স্কুলছাত্র সজিবকে অপহরণ করে খুন-গুমের হোতা রাকিব মেম্বারের পতনে মিষ্টি বিতরণ

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সজিবকে অপহরণ করে খুন-গুমের হোতা আলুকদিয়া ইউপি মেম্বার রাকিবের পতন খবরে এলাকাজুড়ে ছিলো উল্লাস। গতপরশু রাত আড়াইটার দিকে দামুড়হুদার গোবিন্দহুদায় র‌্যাবের সাথে গুলির লড়াইয়ে খতম হয় সে। র‌্যাব এ তথ্য দিয়ে বলেছে, ঘটনাস্থল থেকে শাটারগান, গুলিসহ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে দামুড়হুদা থানায় মামলা হয়েছে।

জানা গেছে, দামুড়হুদার গোবিন্দহুদা চটাঙ্গার মাঠ সংলগ্ন একটি আমবাগানের মধ্যে রাকিব মেম্বার তার দলবল নিয়ে গোপন বৈঠক করাকালীন র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে রাকিব মেম্বার নিহত হয়। সে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার ছিলো। ভিকু মণ্ডলের ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র সজিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি। সজিব দামুড়হুদা ব্রিজমোড় পাড়ার মৃত হাবিবুর রহমান হবির ছেলে। তাকে অপহরণ করে চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জ সিঅ্যান্ডবিপাড়াস্থ রাকিবের চার্জার লাইট তৈরির কথিত কারখানায় হত্যা করে লাশ গুম করা হয়।

অপহরকচক্রের হোতা রাকিবুল ইসলাম রাকিবের লাশ দামুড়হুদার চিৎলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। এ সময় আলুকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দীন দামুড়হুদা থানায় উপস্থিত হয়ে রাকিবের লাশ শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়। দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত রাকিবের লাশ তার বড় ভাই চুয়াডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর হোসেনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। বিকেল ৫টার দিকে নিহতের লাশের নামাজের জানাজা শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নিহত রাকিব ছিল সকলের ছোট।

এদিকে রাকিব মেম্বার র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহত স্কুলছাত্র সজিবের পরিবারে নেমে আসে স্বস্তির নিঃশ্বাস। সকাল থেকেই এলাকার শ শ নারী-পুরুষ নিহত রাকিবের লাশ দেখতে দামুড়হুদা থানা চত্বরে ভিড় জমাতে শুরু করে। সকাল ১০টার দিকে দশমী স্টার ক্লাবের সভাপতি আব্দুল হালিম ভুট্টু, ক্রীড়া সংগঠক আমিনুল ইসলাম রশিদ ও ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরজু আহম্মেদ রাকিবের নেতৃত্বে দামুড়হুদা উপজেলা শহরের প্রধান সড়কে আনন্দ মিছিল বের হয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী র‌্যাব-পুলিশকে ধন্যবাদ জানান এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। নিহত স্কুলছাত্র সজিব হত্যা মামলার বাদী সজিবের মামা আব্দুল হালিম এ ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং বাকি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য র‌্যাব-পুলিশের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহের আঞ্চলিক ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মনির আহম্মেদ বলেছেন, র‌্যাবের একটি টহল দল গত শনিবার রাতে দামুড়হুদার গোবিন্দহুদা এলাকায় টহলে গেলে একদল দুষ্কৃতী র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। বেশ কিছুক্ষণ চলে গুলির লড়াই। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা পিছু হটে। ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুটি গুলি, একটি শাটারগানসহ ধারালো অস্ত্র হেঁসো উদ্ধার করা হয়েছে।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকা ব্যক্তি আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সে ভিকু মণ্ডলের ছেলে। রোববার সকালে থানায় এসে তার লাশ শনাক্ত করেন আলুকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দীন। রাকিব স্কুলছাত্র সজিব অপহরণ ও খুন-গুম মামলার প্রধান আসামি। তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ ছিনতাই, অপহরণ ও ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি আরও জানান, লাশ শনাক্তের পর সকাল ১০টার দিকে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দুপুরে নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাত ৯টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা থেকে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সজিবকে (১৪) তারই এক প্রতিবেশী যুবক শাকিলের মাধ্যমে কৌশলে অপহরণ করে অপহরকচক্রের হোতা রাকিব মেম্বার। তাকে অপহরণের পর নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কেদারগঞ্জ সিঅ্যান্ডবিপাড়ার জেলা মৎস্য অফিসের অদূরবর্তী রাকিবের চার্জার লাইটের কথিত কারখানায়। সেখানে সজিবকে আটকে রেখে তার মায়ের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সন্ত্রাসী রাকিব। একপর্যায়ে স্কুলছাত্র সজিবকে হত্যা করে এবং ওই  কারখানার সেপটিক ট্যাংকে তার লাশ গুম করা হয়। অপহরণের ৩২ দিনের মাথায় গত ৩১ আগস্ট সেপটিক ট্যাংক থেকে অপহরণের শিকার স্কুলছাত্র সজিবের গলিত লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব। গ্রেফতার করা হয় রাকিবের শ্বশুর, শাশুড়ি ও শ্যালককে।