সিরাজগঞ্জকে ৬-১ গোলে হারিয়ে স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গা চ্যাম্পিয়ন

পর্দা নামলো ১৬ দল নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের

স্টাফ রিপোর্টার: দর্শকের উপচে পড়া ভিড় আর স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গার গোল উৎসবে শিরোপা ঘরে রেখে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যদিয়ে ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ১৬টি জেলা দল নিয়ে ২১ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ১৫টি ম্যাচ হওয়ার মাধ্যমে পর্দা নামলো চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০১৭’র। ফাইনালে চুয়াডাঙ্গা ৬-১ গোলে সিরাজগঞ্জ জেলা দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন সরোয়ার হোসেন মধু ও মাহাবুল ইসলাম সেলিমের শিষ্যরা।
গতকাল শুক্রবার ছিলো ছুটির দিন। ছুটির দিনে জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জ জেলা দলের ফাইনাল খেলা উপভোগ করার জন্য চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামের সব গ্যালারি বেলা ১টার মধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দর্শকের চাপ সামলিয়ে সকলের জন্য খেলা উপভোগ্য করে তোলার জন্য নিয়োজিত ৫ স্তরের নিরাপত্তাকর্মীরা যখন সতর্ক অবস্থানে ঠিক তখন মাঠে প্রবেশ করলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। বেলা পৌনে ৩টায় শুরু হলো জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের থিম সং। থিম সঙের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করলো চুয়াডাঙ্গা সরকারি শিশু-সদনের মেয়েরা। একদিকে যখন থিম সং চলছিলো সে সময় হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন দর্শক ভর্তি গ্যালারির চতুর্দিকে ঘুরে ঘুরে হাত নাড়িয়ে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। থিম সং শেষে বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের দু ফাইনালিস্ট স্বাগতিক চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জ জেলা দলের খেলোয়াড়রা ক্ষুদে ফুটবলারদের সাথে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তৎকালীন চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক যুগের ও বেশি সময় ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ মাঠে প্রবেশ করেন। দু-দলের খেলোয়াড় কর্মকর্তা, খেলার পরিচালকদের মাঝখানে দু-অতিথি উপস্থিত হওয়া মাত্রই শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। হাজার হাজার দর্শক গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে গাইলেন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায়……ভালোবাসি। জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার সাথে সাথে দর্শকের হাজারো করতালিতে মুখরিত হলো স্টেডিয়াম এরিয়া। ক্ষুদে ফুটবলাররা সারিবদ্ধভাবে মাঠ ত্যাগ করলে দু-অতিথি হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার ও জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ দু দলের খেলোয়াড় কর্মকর্তাদের সাথে করমর্দন ও কুশল বিনিময় শেষে মাঠ ত্যাগ করেন। ঘড়ির কাঁটায় যখন ঠিক ৩টা বেজে ১৫ মিনিট তখন প্রধান রেফারি জালাল উদ্দিন লম্বা বাঁশি বাজিয়ে শুরু করেন উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল খেলা। শুরু হয়ে যায় দু দলের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ। বল নিয়ে দু দলের খেলোয়াড়রা চষে বেড়াতে থাকে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। প্রথম অর্ধের খেলা যখন ৪ মিনিট গড়িয়ে ৫ মিনিটে পদার্পণ করেছে ঠিক তখনই চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের নাইজেরিয়ান রাইট উইংগার ইসমাইল বাংগুরার হাওয়ায় ভাসানো বলে মাথা বাঁধিয়ে চমৎকার হেডিংয়ের মাধ্যমে দর্শনীয় গোল করে বসেন অপর বিদেশি স্ট্রাইকার দাওদা। ব্যবধান দাঁড়ায় চুয়াডাঙ্গা-১ ও সিরাজগঞ্জ শূন্য। এ সময় গ্যালারিতে বইয়ে চলে আনন্দের ফোয়ারা আর হাস্যোজ্জ¦ল করতালি। এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলাদল গোল পরিশোধের জন্য হয়ে ওঠে মরিয়া। খেলার ১৮ মিনিটে সিরাজগঞ্জ জেলা দলের একটি ঢিলেঢালা আক্রমণকে রুখতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় বিপ্পার শরীরে ভর স্পর্শ করলে চুয়াডাঙ্গা গোলরক্ষক জিয়ো পড়ে যান বিপাকে। গোলরক্ষকের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা সিরাজগঞ্জ জেলা দলের খেলোয়াড় পিয়ারের গোড়ালিতে লেগে বল জড়িয়ে যায় চুয়াডাঙ্গার জালে। ১-১ গোলে সমতায় ফেরে সিরাজগঞ্জ জেলাদল। এরপর আর চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের গোলরক্ষক (ঢাকার শেখ রাসেল ফুটবল দলের গোলরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী) জিয়োকে গোল হজম করতে হয়নি। চুয়াডাঙ্গার পক্ষে খেলার ২২ মিনিটে আবার দাওদা, ২৯ মিনিটে দলনায়ক সোহেল, ৩৫ মিনিটে আবারও দাওদা, ৬০ মিনিটে ইসমাইল বাংগুরা ও ৭৯ মনিটে দাওদা গোল দিয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করার পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার মালিক হন ৪টি গোল করে। এক ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ একাই ৪টি গোল করে সেরা খেলোয়াড় বাছাই কমিটির সদস্য কৃতী ফুটবলার মাহমুদুল হক লিটন ও গিয়াস উদ্দীন পিনার দৃষ্টি কেড়ে ফাইনালে ম্যাচ সেরার গৌরব অর্জনও করেন দাওদা।
