সুনামগঞ্জে নিখোঁজ প্রবাসী বিএনপি নেতা মুজিব টঙ্গী থেকে উদ্ধার

 

স্টাফ রিপোর্টার:নিখোঁজের সাড়ে তিন মাস পর যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতামুজিবুর রহমান মুজিবকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকালসোমবার রাত ৯টার দিকে কে বা কারাতাকে রাজধানীর টঙ্গীর একটি ব্রিজের নিচে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। তার শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ারহোসেন এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।মুজিবের গাড়িচালক রেজাউল করিম সোহেলও জীবিত আছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

সুনামগঞ্জেরপুলিশ সুপার হারুনুর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মুজিব আমাদেরতত্ত্বাবধানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। যুক্তরাজ্য বিএনপিরউপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যপ্রবাসী মুজিবুর রহমান ও তার গাড়িচালক মো.  রেজাউল করিম সোহেল গত ৪ মেসুনামগঞ্জ থেকে সিলেট ফেরার পথে নিখোঁজ হন। মুজিব যুক্তরাজ্য যুবদলেরপ্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকছিলেন। মুজিবুরের সন্ধান দাবিতে সিলেটে হরতাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়সিলেট ও সুনামগঞ্জে। প্রবাসী এ নেতা নিখোঁজ হওয়ার পর বৃটেন দূতাবাসেরপ্রতিনিধিও ঘটনা তদন্তে সিলেট ও সুনামগঞ্জ পরিদর্শন করে। মুজিবুর রহমাননিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। দেশব্যাপিগুম-হত্যার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে দলীয় কর্মসূচি শেষে সিলেটে ফেরার পথেনিজের গাড়িচালকসহ নিখোঁজ হন তিনি।

যেভাবে নিখোঁজ হন মুজিব: যুক্তরাজ্যযুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক মুজিবুররহমান মুজিব। ৪ মে বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরের বাসা থেকে সিলেটের উদ্দেশেরওনা দিয়েছিলেন। এরপর থেকে তাদের মোবাইলফোন বন্ধ পায় পরিবার। আর জিডির পরতার স্বজনরা জানিয়েছেন, মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করা হয়েছে। মুজিবুর রহমানমুজিব লন্ডনে আবাসন ব্যবসায়ী হওয়ায় তিনি বিপুল ধন-সম্পদের মালিক। ইলিয়াসমুক্তি সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত। মুজিব এ কারণে গত দুবছরসিলেট ও সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরব রয়েছেন। সিলেট বিএনপি নেতাএডভোকেট শামসুজ্জামান জামানের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা হিসেবে সিলেটের সকলআন্দোলন কর্মসূচিতে তৎপর তিনি। অপহরণের পর সুনামগঞ্জ সদর থানায় মুজিবুররহমান মুজিবের ভাগ্নিজামাই, আবদুল মজিদ কলেজের অধ্যক্ষ, রজিউল ইসলাম থানায়জিডি করেন। রবিউল ইসলাম জিডিতে উল্লেখ করেন, ৪ মে বিকালে বিএনপি নেতামুজিবুর রহমান মুজিব সুনামগঞ্জ থেকে নিজের প্রাইভেট কারযোগে সিলেটেরউদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু ওই দিন রাত ৮টা থেকে তার ও ড্রাইভারের মোবাইল ফোনবন্ধ রয়েছে। এ কারণে তিনি নিখোঁজ মুজিবুর রহমান মুজিবের সন্ধান দিতেপুলিশের সহায়তা কামনা করেন। মুজিবুর রহমান মুজিব দীর্ঘ ৪০ বছর ধরেযুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। তিনি যুক্তরাজ্য যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিরদায়িত্ব পালন করেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিএনপিররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। লন্ডনের আবাসন ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান প্রায়দুবছর আগে লন্ডন থেকে সিলেটে আসেন। সিলেটের শামীমাবাদ আসাসিক এলাকার মুজিবভিলা নামে তার রয়েছে একটি বাসা। আর সুনামগঞ্জে রয়েছে তার পৈতৃক বাড়ি। এজন্য তিনি সিলেট ও সুনাগঞ্জে বসবাস করতেন। মুজিবুর রহমান মুজিবের বেয়াই ওসিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আলহাজ শেখ মকন মিয়া গতকাল জানান, মুজিবুর রহমান মুজিব কয়েক দিন ধরে সুনামগঞ্জে অবস্থান করছিলেন।সুনামগঞ্জের হাজীপাড়া এলাকায় তার পৈতৃক বাড়িতেই বসবাস করতেন। অপহরণের দিনসুনামগঞ্জ শহরে বিএনপি আয়োজিত একটি অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এরপরবিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাসায় আসেন। দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেল ৪টারদিকে ড্রাইভাব সোহেলকে নিয়ে প্রাইভেট কারযোগে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন।এদিন রাত ৮টার দিকে বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমানের ভাইপো আবুল হোসেন চাচারকোনো ফোন না পেয়ে ড্রাইভার সোহেলের মোবাইলফোনে কল দেন। ড্রাইভারের মোবাইলটিফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরক্ষণেই তিনি চাচা মুজিবুর রহমানের মোবাইলফোনে কলদেন। সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি রাত ১২টা পর্যন্ত মোবাইলফোনে না পেয়েঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সোমবার সকালে উঠে আবুল হোসেন চাচা মুজিবুর রহমানেরমোবাইল ফোনে কল করেন। কিন্তু মুজিবুর রহমানের মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।এতে বিচলিত হয়ে পড়েন আবুল হোসেন। তিনি সুনামগঞ্জের পরিবারের সদস্যদের কাছেবিষয়টি জানান। পর দিন দিনভর সুনামগঞ্জ, সিলেট ও ঢাকার সম্ভাব্য সকল স্থানেখোঁজাখুঁজি করা হয়। কিন্তু মুজিবুর রহমানের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।