স্কুল-কলেজের দু’শতাধিক ছাত্রকে মুচলেকায় অভিভাবকদের জিম্মায় মুক্তি

সন্ধ্যার পরে বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের ধরতে চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার: লেখাপড়া বাদ দিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এবার মাঠে নেমেছে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ। গত দু’দিনে দু’শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বখাটে প্রকৃতির শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। তবে অভিভাবক ও সচেতনমহল পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ গতকাল সোমবার জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় স্কুল ও কলেজে পড়–য়া ৫৩ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তাদেরকে আটক করা হয়। থানায় নিয়ে আসার পর গতরাতে অভিভাবকদেরকে জানানো হলে থানায় অভিভাবকদের ভিড় জমে। সন্ধ্যার পর তারা বাইরে থাকবে না মর্মে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় মুক্তি দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। সদর থানা পুলিশের ইনচার্জ মো. দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, মাগরিবের পর কোনো শিক্ষার্থীকে বাড়ির বাইরে ঘোরাঘুরি বা আড্ডা দেয়া দেখলে আটক করা হবে। আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ গত রোববার সন্ধ্যায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করে। গত দু’দিনে একই অভিযোগে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ দু’শতাধিক শিক্ষার্থীকে একই অভিযোগে আটক করে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে বিস্তারিত।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, সরকার শিক্ষার মানোন্নয়ন, মাদকদ্রব্য রোধ ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে থেকে উঠতি বয়সের যুবক ও শিক্ষার্থীরা যাতে জড়িয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে গ্রহণ করেছেন কার্যক্রম। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে জেলাব্যাপী শুরু হয়েছে পুলিশের ঝটিকা অভিযান। সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিল ছেড়ে হাট-বাজার, কেরামবোর্ড খেলা, চায়ের দোকানের আড্ডা, নির্জন এলাকায় ঘোরাঘুরি বন্ধকরণে দর্শনায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দর্শনা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গায়েনের নেতৃত্বে এএসআই লাভলু, সবেদ, মনির ও মাসুদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালান দর্শনা পৌর শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়। সন্ধ্যার পর ঘোরা ফেরার অপরাধে পুলিশ আটক করেছে ৩০ জন যুবক ও শিক্ষার্থীকে। খবর পেয়ে অভিভাবকরা ভিড় জমায় পুলিশ তদন্তকেন্দ্র চত্বরে। এ সময় অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে আটককৃতদের। সেই সাথে কড়াভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সন্ধ্যার পর যাতে শিক্ষার্থী ও যুবকেরা অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরা করতে না বের হয়।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সন্ধ্যারাতে আকস্মিক অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। আকস্মিক অভিযানে উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীসহ ১০২ জনকে আটক করা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিলে না বসে মোবাইলফোন হাতে রাস্তায় অযাচিত ঘোরাঘুরি, মাদকসেবন, কেরামবোর্ড খেলা শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত করে বাড়ি ফেরা। বর্তমান সময়ের উঠতি বয়সী ছাত্রদের এমন আচরণে অভিভাবকদের যখন কপালে চিন্তার ভাজ, ঠিক তখনই সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার। সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিল ছেড়ে কেরামবোর্ড খেলাসহ বন্ধুদের সাথে রাস্তায় অযাচিত ঘোরাঘুরি করতে দেখা মাত্রই আটক করা হবে উঠতি বয়সী ছাত্রদের। উঠতি বয়সী ছাত্ররা যাতে মাদকসেবনের দিকে ঝুকে না পড়ে। তারা যাতে পড়ার টেবিলমুখি হয় মূলত এমন চিন্তা চেতনা থেকেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন জানান, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের নির্দেশে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের সন্ধ্যার পরে তারা পড়াশোনার টেবিলে না বসে স্থানীয় খেলার মাঠে মাদকসেবন, চায়ের দোকানে কেরামবোর্ড এবং তাস খেলা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর আশঙ্কা থেকেই তাদেরকে আটক করা হচ্ছে। প্রথমবার সতর্ক করে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কেউ যদি এ ধরনের চলাফেরা অব্যাহত রাখে তাহলে তাদেরকে আর ছাড়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে অন্য উপজেলার পর দামুড়হুদায় এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকার সচেতন অভিভাবকমহল। অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, অভিভাবকরা যা পারেননি তা যদি পুলিশ করতে পারে তাহলে আগামীতে এদেশ পাবে একঝাক মেধাবী ছাত্র। প্রিয় পাঠক, উঠতি বয়সী ছাত্রদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রথমবারের মতো তাদের নাম ঠিকানা গোপন রাখা হলো।