সুচিত্রা সেনের মৃত্যুতে পাবনায় শোকের ছায়া

স্টাফ রিপোর্টার: পাবনার মেয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন বা রমাদির মৃত্যুতে তার জন্মস্থান পাবনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যু সংবাদের পর তাৎক্ষণিক সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ পাবনা প্রেসক্লাব চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সভায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। সন্ধ্যায় পাবনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় শোকসভা। শুক্রবার সারা দিন পাবনায় আলোচনার বিষয়ই ছিলো সুচিত্রা সেন। সুচিত্রা সেনকে নিয়ে পাবনাবাসীর আবেগ এবং গর্বেরও শেষ নেই। কাজেই তাদের প্রিয় নায়িকার মৃত্যুর খবরে মর্মাহত হয় সর্বস্তরের মানুষ। শহরের গোপালপুরের হেমসাগর লেনে অবস্থিত রমাদিদের অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত বাড়িটি পাবনাবাসীর কাছে দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রিয় নায়িকাকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে পাবনাবাসী বাড়িটি দখলমুক্ত করার দাবির পাশাপাশি কয়েক বছর থেকে আয়োজন করে আসছে সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসব। এখন সূচিত্রা ভক্তরা বলছেন, জীবিত অবস্থায় সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি উদ্ধার হলো না। এ আফসোস তাদের কোনো দিন মন থেকে মুছবে না।

সুচিত্রার ডাক নাম রমা। তিনি ১ম থেকে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন পাবনা মহাকালী পাঠশালায় (বর্তমানে পাবনা টাউন গার্লস হাইস্কুল) এবং পরে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হন পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে (বর্তমানে যেটি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়)। ১০ম শ্রেণিতে পড়াকালীন রমাদি বিয়ে করেন এবং এ সূত্রে ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়েদুর রহমান জানান, সুচিত্রা সেন যে স্কুলে পড়তেন সেই স্কুলে চাকরি করে তিনি গর্বিত। তার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে স্কুলে কয়েক জায়গায় তার মুরাল স্থাপন করা হবে। বাবা করুণাময় এবং মা ইন্দিরার সন্তান ছিলো ৮। প্রথম ২ জন ছেলে। নিতাই এবং গৌর। এরপর ৬ মেয়ে উমা, ঊষা, রমা, মীনা, লীনা এবং রুনা। বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা যা-ই বলা হোক, সুচিত্রা সেনের বড় পরিচয় তিনি বাংলাদেশের মেয়ে। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা পাবনায়। একদিন তার পরিবার ভারতে চলে গেলেও, এই বাড়িটিই যেন তার স্থায়ী ঠিকানা হয়ে থাকে পাবনাবাসীর কাছে। পাবনার এ বাড়িতে রমাদির শৈশব ও কৈশরের অনেকটা সময় কেটেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রমাদি বা সুচিত্রা সেন পাবনাকে এবং তার বাড়িটিকে মনে রেখেছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কয়েক জন বাঙালিকে রমাদি বলেছিলেন পাবনায় তার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তিনি পাবনায় আসবেন। কেউ কেউ বলেন এবং পত্র-পত্রিকায় খবরও বেরিয়েছে যে, তার শেষকৃত্য পাবনায় করার জন্য তার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু সেটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের আগেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। পাবনা জেলা পরিষদ প্রশাসক ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি এম সাইদুল হক চুন্নু, সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার রামদুলাল ভৌমিক জানান, আগামী এপ্রিলে সুচিত্রা সেনের স্মরণে চলচ্চিত্র উৎসব করা হবে।

সুচিত্রার বান্ধবীর বোন আরতির স্মৃতিচারণ: পাবনা শহরের আবদুল হামিদ সড়ক ঘেঁষে অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির উত্তর-পূর্বে গায়ত্রী গুহদের বাড়ি। গায়ত্রী রমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। তারা পড়তো একসাথে এবং দিনের অনেক সময় তারা একসাথেই খেলাধুলা, সিনেমা দেখা, বেড়ানো, আড্ডা একসাথেই চলতো। আরতির বা আশার এখন বয়স ৭৫-৭৬। ছোটবেলার সুচিত্রা সেন বা রমা বা কৃঞ্চা আর নিজের বড় বোনের (দিদির) সব কথা বা স্মৃতি স্পষ্ট তার মনে আছে। আশা জানান, রমাদি প্রায়ই এসে দিদির সাথে অরোরা টকিজে (বর্তমানে বানী সিনেমা) সিনেমা দেখতো। নতুন ছবি মুক্তি পেলে তারা দেখবেই। আমাকে বাদাম খাওয়ার পয়সা দিয়ে বলত যা সিনেমার টিকিট কেটে নিয়ে আয়। বাড়ির পাশে সিনেমা হল হওয়ায় অনায়াসে আমি অরোরায় গিয়ে টিকিট কেটে আনতাম। রমাদি যখন-তখন আমাদের বাড়িতে এসে মার কাছে বলত কাকী মা এটা খাবো-ওটা খাবো … ইত্যাদি। আশা জানান, ছোটবেলা থেকেই রমাদির কবিতা আবৃত্তি, গান ও অভিনয় ইত্যাদির ওপর খুব ঝোঁক ছিল। বিয়ের পর পর বর নিয়ে বেড়াতে আসেন আমাদের বাড়িতে। এরপর আর দেখা হয়নি। তবে মুম্বাই থেকে দিদি (গায়ত্রী) ’৯৬ কি ’৯৭ সালে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে দিদির গলা জড়িয়ে ধরে অনেক কথা এবং আলাপ করেন রমাদি- একথা দিদি আমাকে বলেছেন। এভাবে পাবনার অনেক মানুষ রমাদির মৃত্যুর পর নানাভাবে স্মৃতিচারণ করছেন। কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছেন পৈত্রিক বাড়ির সামনে।

পাবনায় শোক সভা অনুষ্ঠিত: পাবনার মেয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন বা রমাদির মৃত্যুতে তার জন্মস্থান পাবনায় সর্বস্তরের মানুষ শোক জানিয়েছেন। শুক্রবার রাতে পাবনা প্রেস ক্লাব অডিটরিয়ামে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় শোক সভা। শোক সভায় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। সভায় বক্তারা বলেন, সুচিত্রা সেন একটি অধ্যায় একটি ইতিহাস। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে সুস্থ ধারাসহ পাবনাকে তথা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছেন। তার চলে যাওয়ার ক্ষতি কখনও পূরণ হবে না। পাবনা জেলা পরিষদ প্রশাসক ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি এম সাইদুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে শোক সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিস্ট রণেশ মৈত্র, আনোয়ারুল হক, পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রফেসর