সোনালী ব্যাংকে ফের ১৪২ কোটি টাকার অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার: আবার সোনালী ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। অস্থিত্বহীন প্রকল্প ও চুক্তিপত্র ছাড়াই বিদেশি নাগরিককে ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় থেকে প্রায় ১৪২ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের বাণিজ্যিক অডিটে এ দুর্নীতি ধরা পড়ে। অডিটে এ টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। এদিকে চলতি সপ্তায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, অপর্যাপ্ত প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ ইস্যু, জামানতবিহীন প্রকল্পে ঋণ প্রদান, অস্থিত্বহীন প্রকল্পে ঋণ, চুক্তিপত্র ছাড়াই বিদেশি নাগরিককে ঋণ, মঞ্জুরি শর্ত না মেনে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে এ টাকা তছরূপ করা হয়েছে। ব্যাংকের এক শ্রেণির কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে অডিট রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে। একই সাথে এসব ঘটনার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায় নির্ধারণ করে আইনি ব্যবস্থা এবং গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করে অর্থ আদায়ের সুপারিশ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট না নিয়ে একজন বিদেশি নাগরিকে ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় থেকে ৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। পরে জামানতবিহীন ওই প্রকল্পের নামে প্রদান করা ঋণের পুরো অর্থ বিদেশি ওই নাগরিক তুলে নিয়ে নেন। এরপর কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে পড়লে বিদেশি ওই নাগরিকও লাপাত্তা হয়ে যান। নিয়ম অনুযায়ী জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির ক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার সময় চুক্তিনামা অবশ্যই থাকতে হয়। কিন্তু ব্যাংক তা অনুসরণ করেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, কনসোর্টিয়াম লোন এগ্রিমেন্ট শর্ত অনুসরণ না করে একই শাখা থেকে ওয়ান গ্রুপ কোম্পানিকে ৬৩ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ব্যাংকের ওই শাখা। অডিট বিভাগ দেখতে পায় ওয়ান গ্রুপ বিপুল পরিমাণ ঋণ নিলেও জামানত খুবই অপ্রতুল। ফলে ব্যাংকের পুরো ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ বলে শনাক্ত করেছে অডিট বিভাগ। এ ব্যাপারে ওয়ান গ্রুপের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করে অর্থ উদ্ধার এবং অডিট বিভাগকে তা জানাতে বলা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অডিটে উল্লেখ করা হয়।

অডিট প্রতিবেদন অনুসারে স্থানীয় কার্যালয় আবার মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ১৩ কোটি টাকার একটি ঋণ পুনর্তফশিল করেছে। অবশ্য ওই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছিলো। ঋণ নেয়ার পর কোম্পানি পণ্য উত্পাদনে যেতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পের অধীনে জামানত নামমাত্র থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অর্থ আদায় করতে পারছে না।

প্রতিবেদনে অপর একটি ঘটনার ব্যাপারে বলা হয়েছে, একই শাখা থেকে অস্থিত্বহীন প্রকল্পের নামে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেসার্স প্রিটেক্স (প্রাইভেট) লিমিটেড। বর্তমান ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই অর্থ পাওয়া এবং আদায় করা পুরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া নীতিমালা ভেঙে ১৯ কোটি টাকা ঋণের সুদ মওকুফ করার ঘটনা ঘটেছে একই ব্যাংকে। পাশাপাশি ঋণের আসল টাকা সুদবিহীন ব্লকে স্থানান্তর করা হয়েছে। যেখানে ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা অনিয়ম করে প্রায় ৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি করেছেন।

অপরদিকে আরেকটি ঘটনায় নামমাত্র সহায়ক জামানতের বিপরীতে অনিয়মিতভাবে একটি প্রকল্পে ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়। পরে ওই প্রকল্পের অধীনে রফতানি করার ব্যর্থতায় ফোর্স লোন সৃষ্টি করা হয়। এছাড়া শ্রেণিকৃত পিএডি লোন হিসাবকে এলটিআর হিসাবে স্থানান্তর করে পুনঃতফসিল করার পরও প্রায় ৪ কোটি টাকা ঋণ আদায়ে ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকের এ টাকা ক্ষতি হয়।