সড়কে গাছ ফেলে পরিবহন ও ট্রাকে গণডাকাতি : পুলিশের গুলিবর্ষণ

 

দর্শনার-কার্পাসডাঙ্গা সড়কের আলোচিত গোপালখালী ব্রিজের অদূরে ডাকাতদলের দীর্ঘসময় ধরে তাণ্ডব

দর্শনা অফিস: দর্শনা-কার্পাসডাঙ্গা মহাসড়কের বহুল আলোচিত গোপালখালি ব্রিজে আবারও তাণ্ডব চালিয়েছে সশস্ত্র ডাকাতদল। সড়কে গাছ ফেলে নৈশকোচ পূর্বাশা পরিবহন ও ট্রাক থামিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এ সময় পূর্বাশার সুপারভাইজরকে ডাকাতরা দায়ের উল্টা দিক দিয়ে ঘাড়ে কোপ দিলে সে রক্তাক্ত জখম হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। আহত এ সুপারভাইজার চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বাগানপাড়ার সামসুজ্জামানের ছেলে নূরুজ্জামান নূরু। এ সময় ডাকতরা ৫-৬ জন যাত্রী কেউ মারপিট করে। লুণ্ঠন করে আইফোন স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ প্রায় লক্ষাধিক টাকা। ডাকাতির শেষ পর্যায়ে ঘটনাস্থলে টহল পুলিশ এসে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। এতে ডাকাতরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মাঠের দিকে পালিয়ে যায়। তবে পুলিশের দাবি, পরিবহনে তেমন কোনো যাত্রী ছিলো না। মাত্র ৪-৫ জন যাত্রী ছিলো। সব মিলিয়ে ৫-৬ হাজার টাকা আর একটি নরমাল মোবাইলফোন খোয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন ও দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ গতকাল রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

জানা গেছে, দর্শনা-কার্পাসডাঙ্গা মহাসড়কের গোপালখালী ব্রিজ নামক স্থানে দীর্ঘদিন ধরেই ঘটে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। সন্ধ্যার পর ওই সড়কে পথ চলাচল বিপদজনক হওয়ায় নির্মাণ করা হয় পুলিশ ছাউনি। পুলিশ ছাউনি থাকলেও সন্ধ্যারাতের পর থাকে না পুলিশ। সুযোগ বুঝে গভীর রাতেই ওত পাতে ছিনতাইকারীরা। প্রায় গভীর রাতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও হয় না জানাজানি। গতপরশু শনিবার রাত ২টার দিকে যাত্রীবাহী পূর্বাশা পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-১২৫৬) নৈশকোচটি ঢাকা থেকে ফিরে দর্শনায় যাত্রী নামিয়ে যাচ্ছিলো কার্পাসডাঙ্গার উদ্দেশে। আলোচিত গোপালখালী ব্রিজ নামক স্থানে পৌঁছুলে ১৮-২০ জনের মুখোশধারী সশস্ত্র ডাকাতদল সড়কের ওপর গাছ ফেলে পূর্বাশা পরিবহনের গতিরোধ করে। বাসের কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে নগদ টাকা, সোনার গয়না ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এ সময় পরিবহনের স্টাফদের কাছ থেকেও টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীচক্রের সদস্যরা। মারধর করে পরিবহনের সুপারভাইজার নুরুজ্জামানকে। পরপরই বেশ কয়েকটি ট্রাক থামিয়ে লুটপাটের তাণ্ডব চালিয়েছে ডাকাতদল। খবর পেয়ে দর্শনা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গায়েন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছুলেও তার বেশ আগেই পালিয়ে যায় ডাকাতদল। এ সময় পুলিশ পরপর ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ, দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ মোহাম্মদ ফকরুল আলম খান ও দর্শনা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গায়েন।

পুলিশ জানিয়েছে, রাত ১টার কিছুক্ষণ পর পূর্বাশা পরিবহন ঢাকা (মেট্রো-জ-১৪-১২৫৬) দর্শনা থেকে ছেড়ে কার্পাসডাঙ্গা যাওয়ার পথে গলাইদড়ি ঘাটের কাছাকাছি গোপালখালী নামক স্থানে পৌঁছুলে ডাকাত দলের কবলে পরে। ডাকাতরা পূর্ব থেকেই গাছ কেটে রাস্তা বেরিকেড দিয়ে রাখে। সাইড দিয়ে বের করে নেয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় ড্রাইভার আচমকা ব্রেক করলে গাড়ি থামাতে বাধ্য হয়। ডাকতরা এ সময় গাড়িতে উঠে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পরিবহনে থাকা মাত্র ৪-৫ জন যাত্রীর সব মিলিয়ে ৫-৬ হাজার টাকা আর একটি নরমাল মোবাইলফোন খোয়া গেছে। তাছাড়া গাড়ির সুপারভাইজারেরও তেমন কিছু হয়নি।

পূর্বাশা পরিবহনের চুয়াডাঙ্গা কাউন্টারের টিকিট মাস্টার সন্টু জানান, ডাকাতরা একটি আইফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ টাকা লুটে নিয়েছে। বাসের সুপারভাইজর নূরু এ সময় ফোন করার চেষ্টা করলে ডাকতরা তাকে দায়ের উল্টা দিক দিয়ে কোপ দেয়। এতে তার ঘাড়ের কাছে মারাত্মক জখম হয়ে রক্তাক্ত হন।

অপর একটি সূত্র বলেছে, ওই সময় কার্পাসডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি ট্রাক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে ডাকাতরা ট্রাকেও লুটপাট চালায়। বেশ কিছুক্ষণ পর দর্শনা তদন্তকেন্দ্রের টহল পিকআপ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পরপর দু রাউন্ড গুলিবর্ষণ করলে ডাকাতরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পরে কার্পাসডাঙ্গায় পৌঁছে জখম সুপারভাইজরসহ আহতরা স্থানীয় সেবা ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। রাত থেকেই দর্শনা ও কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ডাকতদের ধরতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়।

উল্লেখ্য, গোপালখালী নামক স্থানটি দীর্ঘদিন যাবত ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের চিহ্নিতস্পট হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি পুলিশি নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই এলাকাটি মোটামুটি সুরক্ষিত ছিলো। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডাকাতদলের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ মোহাম্মদ ফকরুল আলম খান।