ্বংসাত্মক পন্থা অবলম্বন করছে? তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত কিভাবে ইসলামের সেবক তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। ২০১৩ সালে তারা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আগুন দিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে। এ বছর বিশ্ব ইজতেমা ও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী চলাকালে হরতাল-অবরোধ দিয়েছে। তিনি বলেন, কী কারণে, কোন ইস্যুতে আন্দোলন চলছে তা বুঝতে পারি না। উন্নয়নের পথে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে তখন বিএনপি-জামায়াত এই অপতত্পরতা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশের উন্নয়ন হয়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তারপরও কেন আন্দোলন তার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালেও যখন দায়িত্ব নেয় তখনও এমন অপতত্পরতা দেখেছি। আওয়ামী লীগের মতো এতো অল্প সময়ে এতো ভালো কাজ অতীতে আর কেউ করতে পারেনি। গত ৬ বছরে  দেশ যদি কোথাও একটু পিছিয়ে যেতো তাহলেও তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের সকল সূচকে এগিয়ে আছে। আর তা দেখেই মনে হয় বিএনপি নেত্রীর মাথা বিগড়ে গেছে। তিনি বলেন, যারা আমার বক্তব্যের সমালোচনা করেন, তাদের আহ্বান জানাবো বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখে আসুন, কীভাবে পোড়ানো মানুষগুলো যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের কষ্ট দেখে আমার কষ্ট হয়, আমি সারাক্ষণ তাদের খোঁজখবর রাখি। সুষ্ঠু ও উন্নত চিকিত্সা নিশ্চিত করার জন্য সবধরনের নির্দেশনা দিয়েছি।

অনুষ্ঠানে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)’র প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রয়োজনে এনএসআই সবচেয়ে বেশি ও বৃহত পরিসরে কর্মদক্ষতা দেখিয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। বিমানবন্দরে এখন যে সোনা ধরা পড়ছে তা এনএসআই সদস্যদের তত্পরতার ফলেই সম্ভব হচ্ছে। তাদের তত্পরতায় মাদকদ্রব্যও ধরা পড়ছে। তিনি বলেন, এনএসআইয়ের সামর্থ্য বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। সকল গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা বিভিন্ন সময়ে এ গোয়েন্দা সংস্থাটিকে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা স্থায়ী করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে এ সংস্থার সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। এনএসআই’র পেশাদারত্ব হুমকির মুখে পড়ে। সংস্থাটি জনগণের আস্থা হারায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছরের স্বৈরশাসন শেষে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমরা এনএসআইকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ফলে এনএসআই ফিরে পায় তার হারানো গৌরব ও জনগণের আস্থা। এনএসআইকে শক্তিশালী করতে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা এ সংস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে এবং এর গুণগত মান বাড়াতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করি। অবকাঠামো উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ক্রয়, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে আমাদের নেয়া কর্মসূচিগুলো বন্ধ করে দেয়।