স্বাধীনতা বিরোধীদের আজকের এই আস্ফালন পঁচাত্তর পরবর্তী ব্যর্থ ও মেরুদণ্ডহীন রাজনীতিরই করুণ চিত্র

গণজাগরণ মঞ্চের ৬ দফা নিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমের ৭ জেলায় জাগরণ যাত্রা : চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর ডা. ইমরান এইচ সরকার

 

স্টাফ রিপোর্টার: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে প্রশ্নের মীমাংসা হওয়া উচিত ছিলো আজ থেকে ৪২ বছর আগেই, পঁচাত্তরের পট-পরিবর্তনের কারণে আজও তার কোনো সুরাহা হয়নি। বরং উল্টোপথে হেঁটেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার বিরোধীতা করে রাষ্ট্রের পবিত্র সংবিধানকে না মেনেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জামায়াত-শিবিরচক্র। স্বাধীনতা বিরোধীদের আজকের এ আস্ফালন পঁচাত্তর পরবর্তী ব্যর্থ ও মেরুদণ্ডহীন রাজনীতিরই করুণ চিত্র। এই অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে হবে সমাজের প্রতিটি স্তরে।

Jhenidah Gonojagoron Monch Photo  31-10-14

ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর সফরকালে পথসভায় উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের ৭ জেলায় জাগরণ যাত্রার অংশ হিসেবে গতকাল ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর সফর করেন। ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমি, আপনি-আমরা একসাথে সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, যারা লুটপাট, অপশক্তি ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না তারাই একদিন সংগঠিত হয়ে আগামী দিনে অসাম্প্রদায়িক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচার ও রায় দ্রুত কার্যকর করাসহ ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের জাগরণযাত্রার চুয়াডাঙ্গার পথসভায় জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. এইচএম ইমরান সরকার এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রপতির যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমার বিধান বাতিল করতে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চ।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে এসে পৌঁছান। এ সময় মঞ্চের জহির রায়হান, সাবেক কমান্ড নুরুল ইসলাম মালিক, আদিল ও সাঈদ আলম মানুসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। ডা. ইমরান সরকারের সাথে ছিলেন- গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারিখ, সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার, ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি জর্নাদন দত্ত, শিবলী সাদিক, মারুফ রাসেল, প্রীতিলতা, মুক্তা বাড়ইসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। প্রায় ১০ মিনিটের পথসভা শেষে জাগরণ যাত্রার বহরটি মেহেরপুরের উদ্দেশে চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, যুদ্ধাপরাধী ও দেশ বিরোধী সংগঠন জামায়াত ইসলামী এবং তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের সকল অর্থনৈতিক উৎসের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণসহ গণজাগরণ মঞ্চের সুনির্দিষ্ট ছয় দফা দাবির অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং দেশব্যাপি জামায়াত-শিবিরের পৈশাচিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবেলায় সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চে জাগরণ যাত্রার অংশ হিসেবে মেহেরপুরে জাগরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মেহেরপুর শহীদ ড. সামসুজ্জামান নগর উদ্যানে ওই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গণজাগরণ মঞ্চ ও প্রজন্ম মুজিবনগরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুরের ভাষা সৈনিক ইসমাইল হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণজাগরণ লাকি আক্তার, মেহেরপুর জেলা সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক অ্যাড. ইব্রাহিম শাহীন, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. আব্দুস সালাম, জেলা যুবলীগের সভাপতি সাজ্জাদুল আনাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন নিশান সাবের।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যাশিত বিচার সাধারন জনগণ পায়নি বলে অভিযোগ করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। ছয় দফা দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের জাগরণযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে ঝিনাইদহে সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধপরাধীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি কার্যকর করতে হবে। তা না হলে এ জাগরণ যাত্রা আরও কঠোর কর্মসুচি ঘোষনা করা হবে।

গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাস ও মাইক্রোযোগে জাগরণযাত্রার বহরটি ঝিনাইদহ শহরে এসে পৌঁছায়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সাঈদীর রিভিউ পিটিশন বাতিল, সব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ছয়দফা দাবিতে এ জাগরণযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়। ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে পৌনে বিকাল ৫টার দিকে শহরের ওয়াজির আলী হাইস্কুলের সামনে থেকে জাগরণ যাত্রার একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিলে গণজাগরণ মঞ্চ, জেলা বাসদ, সিপিবি, উদীচী, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রইউনিয়ন সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা অংশ নেন। পরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে সমাবেশ করেন তারা।

সমাবেশে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রপতির যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমার বিধান বাতিল করতে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি আরও জানান আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যনালে অনেক যুদ্ধপরাধিদের বিচারের রায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন সাইদীর বিচারের রায় প্রত্যাশিত মতো আমরা পাইনি।

সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারিখ, সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার, ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি জর্নাদন দত্ত, শিবলী সাদিক, মারুফ রাসেল, প্রীতিলতা, মুক্তা বাড়ইসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে সমাবেশ শেষে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে যাত্রা করে।