স্কুলছাত্র প্রান্ত হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কাঁদলেন শোকার্ত মা

মেহেরপুরে নিখোঁজ হওয়ার ৪ দিনের মাথায় লাশ উদ্ধার : মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত

 

মেহেরপুর অফিস : মেহেরপুরের স্কুলছাত্র শাঈখ হাসান প্রান্তকে হত্যা করা হয়েছে। সহপাঠীরাসহ তার পিতা-মাতা এবং আত্মীয়স্বজন এ দাবি করে ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ দাবিতে গত দু দিন ধরে মেহেরপুরে মানববন্ধনসহ মিছিলও করেছেন তারা। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ফুটফুটে সন্তান প্রান্তের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে বলেছেন, ওকে মেরে ফেলা হয়েছে। তবে পুলিশ গতকাল পর্যন্ত প্রকৃত মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেনি। ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষারও প্রক্রিয়া করা হয়েছে।

প্রান্তের পিতা হিসাবরক্ষক জাহিদ হাসান বাদী হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি হত্যামামলা রুজু করেছেন। মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। নিখোঁজ হওয়ার ৪ দিনের মাথায় গত সোমবার সন্ধ্যায় মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের মেহেরপুরের নির্মাণাধীন বাসটার্মিনালের একটি ঘর থেকে প্রান্তের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার সকালে পুলিশ নিহত প্রান্তের লাশ মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে নেয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিকটজনদের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। বিকেলে মেহেরপুর কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে প্রান্তের লাশ মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় শরিক হন- পৌর মেয়র আলহাজ মোতাছিম বিল্লাহ মতু, ডা. আবুল বাশার, বিএনপি নেতা মজিবুল হক খাঁন চৌধুরী হেলাল, আনোয়ারুল হক কালু, অ্যাড. মখলেছুর রহমান স্বপন, মেহেরপুর পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও নিহত প্রান্তের সহপাঠী, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য মানুষ।

মেহেরপুরের স্কুলছাত্র শাঈক হাসান প্রান্তকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। লাশ উদ্ধারের সময় পাওয়া চিরকুটে লেখা নাম দেখে বন্ধু আরিফুল ইসলামকে থানায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তেমন তথ্য মেলেনি। লাশের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন ও পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিশ্চিত হতে না পেরে ফরেনসিক বিভাগের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। পুলিশ বলেছে, অধিকতর ময়নাতদন্তের জন্য সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের দ্বারস্থ হচ্ছেন চিকিৎসকরা।

মেহেরপুর সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম বলেছেন, প্রান্তের লাশ যখন উদ্ধার করা হয় তখন ভালোভাবেই পরীক্ষা করা হয়। শরীরে আঘাতের তেমন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আবার তার মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছিলো। তাছাড়া লাশের হাতে থাকা চিরকুটে লেখা নাম দেখে তার বন্ধু আরিফুল ইসলামকে থানায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য মেলেনি। প্রান্তকে হত্যা করা হয়েছে নাকি সে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। লাশের প্রয়োজনীয় অংশ দ্রুত ঢাকার সিআইডি ফরেনসিক বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে প্রান্তকে হত্যা করা হয়ে থাকতেও পারে এমন আশঙ্কা থেকে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। প্রান্তের ব্যক্তিগত শত্রু, প্রেম ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক এবং তার পিতার সাথে কারো বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে নিহত প্রান্তের পিতা হিসাবরক্ষক জাহিদ হাসান মেহেরপুর সদর থানায় একটি এজহার দাখিল করেছেন। মেহেরপুরে স্কুলছাত্র শাইখ হাসান প্রান্তের হত্যাকারীদের আটক এবং বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মানবন্ধন করেছে তার সহপাঠীরা। তারা কনকনে শীত উপেক্ষা করে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে টেকনিক্যাল কলেজের সামনের সড়কে কালোব্যাজ ধারণ করে ওই মানববন্ধনে অংশ নেন। পরে টেকনিক্যাল কলেজের সামনে থেকে একটি মিছিল বের হয়ে তাহের ক্লিনিকের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এদিকে একই সময়ে একই দাবিতে শহরের তাহের ক্লিনিকের সামনেও মানববন্ধন করেন প্রতিবেশীরা। প্রান্তের পিতা-মাতাও ওই মানববন্ধনে অংশ নেন। প্রান্তের মা সালমা বেগম ও তার বাবা মেহেরপুর পৌরসভার হিসাবরক্ষক জাহিদ হাসান মানববন্ধনে অংশ নিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

প্রাপ্তের মা সালমা বেগম কান্নাভরা কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ওই সময় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। এদিকে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রান্তের সহপাঠীরা মানববন্ধন করেছিলো।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর শহরের নতুন শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা মেহেরপুর পৌরসভার হিসাবরক্ষক জাহিদ হাসানের ছেলে শাইখ হাসান প্রান্ত (১৫) গত বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পর বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ থাকার ৪ দিন পরে গত সোমবার সন্ধ্যায় শহরের উপকণ্ঠে নবনির্মিত বাসটার্মিনালের একটি কক্ষের মধ্যে থেকে প্রান্তের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে মেহেরপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। নিখোঁজ হওয়ার পর প্রেম সংক্রান্ত বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। প্রেমের কারণেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে এরকম আশঙ্কা যেমন অনেকেরই তেমনই সে আত্মহত্যাও করতে পারে বলে কারো কারো ধারণা। সব মিলিয়ে অধিকাংশেরই অভিমত স্কুলছাত্র প্রান্ত প্রেমেরই বলি হয়েছে।