স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করায় ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ

ঝিনাইদহ অফিস: নবনিযুক্ত ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকদের সাময়িক বদলির ক্ষমতা সিভিল সার্জনের নেই- বলেছেন খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. মামুন পারভেজ। অথচ ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ১৪ জন চিকিৎসককে বদলি করেছেন! কয়েকটি দৈনিকে এ খবর প্রকাশিত হলে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশিদা সুলতানা বলেছেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পরে জবাব দেয়া হয়েছে। তবে ওই নোটিশের কপি এখন পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

বিশেষ একটি সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশ অমান্য করে এ জেলায় নতুন নিয়োগ করা ১৪ জন চিকিৎসককে ২৮ আগস্ট সদর হাসপাতালে সাময়িক বদলি করা হয়। বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম এ কাজটি করেন।

সূত্র মতে, এ আদেশের আগের দিন স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগ দেন ওইসব চিকিৎসক। ৩১ আগস্ট সিভিল সার্জন লম্বা ছুটি নিয়ে সৌদিআরবে চলে যান। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযোগ করা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন জানান, ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্যের নির্দেশ মতো এবং জেলা স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৪ জন নবনিযুক্ত চিকিৎসককে সাময়িক সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়। তার ভাষায়, এ ধরনের ক্ষমতা সিভিল সার্জন রাখেন। অন্য একটি সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। কারণ ইতোমধ্যে নবনিযুক্ত তাছনীম নামের এক চিকিৎসকের সাময়িক বদলির আদেশ বাতিল করে শৈলকুপা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফেরত পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ২০ আগস্ট জারি করা পত্রে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন ব্যতীত নবনিয়োগ করা কোনো চিকিৎসককে দু বছরের আগে অন্য কোনো পদে/কর্মস্থলে বদলি করা যাবে না মর্মে নির্দেশ জারি করা হয়েছিলো। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশ অমান্য করে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নতুন নিয়োগ করা ১৪ জন চিকিৎসককে সদর হাসপাতালে সাময়িক বদলি করেন বহুল আলোচিত ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. রুবাইয়াত ইবনে হাসান, কুমড়াবাড়িয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. রুবনা পারভীন, সুরাট উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শাহনেওয়াজ ইবনে কাশেম, দোগাছি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. তাসনীমুল খায়ের শোভন, ঘোড়াশাল ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. আতাউর রহমান, মহারাজপুরের ডা. অন্তরা রাহুত, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের ডা. এসএম মাসুদুজ্জামান ও ডা. কামরুন্নাহার এবং একই উপজেলার নলডাঙ্গার ডা. জাহিদুল হাসান, কালীগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. নাজনীন সুলতানা, মহেশপুরের নেপা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. দেবাশীষ রায়, শৈলকুপার কচুয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. ইফরাত তাসনীম, সারুটিয়া ডা. ফাহমিদা হক ও শৈলকুপা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শূন্য পদে যোগদান করা ডা. মিথিলা ইসলাম এখন সদর হাসপাতালে কাজ করছেন। উল্লেখ করা ব্যক্তিদের বেশ কয়েকজন স্থানীয় ড্যাব নেতাদের ছেলে-মেয়ে ও নিকটাত্মীয়।

একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা নতুন নিয়োগ করা চিকিৎসকদের কর্মস্থলে দেখছেন না। অভিযোগ করা হয়েছে, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের দফতরে যোগসাজশে গোটা দেশের ন্যায় এ জেলায় ডেপুটেশন বাণিজ্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।