হলি আর্টিজানে হামলাকারীরা কি নব্য জেএমবি না আইএস

স্টাফ রিপোর্টার: গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারীতে হামলা চালিয়েছিলো কারা? আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে আইএস। তাদের মাধ্যমেই প্রথমে ভার্চুয়াল জগতে ছবি ও খবর বের হয়। ফলে এরা আইএস। আর আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে এরা দেশীয় জঙ্গি। এরা জেএমবি থেকে বের হয়ে নতুন করে তৈরি করেছে নব্য জেএমবি। এদের সাথে আইএসের কোনো যোগাযোগ নেই। গত এক বছরেও নিশ্চিত করা যায়নি এরা আইএস না নব্য জেএমবি।

গুলশান হামলার পর থেকে দেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এতে ৬টি শিশুসহ ৭৩ জন নিহত হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অভিযানে নিহতদের অধিকাংশই নব্য জেএমবির সদস্য। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এদের নব্য জেএমবি বললেও গুলশানের ঘটনায় দায়ের করা মামলার জব্দ তালিকার এক নম্বরে একটি শাদা কাপড়ের রুমালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই রুমালে লেখা ছিলো ‘দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশ টিকে থাকবে’। এটা ভারতীয় নাগরিক তারিশি জৈন’র লাশের ওপর রাখা ছিলো। এই দাওলাতুল ইসলাম হলো আইএসের মূল সংগঠন। ফলে আইএস অস্বীকারের পথ খুব কম।

হলি আর্টিজানে হামলার পর ৫ জঙ্গি প্রকৌশলী হাসনাত করিমের মোবাইল থেকে ‘উইকার’ নামে একটি অ্যাপস ডাউন লোড করেছিলো। কিন্তু হাসনাত করিমের মোবাইলফোন থেকে আর কিছুই করেনি। জঙ্গিরা  সেখানে জিম্মি ইতালিয়ান নাগরিক ক্লদিয়া ও শ্রীলঙ্কান নাগরিক ফেফতা সায়মার মোবাইলফোন ব্যবহার করে। তারা ছবি পাঠাতে প্রটেক্টেডটেক্সট ডট কম নামে একটি যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। হলি আর্টিজান বেকারি থেকে ত্রিশটি মোবাইলফোন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এফবিআইয়ের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। এফবিআই ক্লদিয়া ও সায়মার মোবাইল থেকে ১৪টি ছবি উদ্ধার করে, যেগুলো জঙ্গিরা  হলি আর্টিজানের ভিতর থেকে তুলেছিলো। ওই ছবিগুলোই জঙ্গিরা প্রটেক্টেডটেক্সট ডট কম-এ আপলোড করে। একই ইউজার ক্রিডেনশিয়াল ব্যবহার করে বাইরে থাকা জঙ্গিরা তা ইসলামিক স্টেটের কথিত আমাক এজেন্সির প্রতিনিধির কাছে প্রকাশের জন্য পাঠায়। ওই সময় মিরপুর এলাকায় একটি আস্তানায় বসে তামিম চৌধুরী ও মারজান জঙ্গিদের সাথে প্রটেক্টেডটেক্সট ডটকমের মাধ্যমে যোগাযোগ করছিলো। মূলত তারাই ছবিগুলো আইএস-এর প্রতিনিধির কাছে পাঠিয়েছে। ফলে এই কার্যক্রম আইএস-এর বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

ঘটনার দিন রাত ১টা ২৪ মিনিটে আইএস তাদের মুখপাত্র আমাক এজেন্সির মাধ্যমে হলি আর্টিজানে হামলার দায় স্বীকার করে। আমাক-এর বরাত দিয়ে এই তথ্য জানায় জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। আমাকের বরাতে সাইট ইন্টেলিজেন্সের প্রথম টুইটে বলা হয়, ‘আইসিস যোদ্ধারা বাংলাদেশে ঢাকায় একটি রেস্তোঁরায় হামলা চালিয়েছে।’ মিনিট ১৫ পর আরেকটি টুইটে বলা হয়, ‘আমাক আপডেট: ২০ জনের বেশি বিভিন্ন দেশের নাগরিক ঢাকায় আইসিস হামলায় নিহত হয়েছে।’ পরে ভোর ৪টার দিকে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের টুইটার অ্যাকাউন্টে হলি আর্টিজানের ভেতর চালানো হামলার কিছু ছবিও প্রকাশ করে। জঙ্গিরা অপারেশন গাজওয়াত-২০১৬ ইউজারনেম ব্যবহার করে। তারা আটটি বার্তা আদান-প্রদান করলেও গোয়েন্দারা একটি বার্তা উদ্ধার করতে পারে। সেখানে পরস্পরকে ‘আঁখি’ সম্বোধন করা হয়। একটি বার্তায় বলা হয়, ‘বনানীর ওসি কিলড’। আবু তালহা আল বাঙালি নামে একজন ভেতরে থাকা জঙ্গিদের বলেন, ‘আঁখি, আপনারা কোনো পিকচার বা ভিডিও আপলোড করতে পারবেন নেটে? তারপর আমাদের লিংক দিলেই হবে।’ এই আবু তালহা নামের ব্যক্তিটিই হচ্ছেন নূরুল ইসলাম মারজান।

জঙ্গি হামলার পর ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘নব্য জেএমবি’র পরিকল্পনায় হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরিকল্পনাকারী কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী দেশেই অবস্থান করে এই হামলার মনিটরিং করেন। তামিম চৌধুরী নব্য জেএমবি’র অন্যতম সমন্বয়ক। এখানে আইএসের কোনো সম্পৃক্ততা তারা পাননি।’