সুদিন ফিরছে সোনালী আঁশের : মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার

উৎপাদন, বহুমুখী ব্যবহার এবং রফতানি বাড়ছে : বিশ্ববাজারেও বাড়ছে চাহিদা

স্টাফ রিপোর্টার: সোনালি আঁশখ্যাত দেশের পাটের আবারও সুদিন ফিরছে। ঐতিহ্যবাহী এ পণ্যটির উৎপাদন, বহুমুখী ব্যবহার ও রফতানি তিনটিই বাড়ছে। একইভাবে নতুন করে বিশ্বব্যাপী পণ্যটি চাহিদাও তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পাটের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া জরুরি। আর সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এ পণ্যটিকে ঘিরে তাদের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে পাটপণ্যের ওপর নগদ সহায়তা বাড়ানোর। এক দশক পরে তৈরি হচ্ছে পাটনীতিও। পাশাপাশি সংস্কারের আওতায় আসছে জুটমিল কর্পোরেশন। সবকিছু মিলে সুদিনের অপেক্ষায় দেশের পাট শিল্প।

এ ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ পাট খাতের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে পাট খাতের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পাটপণ্যের বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আগামী ৬-৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাটপণ্যের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করবেন। মেলায় ২৩৫ রকমের বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

পাটের জন্ম রহস্য আবিষ্কার করে বিশ্বে অবস্থান করে নেয় বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। এরপরই পণ্যটিকে নিয়ে চলে নানা পরিকল্পনা। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হল জন্ম রহস্য আবিষ্কারের ফলে জীবাণু প্রতিরোধক পাট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি দেশি পাট দিয়ে বস্ত্রশিল্পের উপযোগী সুতা উৎপাদন করাও সম্ভব হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে সুফল পাওয়া যাবে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে পাটপণ্যের রফতারি লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ডলার। কিন্তু রফতানি হয়েছে ৪১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। এ হিসাবের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পণ্যটির রফতানি আয় প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে দেশের পাট পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ১১টি পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।

জানা গেছে, দেশে মোট কাঁচাপাটের উৎপাদনের পরিমাণ হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বেল। অভ্যন্তরীণ চাহিদা হচ্ছে ৬৩ লাখ বেল। যা মোট উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ। পাশাপাশি বিদেশে কাঁচাপাট রফতানি হচ্ছে বছরে ১২ লাখ বেল। অবশিষ্ট ৭ থেকে ১০ লাখ বেল ব্যবহার হচ্ছে গৃহস্থালির কাজে।

সূত্র মতে, বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে চীনের দখলে অধিকাংশ বাজার থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান আছে ছোট আকারে। তবে ২০১৮ সালের মধ্যেই ইউরোপের বাজারে সিনথেটিক পণ্য নিষিদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বাড়ছে বায়োডাইবারফিকেশন ব্যাগ ও পণ্যের চাহিদা। যা বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এছাড়া মরসুমে কৃষকদের কাছ থেকে কাঁচাপাট কেনার জন্য ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। সূত্র মতে, পাটখাতে এখন বেশ সাড়া মিলেছে। এজন্য প্রায় একদশক পরে নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এ নীতিতে বন্ধ হওয়া সরকারি পাটকলগুলো ক্রমান্বয়ে চালুর ব্যবস্থা করা হবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যেই তা করা হচ্ছে। সেখানে আরও উল্লেখ্য করা হয়, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার এবং পাট পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। পাট বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনায় বিএডিসির সক্ষমতা বাড়ানো, পাটচাষীদের অর্থ সংকট লাঘবে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, বিক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাটচাষীরা অর্থ পেয়ে যান- এসব বিষয় খসড়া পাটনীতিতে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, জন্ম রহস্য আবিষ্কার হওয়ায় পাটের সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। বিশ্ববাজারেও পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে। ফলে এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এ খাতে বিনিয়োগ জরুরি। তিনি বলেন, এ খাতে গবেষণা আরও বাড়াতে হবে।

বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, আইভরি কোস্ট, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, জার্মানি, স্পেন, ইংল্যান্ড, মিসর, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কাঁচাপাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।