ফাইনাল খেলা শেষে জমকালো আয়োজনে ও আতশবাজির বর্ণিল আলোকছটার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের হাতে ট্রফি ও প্রাইজ মানি তুলে দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি।
শুধু চ্যাম্পিয়ন রানার আপ দল, ম্যাচ সেরা ও টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার দিয়েই আয়োজন শেষ হয়নি। এদের পাশাপাশি দুজন-কৃতী ফুটবল সংগঠক মরুহুম হায়দার আলী জোয়ার্দ্দার, রফাতুল্লাহ প-িত ও ৪ জন কৃতী ফুটবল খেলোয়াড় মতিয়ার রহমান মল্লিক, আব্দুল মোমেন জোয়ার্দ্দার, মাহমুদুল হক লিটন ও মামুন জোয়ার্দ্দারকে বিশেষ পুরস্কার স্বরূপ সম্মানা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। মরহুম হায়দার আলী জোর্য়াদ্দারের পক্ষে তার নাতি চুয়াডাঙ্গা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহফুজুর রহমান জোয়ার্দ্দার মিজাইল, রফাতুল্লাহ প-িত সাহেবের পক্ষে তার ছেলে রফিকুল ইসলাম লাড্ডু, মরহুম মতিয়ার রহমান মল্লিকের পক্ষে তার পুত্র ফজলুর রহমান মালিক, আব্দুল মোমেন জোয়ার্দ্দারের পক্ষে তার ছেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক, কৃতী ফুটবলার মাহমুদুল হক লিটন নিজে ও মামুন জোর্য়াদ্দারের পক্ষে তার ভাই চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি এ নাসির জোয়ার্দ্দার সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করেন। ফাইনাল ম্যাচ সেরা দাওদাকে মিনিস্টার ফ্রিজের সৌজন্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আব্দুল লতিফ খান যুবরাজ ১৭ ইঞ্চি এলইডি টিভি পুরস্কার প্রদান করেন। টুর্নামেন্ট সেরা চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের মনডেকে কৃতী গোলরক্ষক আব্দুল মোমেন জোয়ার্দ্দারের পিতা মরহুম সিরাজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার স্মরণে পুরস্কার প্রদান করেন মরহুমের ছেলে বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। রানারআপ সিরাজগঞ্জ জেলা দলকে ট্রফি ও ৫০ হাজার টাকার প্রাইজমানি প্রদান করা হয়। চ্যাম্পিয়ন চুয়াডাঙ্গা জেলা দলকে ১ লাখ টাকার প্রাইজমানি প্রদান করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ এবং চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের অতিথি হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। এছাড়া অন্যান্য পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- ৬ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল রাশেদুল আলম, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, সিরাজগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সৈয়দ ইরতিজা হাসান ও চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারসহ পৃষ্ঠাপোষকতায় থাকা অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও চুয়াডাঙ্গায় ফুটবল অঙ্গনে সুবাতাস বইতে চলেছে। জেলা প্রশাসককে উদ্দেশে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় লোকাল খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে এবং প্রাক্তন খেলোয়াড়দের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে মাঠে এনে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের খেলা দেখাতে হবে। নবীনরা যে ভুল-ভ্রান্তিগুলো করছে সেগুলো সুধরিয়ে সঠিক খেলাটা তাদের শিখিয়ে দিতে হবে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের শেষে স্টেডিয়ামে আগত সকল আমন্ত্রিত অতিথি, দর্শকবৃন্দ রানারআপ দলের সকল খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনী বক্তব্য দেন। এরপরই শুরু হয় স্টেডিয়াম জুড়ে বর্নিল আতশবাজির ঝলকানি। মুহুর্মুর্হু আতশবাজির শব্দ ও আলোকছটাায় স্টেডিয়ামের আকাশ এক মনোরম সাজে সজ্জিত হয়। এদিকে অনেক দর্শক ও ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিগণ দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, যে টুর্নামেন্ট নিয়ে এতো আয়োজন এতো উৎসব যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে এতো বড় ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়েছে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারকে অতিথি মঞ্চে ডাকা হলো না।
এদিকে খেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা দলের টিম ম্যানেজার অধ্যক্ষ মাহাবুল ইসলাম সেলিম, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা ভিকুইন্স পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক জহুরুল ইসলাম জীম ও অধ্যক্ষ হামিদুল ইসলাম মুন্সী।