হত্যা : আলমডাঙ্গার পাইকপাড়া বিলপাড়ে মিরপুর আমবাড়িয়ার যুবকের লাশ

 

অভিযোগ উঠেছে ১ মাস আগে দুখুকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে প্রতিপক্ষ দুজন : একজন আটক

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম পাইকপাড়া বিলের ঢাল থেকে জাহাঙ্গীর আলম দুখু নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত যুবকের বাড়ি কুষ্টিয়ার জেলার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামে। তাকে হত্যার জন্য ১ মাস পূর্বে একই গ্রামের দুজন পুরস্কার ঘোষণা করেছিলো বলে অভিযোগ উঠেছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে গ্রামবাসী একজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম দুখু (২৬)। ইউপি নির্বাচনে দ্বন্দ্বের কারণে বাড়ি ছেড়ে তিনি বেশ কয়েক মাস ধরে তার বড় বোন-জামাই বাড়ি একই উপজেলার মেকুরপুর গ্রামে অবস্থান করছিলেন। গতপরশু রোববার সন্ধ্যায় তিনি বড় বোনের নিকট থেকে চা খাওয়ার কথা বলে ৪০ টাকা চেয়ে নেন। পরে রাতে তিনি ওই গ্রামে (মেকুরপুর) অনুষ্ঠিত পালাগান শুনতে যান। গতকাল সোমবার দুপুরে মিরপুর উপজেলা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম আলমডাঙ্গার পাইকপাড়া বিলের পাড়ে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখতে পান গ্রামের এক কৃষক। তিনি ঘটনাটি গ্রামের সকলকে জানান। নিহত যুবকের গ্রামের মাঠের একপাশ মিরপুর উপজেলার অধীন। অপর পাশ আলমডাঙ্গা উপজেলার পাইকপাড়া গ্রাম। লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পেয়ে প্রায় সাথে সাথেই আত্মীয়-পরিজনেরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সে সময় নিহত যুবকের চোখ ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন এবং লুঙ্গির কিছুটা অংশ মুখের ভেতর ঢুকানো ও কিছু অংশ গলায় জড়িয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যার পর তা গলায় জড়িয়ে রাখা ছিল। গ্রামবাসীর ধারণা পালাগানের আসর থেকে পুরোনো শত্রুরা তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভোরে শ্বাসরুদ্ধ করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার পর লাশ আলমডাঙ্গা উপজেলার অংশে ফেলে রেখে গেছে।

হত্যাকাণ্ডের কারণ: গ্রামবাসী ও নিহতের পরিজনসূত্রে জানা যায়, গত ইউপি নির্বাচনে নিহত যুবক দুখু বর্তমান আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিলনের পক্ষে ছিলেন। এ নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান টুটুলের সাথে তার দ্বন্দ্ব ছিলো। ভোটের এই দ্বন্দ্ব এক সময় সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিলো। সে সংঘর্ষের মামলার আসামি হিসেবে দুখুকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিলো। জেলহাজতমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে গ্রামে শত্রুতার জন্য আর থাকেননি। বেশ কয়েক মাস তিনি বড়বোন-জামাইয়ের বাড়ি একই উপজেলার মেকুরপুর অবস্থান করছিলেন। গত প্রায় ১ মাস পূর্বে তিনি আবারও বাড়ি গিয়েছিলেন। সংবাদ পেয়ে তার প্রতিপক্ষরা রাতে বাড়িতে হামলা চালায়। কোন মতে জান বাঁচিয়ে তিনি পুনরায় বোন-জামাই বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু তাও বাঁচতে পারলেন না। নিহত দুখুর মামা আবু বকর সিদ্দিকী জানান, এক মাস আগে বাড়ি থেকে প্রতিপক্ষের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দুখুর প্রতিপক্ষ একই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ডাক্তার সাবু ও মৃত নহর মালিথার ছেলে ঝন্টু তাকে হত্যার জন্য প্রকাশ্যে পুরস্কার ঘোষণা করে। এবং সেই রাতে একই গ্রামের আলা, আনুর নেতৃত্বে তার বাড়িতে হামলা করা হয়েছিলো ডাক্তার সাবুর নির্দেশে। এই অপচক্রই দুখুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে তাদের দাবি।

নিহতের পরিচয়: মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আলী হোসেনের ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম দুখু সকলের ছোট। প্রায় ৪ বছর পূর্বে তিনি বিয়ে করেছেন। তার আড়াই বছরের এক সন্তান রয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। আজ মঙ্গলবার ভোরে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। গতকাল সোমবার গভীর রাতে নিহতের পিতা বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে গ্রামবাসী একজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আটক ব্যক্তির নাম আল আমিন। তিনি আমবাড়িয়া গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে। তিনি মিরপুর থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন বলে জানা গেছে।