স্ত্রী জবাই করা খুনি ইঞ্জিল গ্রেফতার : পিতার বিরুদ্ধে দু মেয়ের জবানবন্দি

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ঝিনেরপুর পাড়ায় আলোচিত হত্যাকাণ্ডের হোতা মাসুদ রানা ওরফে ইঞ্জিলকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার হিন্দা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গতকাল আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছে নিহত সেলিনার দু মেয়ে। অপরদিকে স্ত্রীকে হত্যা করেছে মর্মে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে ইঞ্জিল।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম জানান, হত্যকাণ্ডের পর থেকে পুলিশের কয়েকটি দলের অভিযানের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। গতকাল দুপুরে হিন্দা গ্রামের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় মানুষের সহায়তায় ইঞ্জিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার শিশুকন্যা হোসনেয়ারাকেও উদ্ধার করা হয়।

এদিকে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে ইঞ্জিল। তার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, যৌতুকের টাকার দাবিতে পূর্বের ন্যায় গত শনিবার দুপুরে আবারো স্ত্রী সেলিনা খাতুনকে চাপ প্রয়োগ করে ইঞ্জিল। বারবার মায়ের কাছ থেকে টাকা আনায় নতুন করে টাকা আনার কোনো রাস্তা ছিলো না সেলিনার। তাই স্বামীকে সে সাফ জানিয়ে দেয় আর কোনো টাকা আনা সম্ভব নয়। এ বিষয়টি নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বাগতিণ্ডার এক পর্যায়ে শিশুকন্যার সামনেই হেঁসো দিয়ে জবাই করে সেলিনাকে হত্যা করে। ঘরের মেঝে ও জিনিসপত্রে রক্ত ছিটকে পড়ে। লেপ দিয়ে সেলিনার নিথর দেহ ঢেকে দেয় স্বামী ইঞ্জিল। ছোট মেয়ে হোসনেয়ারাকে সাথে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। হত্যাকাণ্ডের সমস্ত দায় দায়িত্ব স্বীকার করে সে আরো জানিয়েছে, মাথায় কি যেন হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি।

এদিকে গতকাল দুপুরে ইঞ্জিল গ্রেফতারের খবরে গাংনী থানা পুলিশের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নিহতের মাসহ এলাকাবাসী। হত্যাকাণ্ডের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতার হওয়াকে আইনের শাসনের ইতিবাচক দিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তবে দ্রুত তার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে পুলিশের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ দেন তারা। পাষণ্ড এই ইঞ্জিলের দৃষ্টান্তমূলক সাজাও দাবি করে এলাকাবাসী।

তবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় সহায়তার লক্ষ্যে প্রক্রিয়ায়ও শুরু করেছে পুলিশ। গতকাল গাংনী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নিহত সেলিনার দু মেয়েকে মেহেরপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়া হয়। তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিজ্ঞ বিচারকের কাছে জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দির বরাত দিয়ে গাংনী থানার ওসি রিয়াজুল ইসলাম আরো জানান, ছোট মেয়ে হোসনেয়ারা হত্যাকাণ্ডের গোটা বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। সে জবানবন্দিতে বলেছে, বকাবকির একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পিতা ইঞ্জিল মা সেলিনাকে জবাই করে হত্যা করে। গতকালই হোসনেয়ারাকে তার নানির জিম্মায় প্রদান করেছে পুলিশ। আজ সোমবার ইঞ্জিলকে মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে বলে গাংনী থানাসূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, পারিবারিক কলহের জের ধরে গত শনিবার দুপুরে তিন বছর বয়সী শিশুকন্যা হোসনেয়ারার সামনে স্ত্রী সেলিনা খাতুনকে জবাই করে খুন করে স্বামী মাসুদ রানা ওরফে ইঞ্জিল। স্ত্রীর মৃত্যু নিশ্চিত জেনে মেয়ে হোসনেয়ারাকে সাথে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শনিবার বিকেলে সেলিনার মা কোহিনুর বেগম বাদী হয়ে ইঞ্জিলকে একমাত্র আসামি করে গাংনী থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।