সেই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে মেহেরপুরে সাংবাদিক সম্মেলন : শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে টালবাহানার প্রতিবাদ ও শিক্ষকের শাস্তি দাবিতে মেহেরপুরে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপ কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের বিষয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যেতে চাচ্ছে না। যৌন নির্যাতনের বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কয়েক দফা তদন্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। তবে এখনো কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে সময় পার করছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুল প্রায় তিন বছর ধরে কর্মরত। বিদ্যালয় ছুটির পর কোচিংয়ের ফাঁকে কম্পিউটর কক্ষে ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন। সম্প্রতি চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির দু’ছাত্রী বিদ্যালয় ত্যাগ করলে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। ভুক্তভোগীরা লজ্জায় মুখ খোলেনি। তবে স্থানীয়দের তীব্র প্রতিবাদ ও দাবির প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে অভিভাবক ও ছাত্রীরা মুখ খুলতে থাকে। খবর পেয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পালের নির্দেশে গত ২০ মার্চ দু’জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সরজমিন তদন্ত করেন। তদন্তে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন তারা। তদন্তের সময় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সরজমিন তদন্তে ঘটনার সত্যতা উঠে আসায় ২১ মার্চ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে যৌন নিপীড়নের ঘটনার সংবাদ প্রকাশ হয়। তারপর থেকেই অদ্যাবধি নানা প্রকার তদন্তের অজুহাতে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল বলেন, দু’জন সহকারী শিক্ষা অফিসার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্ত করেছেন। কিন্তু তারা আমার কাছে কোনো প্রতিবেদন দেননি। প্রতিবেদন জমা দিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুলের এক আত্মীয়ের সঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক উদ্দীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তার মাধ্যমে ফারুক উদ্দীন ও জেলা শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ২৬ মার্চ সারাদেশের ন্যায় গাংনী উপজেলার মানুষ যখন মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় জেলা শিক্ষা অফিসার জেসের আলী ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফারুক উদ্দীন নওপাড়া গ্রামে ঘটনার তদন্ত করতে গিয়েছিলেন। শিক্ষা অফিসারদের সাজানো তদন্তের জন্য সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বকুল পক্ষের লোকজন। ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার পিতা-মাতার জবানবন্দি না নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের কাছে অভিযোগের বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন। তদন্ত নাটক চলছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগী পরিবার পক্ষের লোকজন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ করেন। এতে চরম বাকবিত-া শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল থেকে এক প্রকার পালিয়ে আসেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রী যৌন নিপীড়নের ঘটনায় যখন এলাকায় তোলপাড় চলছে ঠিক সেই সময় শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিতর্কিত ভূমিকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে কেন গড়িমসি তা নিয়ে এলাকায় বিরাজ করছে নানা গুঞ্জন।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক উদ্দীন বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাফিজুর রহমান বকুলকে নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বদলি করে অন্যত্র পোস্টিং দেয়া হয়েছে। আরও তদন্ত কমিটি হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।