সৌদি আরবে গমনেচ্ছুদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য চুয়াডাঙ্গায় উপড়ে পড়া ভিড়

দীর্ঘলাইন হুড়োহুড়ি হট্টগোল : ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমেও অনলাইনে নিবন্ধন

 

স্টাফ রিপোর্টার: শুধু চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর বা ঝিনাইদহে নয়, দেশের প্রতিটি জেলায় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে উপচেপড়া ভিড়ে নাকানি-চুবানি খেতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। চুয়াডাঙ্গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে ক্ষোভের আগুনে ফুঁসলেও তেমন হট্টগোল অবশ্য হয়নি। তবে দেশর বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সৌদি আরব গমনেচ্ছুরা এবার ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে অনলাইনেও নিবন্ধন করতে পারবেন বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিগণ অফিস চলাকালীন সৌদি আরবসহ বিশ্বের যেকোনো দেশে গমনের জন্য বিএমইটির অধীনস্থ সকল জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এছাড়াও আগ্রহীরা বিএমইটির ওয়েবসাইটের (www.bmet.gov.bd) মাধ্যমেও অনলাইন নিবন্ধন করতে পারবেন বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এতে আরও বলা হয়, আগে যারা নিবন্ধন করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার তা করার প্রয়োজন নেই। নিবন্ধন করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করতেও নিরুৎসাহিত করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এতে আগ্রহীদের ধৈর্য ধরতে বলেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরের পাশেই সোনালালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখা। প্রথমে দেখে মনে হচ্ছিলো ক্রিকেট অথবা ফুটবল ম্যাচের টিকিট কেনার ভিড় লেগেছে ব্যাংকের সামনে। সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার সামনে সরকারি উদ্যোগে সৌদি আরবে গমনেচ্ছু শ্রমিকদের নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যাংক ড্রাফটের টাকা জমা দেয়ার মানুষের ভিড়। হরতাল-অবরোধের মধ্যেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভরদুপুর পর্যন্ত ব্যাংকের প্রধান গেট থেকে মানুষের সারি ছড়িয়ে পড়ে রাস্তার বেশ খানিকটা এলাকাজুড়ে। ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে। আর ব্যাংকের কর্মচারীদের বাড়তি চাপ সামলাতে নাকানি-চুবানি খেতে হয়। এ বিষয়ে কথা হয় চুয়াডাঙ্গা পীরপুর গ্রামের ২২/২৩ বছরের যুবক খোরশেদ আলীর সাথে। সকাল ৯টা থেকে ব্যাংকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। বেলা ১২টা বেজে গেলেও টাকা জমা দেয়ার সুযোগ না পেলেও হাল না ছেড়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বললেন, ‘মিয়াভাই, একুন এট্টুকু কষ্টই যদি পিরিশান (পেরেশান) হই যায়, থালি (তাহলে) সৌদিত্ যাতি পারলি কাজ করতি পাইরবো? ইডা কুনু ব্যাপার না’ (তৃপ্তি এবং আশা মেশানো হাসি দিয়ে)।

একই চিত্র জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে। সোনালী ব্যাংকে ১৫০ টাকার ব্যাংক ড্রাফটের পর (ব্যাংকের আদায় খরচসহ ১৭৩ টাকা) সেই রসিদ নিয়ে জমা দিতে হচ্ছে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে। তারপরই মিলছে আবেদনের সুযোগ। চুয়াডাঙ্গা জেলা জনশক্তি জরিপ কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানালেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি আরব গমনেচ্ছুদের নাম রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলবে। তবে প্রথম দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষের বিপুল সাড়া মিলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সৌদি আরবে গমনেচ্ছুদের নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যাংক ড্রাফটের টাকা জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখায়। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পেনশনের টাকা তুলতে আসা বৃদ্ধ নারী-পুরুষেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, পূর্ব পরিকল্পনা করে অথবা উপজেলা পর্যায়ে সৌদি আরব গমনেচ্ছুদের ব্যাংক ড্রাফটের টাকা আলাদা কোনো ইউনিট করে জমা নেয়ার ব্যবস্থা করা হলে সাধারণ মানুষের এ ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার আমির আব্বাস জানালেন, ব্যাংকে টাকা জমা দিতে আসা সৌদি আরবে গমনেচ্ছু শ্রমিকরা যাতে সকলেই নির্বিঘ্নে এবং সুশৃঙ্খলভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারে সে লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করছে।

১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি আরবে গমনেচ্ছুক প্রাথীরা তাদের নাম নিবন্ধনের জন্য আবেদন শুরু করেন। আবেদনের সাথে ১ কপি ছবি ও সোনালী ব্যাংক কর্তৃক ১৭৩ টাকা পে-অর্ডার জমা দিতে বলা হয়। সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক শওকত আলী বলেন, দীর্ঘ লাইনের কারণে টাকা জমাদানের বুথ বাড়িয়েছে। গত বুধবার প্রায় ১ হাজার প্রার্থী পের্ডার করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভিড় বেড়ে যায় কয়েক গুণ। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জয়রামপুরের শরিফুল, আকন্দবাড়িয়ার হাবিবুর রহমান, জুড়ানপুর-লক্ষ্মীপুরের আরিফুলসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা সকাল ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি এখন দুপুর ১টা বাজে। কখন যে ব্যাংকে ঢুকতে পারবো বলতে পারছি না। তারা ব্যাংক কর্মচারীদের ঢিলেমির কারণে বেগ পেতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।

সাত বছর ধরে চলে আসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে বছরে এক লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী নেয়ার চুক্তি করে সৌদি আরব। এরপর সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুকদের নিবন্ধন করতে বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসগুলোতে ভিড় করতে থাকেন বিদেশ গমনেচ্ছুরা, যার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি স্থানে হট্টগোলোর সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনেও ছিলো বিদেশ গমনেচ্ছুদের উপড়ে পড়া ভিড়। তা সামলাতে ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের হিমসিম খেতে দেখা যায়। এ সময় কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে বিদেশ গমনেচ্ছুদের বাগবিতণ্ডাও হয়, যা পরবর্তীতে হট্টগোলে রূপ নেয়।