স্বজনদের শেষ সাক্ষাৎ

স্টাফ রিপোর্টার: গতকাল শনিবার বিকালে কামারুজ্জামানের সাথে শেষ দেখা করেন তার স্বজনরা। দেখা করে স্বজনরা জানান, সুস্থ এবং ধীরস্থির দেখেছেন তারা কামারুজ্জামানকে। বিকাল ৪টার কিছু পর কারাগারে প্রবেশ করে প্রায় সোয়া ঘণ্টা পর তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। স্বজনদের মধ্যে কামারুজ্জামানের স্ত্রী, দু ছেলে, এক মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ ২৩ জন ছিলেন।

hasan_130471

কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাতের পর তার ছেলে হাসান ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি (কামারুজ্জামান) ধীরস্থির রয়েছেন, সুস্থ রয়েছেন। এটাই শেষ সাক্ষাৎ কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট কিছু বলেননি হাসান ইকবাল। এর আগে সকালে এ জামায়াত নেতার স্বজনদের বিকালে সাক্ষাতের সময় দিয়েছিলো কারা কর্তৃপক্ষ। বিকাল ৪টার কিছু পরে দুটি মাইক্রোবাসে করে স্বজনরা কারাফটকে পৌঁছায়।

কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে তার ছেলে হাসান ইকবাল বলেন, একাত্তরে ১৮ বছর বয়সী একটা ছেলেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে যুদ্ধাপরাধী সাজানো হয়েছে। এর উপযুক্ত জবাব তরুণ প্রজন্ম দেবে। ব্লগে লেখালেখিতে সক্রিয় কামারুজ্জামানের এ ছেলে। কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিলের রায়ে আদালত আলবদর নেতা হিসেবে তার একাত্তরের ভূমিকাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের নাসিৎ বাহিনীর সাথে তুলনা করেছিলো।

হাসান ইকবাল বলেন, তিনি আমাদের মাধ্যমে তার নামাজে জানাজা ও দাফন গ্রামের বাড়িতে করতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দলের (জামায়াত) লোকজন যেন তাতে অংশ নিতে পারেন, সে অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি। প্রাণভিক্ষা চাওয়া প্রসঙ্গে বাবা বলেছেন, প্রাণের মালিক আল্লাহ। রাষ্ট্রপতি কে যে তার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবো?

হাসান ইকবাল জানান, দুপুর ১টা ২২ মিনিটে লাভলু নামের একজন ডেপুটি জেলার আমার আম্মাকে (কামারুজ্জামানের স্ত্রী) ফোন দিয়ে কারাগারে যেতে বলেন। কারাগারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিলো, বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যেই যেন পরিবারের সদস্যরা কারাগারে পৌঁছান। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই এখানে এসেছি। কামারুজ্জামানের সঙ্গে যারা দেখা করতে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন- স্ত্রী নুরুন্নাহার, ছেলে হাসান ইকবাল ও হাসান ইমাম, মেয়ে আতিয়া নূর, ভাই কামরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আফিয়া নূর, ভাতিজা আরমান, ভাতিজি আরিফা ও মলি, শ্যালক রুম্মান, ভাগ্নি রোকসানা জেবিন, জিতু, মুন ও মনি এবং বিউটি নামে এক আত্মীয়া। মোট ২৩ জন কারাগারে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেও কারা কর্তৃপক্ষ ২০ জনকে দেখা করতে দেয়।

দেখা হলো ৮ নম্বর সেলে: পরিবারের সদস্যদের সাথে কামারুজ্জামানের শেষ দেখা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৮ নম্বর কনডেম সেলে। কারা সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্ত্রী নুরুন্নাহার। তাকে সান্ত্বনা দেন কামারুজ্জামান নিজেই। কারা সূত্র জানায়, প্রায় এক ঘণ্টা পরিবারের সদস্যরা সেখানে অবস্থান করেন। কামারুজ্জামান সেলের ভেতরেই ছিলেন। একটু দূর থেকে সেলের লোহার গরাদের বাইরে থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে স্রেফ দেখতে পান। কামারুজ্জামান তার পরিবারের সদস্যদের তার জন্য দোয়া করতে বলেন।

ছোটো দু ছেলের সাথে শেষ সাক্ষা হয়নি: কামারুজ্জামানের সাথে শেষ সাক্ষাৎ হয়নি তার ছোটো দু ছেলের। সেজ ছেলে হাসান ইকরাম সুইডেনে লেখাপড়া করছেন। আরেক ছেলে হাসান জামান মালয়েশিয়ায় টেলি কমিনিউকেশন পেশায় নিয়োজিত। দেশে না থাকায় তারা বাবার (কামারুজ্জামান) সাথে শেষ সাক্ষাৎ করতে পারেননি। বাবার জীবনের শেষ সময়েও তারা দেশে আসেননি। লাশ দাফনের আগে তারা আসবেন কি-না তাও নিশ্চত নয়।