সুসংগঠিত দল সরকারের জন্য বিরাট শক্তি : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক অত্যাচারেও আওয়ামী লীগকে থামানো যায়নি। বহু ত্যাগের বিনিময়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলকে টিকিয়ে রেখেছেন। আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী সংগঠন দাবি করে তিনি বলেন, একটা সরকার সফলভাবে কাজ করতে পারবে তখনই, যখন দল সুসংগঠিত থাকে। কারণ সুসংগঠিত দল সরকারের জন্য বিরাট শক্তি।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে দলের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতে শেখ হাসিনা প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথা স্মরণ করেন। এ যৌথসভা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়। কিছুক্ষণ চলার পর সভা আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, এ মুলতবি সভা শনিবার (আজ) সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
বক্তব্যের শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, এই (সুসংগঠিত) শক্তিটাই সব থেকে বেশি কাজে লাগে একটা দেশকে উন্নত করতে। যেটা আমি নিজে উপলব্ধি করি। সে কারণে আমি সবসময় সংগঠনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই।
তিনি বলেন, এতো বড় একটা দলের দায়িত্বভার নেব, সেটা কখনও চিন্তায়ও ছিলো না, করিও নাই। তাছাড়া যেহেতু আব্বা রাজনীতি করেন, আমরা সব সময় ছিলাম সক্রিয়। একেকটা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি। কখনও এই আশা বা এই চিন্তাও মাথায় আসেনি যে কোনো কিছু হতে হবে, পেতে হবে, বা কিছু করতে হবে। সেটা ছিল না। কাজ করতে হবে এটুকু জানতাম।
আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমে দলকে সুসংগঠিত করার কাজে হাত দিয়েছিলেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেদের জীবন পণ করেই তারা এ সংগঠনকে ধরে রেখেছে। সব বাধা পেরিয়ে এসে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এখন একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে দলীয় প্রধান বলেন, এ দেশে রাজনীতি কেউ যদি শিখিয়ে থাকে, সেটা আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে করে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্যটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিলো আওয়ামী লীগকে ‘শেষ করে দেয়া,’ যেন এ সংগঠন আর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে না পারে।
’৭৫-এর পর আমরা দেখেছি বাংলাদেশে ১৯টা ক্যু হয়েছে। সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের কারাগারে রাখা হয়েছে এবং এখনও অনেকের শরীরে সেই অত্যাচারের চিহ্ন রয়েছে। কত মানুষকে গুম-খুন করেছে, এই অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্য দিয়েও কিন্তু আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে পারেনি। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর দলের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানো হয়েছিলো জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দুর্ভাগ্যবশত সেটাকে ওইভাবে প্রতিবাদ করা যায়নি। কারণ তখন একটামাত্র টেলিভিশন, সব সরকারি পত্রিকা এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় এই অপপ্রচারগুলো এমনভাবে প্রচার করা হতো যে আমাদের সেটা মোকাবেলা করা একটা কঠিন কাজ ছিলো।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিকূল অবস্থার মধ্যদিয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সঠিক ইতিহাস সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগের বিনিমময়ে এই সংগঠনটা ধরে রেখেছে। এটা করতে গিয়ে বহু পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে, কত যে নির্যাতনের ইতিহাস, সেটা হয়তো হিসাব করে বলা যাবে না।
২০০৯ সালে আবার সরকারে আসার পর ১১ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন অন্তত এইটুকু বলতে পারি, মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস, সমর্থন আমরা পেয়েছি, আজ বাংলাদেশের মানুষ জানে, একমাত্র আওয়ামী লীগ থাকলে উন্নয়ন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় যারা বলেছিল, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কী হবে, বটমলেস বাস্কেট হবে’ আজ তারা সে কথা বলতে পারবে না। বরং আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে, যেটা মূলত আমার লক্ষ্য ছিলো। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরা এবং নেতাকর্মী ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন পাওয়ার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে শুনেছি- আওয়ামী লীগ নেতারা স্মার্ট না, মডার্ন না। আওয়ামী লীগ আধুনিক না। আওয়ামী লীগ এটা না, সেটা না, আওয়ামী লীগ এটা পারবে না। আওয়ামী লীগে শিক্ষিত লোক নেই ইত্যাদি অনেক কথা শুনতে হতো তখন। অনেক অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেয়া হতো।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা নিজেদের স্মার্ট বলে ক্ষমতায় এসেছে, তারা ক্ষমতায় আসত শুধু লুটপাট করতে, মানি লন্ডারিং করতে, দুর্নীতি করতে, তাদের স্মার্টনেসটা ছিলো নিজেদের অর্থনৈতিক শক্তিকে বাড়ানো, নিজেদের তৈরি করা। দেশের মানুষ কিন্তু এই স্মার্টদের কাছ থেকে কিছু পায়নি।
স্মার্টনেস দেখাতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন দেখিয়েছে যে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে আওয়ামী লীগই পারে, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন- সেটা আওয়ামী লীগই পারে। ১৯৭৫ সালের পর যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে, তারা ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করত না’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলো।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখানে আমাদের উদ্দেশ্যটা কী? যেহেতু ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না, সেটা প্রমাণ করা। সেটা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। ব্যাপকভাবে মুজিববর্ষ উদ্যাপন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকে আমরা কাউন্টডাউন শুরু করে ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ উদ্যাপন শুরু করবো। বছরব্যাপী সারা দেশে অনুষ্ঠান করবো।
‘মুজিববর্ষ’কে সামনে রেখে নবোদ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আমরা আবার নবোদ্যমে জাতির পিতার দেয়া এই বাংলাদেশকে আরও উন্নত করব, স্বাধীনতাকে আমরা আরও অর্থবহ করবো, যেন বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে। এখন যে মর্যাদা পেয়েছে এর চেয়ে আরও বেশি মর্যাদা নিয়ে আরও উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন গড়ে উঠতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাবো।
যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।