সেমিতে আজ ব্রাজিল-জার্মানি যুদ্ধ

 

বিশ্বকাপ ফুটবল : পুনরাবৃত্তি না প্রতিশোধ

স্টাফ রিপোর্টার: জার্মানদেরচোখের সামনে এখনো হয়তো ভেসে ওঠে সেই দুঃসহ স্মৃতি। ২০০২ সালেরজাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল। রোনালদোর জোড়া গোলে স্বপ্ন ভেঙেখান খান তিন বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির। ব্রাজিল শিবিরে হলুদ ফুলেরআনন্দের বন্যা বইয়ে শিরোপা নিয়ে দেশে ফেরেন অধিনায়ক কাফু, রবার্তোকার্লোস, রোনালদো ও রিভালদোরা। জার্মানির অধিনায়ক অলিভার কান, ব্রেন্ডস্নেইডার ও মিরোস্লাভ ক্লোসারা ভেজা চোখে শুধু চেয়ে দেখেছিলেন ব্রাজিলেরজয়োত্সব। জাপানের ইয়োকোহামার আকাশ-বাতাস আজও যেন সাক্ষী হয়ে আছে সেদিনটির। কোনোভাবেই কি ভুলে যাওয়া যায় সেই দিনের কথা?

পরের দু আসরে (২০০৬, ২০১০) জার্মানিকে সেমিফাইনাল খেলেই থামতে হয়েছিলো। জার্মান তারকামিরোস্লাভ ক্লোসার হয়তো এসব টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে পড়ছে। আর ছকআঁকছেন কীভাবে এবার বধ করা যায় ব্রাজিলকে। আজ সেই সুযোগটা পাচ্ছেন তিনি।যে ভুল সেদিন তিনি করেছিলেন এবার হয়তো সেটা আর করবেন না।এদিকে, লুইস ফিলিপ স্কোলারিরও কিন্তু ভালো করে জার্মানদের জানা আছে। তিনিওকোনো সুযোগ দেবেন না। এই স্কোলারির তালিম নিয়েই সেবার জাপানে উত্সবকরেছিলো দ্যা সাম্বা কিংসরা। পরের দুই আসরে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল পারহতে না পারলেও এবারের ব্রাজিল যেন ভিন্ন ব্রাজিল।১৯৫০ সালেমারাকানার মাঠে উরুগুয়ের কাছে ব্রাজিলকে হারাতে হয়েছিলো শিরোপা। এবারনিজেদের দেশ থেকে কাপ অন্য কাউকে দিতে চায় না কালোমানিক পেলেরউত্তরসূরিরা। তার আগে জার্মান বাধা পেরুতে পারবেন স্কোলারি?এতে কোনোসন্দেহ নেই নেইমার আর থিয়েগো সিলভার অনুপস্থিতি দুঃশ্চিন্তায় আছেনস্কোলারি। মঙ্গলবার বেলোহরিজন্তেতে জার্মানির বিপক্ষে শুধু গুরুত্বপূর্ণএ ম্যাচেই নয়, পিঠে মারাত্মক চোটের কারণে ফাইনালও খেলতে পারবেন নানেইমার। দু হলুদ কার্ডের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাওসেমিফাইনালে খেলতে পারবেন না।নেইমারের জায়গাটা কে পূরণ করবেন সেটাভাবনার বিষয়। তার মতো কারিশমা দেখিয়ে লম্বা শট বা পাসে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ারমতো ফুটবলার দলে কমই আছেন। বাতাসে ভেসে আসা বলে হেড করে নো ম্যান্সল্যান্ডেনামিয়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে টেনে বলটাকে আবার নিজের কাছে নিয়েই গোল মুখেফেলার অসাধারণ দক্ষতা ব্রাজিলের লাইনআপে ক’জনার আছে?অসকার বা হাল্ককেমাঝমাঠে খেলাতে পারেন স্কোলারি। ফরোয়ার্ডে খেলতে পারেন ফার্নান্দিনহো, পলিনহো ও গুস্তাভো। অথবা জো আর ফ্রেড খেলতে পারেন একসাথে। বেঞ্চে থাকাউইলিয়ান বা বার্নার্ড জায়গাটি দখল করতে পারেন। তবে যেই আসুক না কেননেইমারের জায়গায় শক্তিশালী জার্মানির বিপক্ষে জয় পেতে ব্রাজিলকে খুব কষ্টকরতে হবে সেটা আগেই বলে দেয়া যায়। দলের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা অসকার মনেকরেন দলগতভাবেই জিততে হবে তাদের। বলেন, নেইমারকে মিস করবো। সে থাকলে দলেশক্তি কাজ করে। তবে আমরা হতাশ নই। তার জায়গায় যেই আসুক, প্রতিপক্ষকে হারাতেহলে তাকে দলের অংশ হয়েই খেলতে হবে।হাল্কের মতে, এটা ফাইনালের চেয়ে কমকিছু নয়। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।ডেভিড লুইস দিচ্ছেন এ ম্যাচকেক্লাসিকের মর্যাদা। স্কোলারি ম্যাচকে কঠিন হিসেবেই মানছেন। বলেন, দলের যেঅবস্থা, তাতে জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচ একটু কঠিনই হবে। আমাদের ম্যাচজেতানো খেলোয়াড়ও আছে।

