হরিণাকুণ্ডুর অপহৃত রবিউলের মস্তকবিহীন লাশ চুয়াডাঙ্গায় উদ্ধার : পরকীয়া রুশিয়ার স্বীকারোক্তি

 

কবিরাজের বাড়ির কথা বলে বের হয়ে রাতে ওঠে কালুপোলের নবীছদ্দিনের বাড়ি : হত্যার পর মস্তক ছুঁড়ে ফেলা হয় চিত্রায়

ডিঙ্গেদহ/হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডুর ভেড়াখালীর অপহৃত রবিউলের (৪২) মস্তকবিহীন গলিত মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গার ছয়ঘরিয়া কেরুজ আখমাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে তারই পরকীয়া প্রেমিকা রুশিয়া খাতুন কৌশলে অপহরণ করে। রুশিয়ার স্বীকারোক্তিতেই গতকাল মঙ্গলবার রবিউলের মৃতদেহ আখক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। আখক্ষেতের পার্শ্ববর্তী চিত্রা নদীতে বহু খুঁজেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি মস্তক।

রুশিয়া খাতুনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের কালুপোল গ্রামের নবীছদ্দিনকে খুঁজছে পুলিশ। গতকাল তার বাড়িতে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। রুশিয়া তার পরকীয়া রবিউলকে কৌশলে ডেকে নিয়ে ওই নবীছদ্দিনের বাড়িতেই ওঠে। সেখান থেকেই রবিউলকে মাঠে নিয়ে হত্যা করা হয়। রুশিয়া তার বেশ কয়েকজন সহযোগীর নামও বলেছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাদের নাম গোপন করছে। রবিউলের মস্তকবিহীন লাশ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়া হয়। আজ বুধবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডুর জোড়াদহ ইউনিয়নের ভেড়াখালী গ্রামের নাজিম উদ্দীনের ছেলে রবিউল তার প্রতিবেশী ভাবি রুশিয়ার সাথে বিয়ান সম্পর্ক পাতায়। গোপনে গড়ে তোলে পরকীয়া সম্পর্ক। তারই সাথে গত ১১ জুলাই কবিরাজের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে রবিউল বের হয়। পরদিন জিনাত মোল্লার স্ত্রী তিন সন্তানের জননী রুশিয়া বাড়ি ফিরলেও রবিউল ফেরেনি। পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করে। না পেয়ে হরিণাকুণ্ডু থানায় নালিশ করে। রুশিয়ার কথায় অসঙ্গতী পাওয়া যায়। আচরণও সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশ কয়েকদিনের মাথায় রুশিয়াকে গ্রেফতার করে। প্রথমে রুশিয়া কিছুই জানে না বলে জানায়। পরে পুলিশের দক্ষ জিজ্ঞাসাবাদে রুশিয়া কিছুই গোপন রাখেনি। সে রবিউলের সাথে পরকীয়া সম্পর্কের কথা স্বীকার করার পাশাপাশি তাকে হত্যা করে কোথায় কীভাবে লাশ রাখা হয়েছে তাও পুলিশকে জানিয়ে দেয়। এরই প্রেক্ষিতে হরিণাকুণ্ডু থানা থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় বার্তা পাঠানো হয়। রবিউলের ভাই টিটুসহ কয়েকজন ছুটে আসেন। দুপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ছয়ঘরিয়া কেরুজ আখের মাঠে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি শুরু হয়। পুলিশ জনতার তল্লাশির এক পর্যায়ে বিকেলে পাওয়া যায় মস্তকবিহীন গলিত লাশ। পরনের পোশাক দেখে রবিউলের ভাই শনাক্ত করেন।

পুলিশ বলেছে, রুশিয়া পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে- ১১ জুলাই শুক্রবার দুজন এক সাথে চুয়াডাঙ্গার কালুপোলে নবিছদ্দিনের বাড়িতে ওঠে। সেখানেই হত্যার নীল নকশা করা হয়। মাঠে আখক্ষেতের মধ্যে লাশ ফেলে মাথা ছুঁড়ে দেয়া হয় খালের (চিত্রা নদী) মধ্যে। রুশিয়ার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চিত্রা নদীর ভেতরে ও আশপাশে বহু খুঁজেই মস্তকটি উদ্ধার করা যায়নি। মৃতদেহ উদ্ধার অভিযানে ছিলেন সরোজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সেকেন্দার ও সদর থানার এসআই বারেক। সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ডোমের সহযোগিতায় গলিত লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেন। সন্ধ্যা হওয়ায় গতকাল আর ময়নাতদন্ত সম্ভব হয়নি। লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি কালুপোলের মফিজের ছেলে নবীছদ্দিনকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। তাকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা বলেছে, হত্যার আড়ালে শুধু পরকীয়া নয়, মাদকও আছে। রুশিয়া মাদকপাচারচক্রেরও সদস্য। মাঝে ঢাকায় পাচারের সময় বলরামপুর থেকে তার ফেনসিডিল উদ্ধার হয়।

রুশিয়ার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকারীদের ধরতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশ চুয়াডাঙ্গা পুলিশের সকল প্রকারের সহযোগিতা চেয়েছে। সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেছেন, নারীর ফাঁদে পড়ে নৃশংসতার শিকার হয়েছেন তিনি। যেহেতু আসামিদের নামধাম সবই জানা গেছে, এখন তাদের ধরতে বাকি। অপরদিকে হরিণাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ এরশাদুল কবীর বলেছেন, রুশিয়া কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। হত্যার আড়ালে আরো কিছু নিহত রয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহত রবিউলের ভাই টিটু বলেছেন, প্রতিবেশী ভাবি তিন সন্তানের জননী রুশিয়া বরাবরই বাজে প্রকৃতির। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ সম্পর্ক। সম্প্রতি সম্পর্কের মধ্যে কিছুটা ভাটা পড়ে। তারই জের ধরে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে নাকি আরো কোনো ঘটনা আড়ালে লুকিয়ে আছে তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। আমরা রুশিয়াসহ তার সহযোগিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।