হরিণাকুণ্ডুতে বিএনপি নেতা আবুল হোসেন হত্যামামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে : এক বছরেও চার্জশিট দেয়নি পুলিশ

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন হত্যামামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। হত্যাকাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ হত্যামামলার আসামিদের গ্রেফতার না করে উল্টো তাদের সাথে নিয়ে ঘুরছে। আর মামলা তুলে নিতে আসামিরা প্রকাশ্যে বাদী ও তার পরিবারকে হুমকিধামকি দিচ্ছে।

নিহতের পরিবারিকসূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৮ অক্টোবর হরতালের দিন বিএনপি নেতা আবুল হোসেন সকালে দলীয় কার্যক্রম শেষে দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে মহারাজপুর গ্রামের বাড়ির দিকে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে দখলপুর বাজারে ব্রিজের নিকট পৌঁছুলে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে দুটি বোমা ছুড়ে মারে। বোমার স্প্লিন্টারে বিএনপি নেতা আবুল হোসেন মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান। এরপর সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান জোয়ার্দ্দার, আজগার মাস্টার ও বুড়ো মেম্বারের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী এ হামলা চালায় বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাইদুর রহমান বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে হরিণাকুণ্ডু থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। এ মামলায় হরিণাকুণ্ডুর পার দখলপুর গ্রামের মান্নান চৌধুরীর দু ছেলে বাপ্পী চৌধুরী ও বিপুল চৌধুরী এবং একই গ্রামের মোমিন মণ্ডলের ছেলে আক্তারুলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। কবির নামের এক আসামিকে জনতা ধরে পুলিশে দিয়েছে। বাকি আসামিরা আবুল হত্যার পরের দিন থেকেই পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশ এ হত্যামামলা নিয়ে প্রথম থেকেই ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। গ্রেফতার হওয়া দু আসামির রিমান্ড শুনানির আবেদন করা হয়। কিন্তু রিমান্ড শুনানি শেষ না হতেই আসামিরা রহস্যজনকভাবে জামিনে বের হয়ে গেছে। আদালতে হয়তো তথ্য গোপন করে তারা জামিন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাদের জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করা হবে।

নিহতের ছেলে সাইদুর রহমান অভিযোগ করেন, পুলিশের সাথে আসামিরা আড্ডা দিচ্ছে। পুলিশ এ মামলার একজন আসামিকেও গ্রেফতার করেনি। এক বছর পেরিয়ে গেলেও পুলিশ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়নি। চার্জশিট থেকে আসামিদের নাম বাদ দেয়ার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন করা হচ্ছে বলে তারা শুনেছেন। মামলায় ২৪ জন আসামি করা হলেও পুলিশ ১২/১৩ জনের নামে চার্জশিট দেয়ার পাঁয়তারা করছে। এটা দুঃখজনক।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা চেয়ামরম্যান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এমএ মজিদ জানান, হরতালের দিন প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে বোমা মেরে ও কুপিয়ে বিএনপি নেতা আবুল হোসেনকে হত্যা করেছে। আসামিদের সাথে সখ্য গড়ে তুলে তড়িঘড়ি করে মামলার চার্জশিট দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি প্রকৃত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল ও গ্রেফতারের দাবি জানান।

হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদুল কবীর চৌধুরী জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত এ মামলায় ৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান চলছে। তবে পুলিশের সাথে আসামিদের সখ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এদিকে বিএনপি নেতা আবুল হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা ও পৌর বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৭টায় উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে জাতীয়, দলীয় ও কালোপতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণ, সকাল ১০টায় মরহুমের নিজ গ্রাম মহারাজপুরে কবর জিয়ারত, শোকৱ্যালি, সকাল ১১টায় আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল এবং দুপুরে কাঙালিভোজ। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মসিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে দলীয়সূত্রে জানা গেছে।