জোয়াকিম লো’কে অপেক্ষাকৃত কমই ভাবতেহবে। পুরো শক্তির দলই মাঠে নামাতে পারবেন তিনি। ক্লোসা, পোডলস্কি, থমাসমুলার, খেদিরা অন্যান্য ম্যাচে যে ভাবে খেলেছেন এ ম্যাচে বাড়তি কিছু করারপরিকল্পনা মাথায় রেখেছেন তিনি। জার্মানরা জানে ব্রাজিলের ১০ নম্বর জার্সিরহালকা পাতলা ছিপছিপে শরীরের ক্ষীপ্রগতির নেইমার এখন নিশ্চল। তাই বলে অন্যরানেইমারের অনুপস্থিতিটাকে শক্তিতে পরিণত করে জেদ মেটাবেন না সেটা বলা যাবেনা।এবার নিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২০টি আসরে জার্মানি ১৪ বারসেমিফাইনাল খেলছে। ব্রাজিল এবার নিয়ে ১১ বার খেলছে। বিশ্বকাপে আজদ্বিতীয়বার মুখোমুখি হচ্ছে দু দল। এছাড়া দু দলের ২১ বার মুখোমুখিযুদ্ধে এগিয়ে ব্রাজিল। ১৮টি আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচ, ২টি কনফেডারেশন কাপ ওএকটি বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জয়ের পাল্লা ভারী। ব্রাজিল জিতেছে ১২ বার, আরজার্মানি ৪ বার। ৫ ম্যাচ ড্র।সর্বশেষ দেখা হয় ২০১১ সালের আগস্টেআন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচে। ওই ম্যাচে ৩-২ গোলের জয় আজ বেলেহরিজোন্তেরমাঠে বাড়তি প্রেরণা এনে দিতে পারে। কিন্তু এমন সুখস্মৃতি কী জার্মানিরপক্ষে থাকবে। খেলাটা তো ব্রাজিলের ঘাসে। যেখানে সাড়ে ৬২ হাজার দর্শকেরসামনে ইউরোপ-ল্যাতিন আমেরিকার ফুটবলের লড়াই হবে।

দু দলই গ্রুপচ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে ওঠে। গ্রুপ পর্বে স্বাগতিকরা ক্রোয়েশিয়াকে৩-১, মেক্সিকোর সাথে গোলশূন্য, ক্যামেরুনকে ৪-১ গোলে হারায়। দ্বিতীয়রাউন্ডে চিলির বিপক্ষে জিততে গিয়ে দম আটকে যাচ্ছিলো নেইমারদের। ১-১ গোলেড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে জয়। কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষেএসেছে কষ্টার্জিত জয়, ২-১। আর জার্মানি ৪-০ গোলে পর্তুগালকে, ১-০ গোলেযুক্তরাষ্ট্রকে হারায় ও ঘানার সাথে ২-২ গোলে ড্র করে শেষ ষোলতে আসে।আলজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে, কোয়ার্টার ফাইনালে ১-০ গোলে পতন ঘটায় ফরাসিদুর্গের। সেদিক থেকে মানসিকভাবে একটু এগিয়ে থাকবে জোয়াকিম লো’রশিষ্যরাই।

ফিফা ৱ্যাকিঙে স্বাগতিকদের এক ধাপ ওপরে জার্মানি (২)।ব্রাজিলের নম্বর তিন। তবে ৱ্যাকিঙের আগে-পরে বা ছোট-বড় দল বলে কিছু নেইএবার বিশ্বকাপে। নানা ঝলক আর উত্তাপ দেখা গেছে বেশিরভাগ ম্যাচে। উত্সবের রঙবাহারি, এটা ঠিক। তবে তা আপেক্ষিক। কখনো হলুদ, কখনো নীল, শাদা, লাল। তবেএ উত্সব কোন রং ধারণ করবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে। কে জানেশেষ পর্যন্ত কি হয় জার্মানদের প্রতিশোধ?না ব্রাজিলের ইতিহাসেরপুনরাবৃত্তি?