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ও নাটুদহে প্রায় অর্ধশতাধিক উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীকে আটকের পর মুচলেখায় মুক্তি দিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনার ঘটে।
জানা গেছে, উঠতি বসয়ী শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিলে না থেকে চায়ের দোকান, কেরামবোর্ডসহ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজের আড্ডা দিয়ে থাকে। এ থেকে বিপদগামী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উঠতি বয়সী যুবকরা বিপদগামী না হয়, এই কারণে পুলিশ সুপার সন্ধ্যার পর উঠতি বয়সী যুকদের আটক করে শপথ করিয়ে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবদের জিম্মায় দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের নির্দেশ দেয়। তারাই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গায় সন্ধ্যার পর উঠতি বয়সী যুবকদের রাস্তায় পেয়ে আটক করে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদরে জিম্মায় মুক্তি দেয়।
এদিকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির আইসি আসাদুর রহমান ও নাটুদহ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি আবুল কালাম আজাদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালায়। এ সময় গ্রামের বিভিন্ন ক্যারামবোর্ড, চা’র দোকানের আড্ডা ও রোডে ঘোরাঘুরি করার সময় তারা প্রায় অর্ধশতাধিক স্কুল-কলেজ পড়–য়া উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণকে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। তাদের আটকের সংবাদ পেয়ে তাদের অভিভাবকরা ছুটে আসে ফাঁড়িতে। এ সময় অভিভাবকদের উপস্থিতিতে সকলকে দাঁড় করানো হয়। সকলের উপস্থিতিতে তারা হাত উঠিয়ে ধুমপান না করা, মাদকাসক্ত না হওয়া ও পড়ার টেবিলে বসার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, রাতে লেখাপড়া ছেড়ে বাজারে এসে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, ফেসবুক ও ইন্টারনেটের অবৈধ ব্যবহার ও নেশা করাকালে জীবননগর থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করে। গতকাল সোমবার রাত ৮টার পর জীবননগর শহর ধরে পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করে। ছাত্র অবস্থায় বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করতে পুলিশ বিশেষ এ অভিযান শুরু করেছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশ মোতাবেক বিশেষ এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। গভীররাতে পুলিশ মুচলেকা নিয়ে আটক শিক্ষার্থীদের তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয় বলে জানা গেছে।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহ্মুদুর রহমান জানান, রাতে লেখাপড়া না করে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বাজারে এসে আড্ডায় লিপ্ত হচ্ছে। অভিভাবকদের অবাধ্য হয়ে এদের কেউ ফেসবুকে আশক্ত হচ্ছে, আবার কেউ বা ইন্টারনেটের অপব্যবহার করছে। কেউ নেশাগ্রস্থসহ বখাটে বনে যাচ্ছে। রাত ৮টার পর বাজারে কোনো শিক্ষার্থী অহেতুক থাকবে পারবে না। তাদেরকে বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মো. মাহাবুবুর রহমান শিক্ষার্থীদের বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার।
ওসি জানান, তারই আলোকে গতকাল রাত হতে জীবননগরে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। অভিযানের প্রথমদিনে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করে থানাতে নেয় পুলিশ। সামাজিক অবস্থানের কথা বিবেচনা করে দৈনিক মাথাভাঙ্গাতে আটক শিক্ষার্থীদের নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হলো। ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা মাহ্মুদ আরও জানান, রাত ৮টার পর অহেতুক কোনো শিক্ষার্থীকে শহরে অবস্থান করতে দেখা গেলে তাকে গ্রেফতার করবে পুলিশ। এ ব্যাপারে তিনি অভিভাবকদের সতর্ক হওয়াসহ আটককৃত শিক্ষার্থীদের ছাড়াতে থানাতে কোনো সুপারিশ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।