স্কুলছাত্রী তাহেরা খাতুনের হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন

অবশেষে হত্যা মামলা দায়ের : সহকারী পুলিশ সুপারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : আলমডাঙ্গায় স্মরণকালের বিশাল মানববন্ধনে বক্তারা

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো/স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গায় স্মরণকালের বিশাল মানববন্ধন থেকে দাবি তুলে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাহেরা খাতুনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আহ্বানে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

rrrr

মানববন্ধনে বক্তারা স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলেছেন, জায়নামাজের এক পাশে ছিলো মোবাইলফোন, অপর পাশে ছিলো বই। তার পাশেই পড়ে ছিলো এসএসসি পরীক্ষাথী তাহেরা খাতুনের পরনে থাকা পায়জামা। সেখানেই তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে লম্পট ঘাতকচক্র। শ্বাসরোধ করে হত্যার পরও লাশের ওপর চালানো হয়েছে নির্যাতন। ধারালো কিছু দিয়ে চিরে দেয়া হয়েছে বুক। হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে হত্যাকারীরা লাশের গলায় রশি বেধে ঝুলিয়ে রেখে আশপাশে ঘুর ঘুর করেছে। পুলিশ লাশে আঘাতের স্পষ্ট দাগ দেখেও তাৎক্ষণিকভাবে হত্যাকারী ধরতে তেমন আগ্রহী হয়নি। পুলিশ আন্তরিক হলে হত্যাকারীরা আত্মগোপনের সুযোগ পেতো না। হত্যাকারীরা যেখানেই থাকুক, তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরতে হবে। অন্যথায় আলমডাঙ্গায় গড়ে তোলা হবে বৃহত্তর আন্দোলন।

20141210_132420

অপরদিকে গতরাতে তাহেরা খাতুনের পিতা আলমডাঙ্গা ছত্রপাড়ার শাজাহান আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, অজ্ঞাত পরিচয়ের হত্যাকারীরা পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তাহেরা খাতুনকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। গতরাতেই আলমডাঙ্গা থানায় এ মামলা রেকর্ড করা হয়। গতকাল দুপুরে চুয়াডাঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) কামরুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি স্থানীয়দের নিকট থেকে লাশ উদ্ধার ও ঘটনার সময়ের বিস্তারিত বর্ণনা শোনেন। সন্ধ্যায় তাহেরা খাতুনের এক খালাকে চুয়াডাঙ্গায় নেয়া হয়। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, তাহেরা খাতুনের খালার নিকট থেকে বিস্তারিত বর্ণনা শোনার জন্যই চুয়াডাঙ্গায় নেয়া হয়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ডাউকি ইউনিয়নের ছত্রপাড়া গ্রামের শাজাহান আলীর দু মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে তাহেরা খাতুন পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলো। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো সে। তার পড়াশোনার জন্যই শাজাহান আলমডাঙ্গা আনন্দধামের আব্দুল কাদেরের দোতলাবাড়ির নিচতলার দুটি ঘর ভাড়ায় নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত সোমবার সকাল ১০টার পর থেকে তাহেরা খাতুন ওই বাসায় একাই ছিলো। পিতা-মাতা ও ছোট বোন ছিলো ছত্রপাড়ায়। নানি খাইরুন্নেছা সকাল ১০টার দিকে তাহেরা খাতুনকে ওই বাসায় একা রেখে অপর এক মেয়ের বাসায় যান। এপরই লম্পট হত্যাকারীরা সুযোগ বুঝে ঘরে ঢুকে তাহেরা খাতুনের ওপর নির্যাতন শুরু করে। হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। বিকেলে লাশ দেখে স্থানীয়রা ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে জোর দাবি তুললেও পুলিশ ছিলো অনেকটাই নির্বিকার। সন্ধ্যায় অবশ্য লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়। পরদিন মঙ্গলবার মায়নাতদন্ত করা হয়। নিজ গ্রামে দাফন করা হলেও ওইদিন মামলা হয়নি। হত্যাকারীদেরই কেউ কেউ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে জিনে মেরেছে বলে প্রচার-প্রচারণা চালায়। এ প্রচারনায় বিভ্রান্ত হয়ে তাহেরা খাতুনের পিতা মামলা করতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন। অবশ্য গতকাল রাতে তিনি মামলা করলেও হত্যাকারীদের কারো নাম উল্লেখ করেননি।

টানাহেঁচড়ার দাগ ও হাতের কবজিসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কালসিরে পড়া দাগ দেখে অনেকেরই ধারণা তাহেরা খাতুন লম্পটদের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ধর্ষণ শেষে হত্যা করেও হত্যাকারীরা ছাড়েনি। হত্যার পরও লাশের ওপর চালিয়েছে পাশবিক নির্যাতন। স্থানীয়রা এ মন্তব্য করে বলেছে, রোমহর্ষক এ ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন বাড়িওয়ালা আব্দুল কাদেরের ছেলে বাচ্চু গাঢাকা দিয়েছে। সে এইচএসসির ছাত্র হলেও সম্প্রতি নেভিতে চাকরি পেয়েছে বলে জানা গেছে। বাচ্চুসহ স্থানীয় কয়েক কলেজ ছাত্রকে সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করে অনেকেই বলেছেন, ওদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে স্কুলছাত্রীকে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করার প্রতিবাদে ও জঘন্য হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে আলমডাঙ্গায় স্মরণকালের সবচে বড় মানববন্ধন কর্মসূচি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টায় আলমডাঙ্গা শহরের পুরো হাইরোড জুড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। তাহেরার নিজ স্কুল আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের আয়োজনে ওই মানববন্ধনে আরও অংশগ্রহণ করেন এম সবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এরশাদপুর একাডেমী, পাইকপাড়া জনকল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও হারদী এমএস জোহা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক। এছাড়া সকল পেশাজীবী মানুষ এ মানববন্ধনে যোগ দেন। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হারদী এমএস জোহা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ওমর ফারুক, সহকারী অধ্যাপক রোকনুজ্জামান ডাবলু, পাইকপাড়া জনকল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, থানা অফিসার ইনচার্জ মনির উদ্দীন মোল্লা, তাহেরার সহপাঠী সুমাইয়া আফরোজ নিশি, নাজমুস শামা নিশি, অন্তরা সেন, রুবাইয়া তাসনীন প্রমুখ। মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেয়া হয়েছে। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট পেশ করা হয়।