সিটি নির্বাচন দুই দলের জন্যই অগ্নিপরীক্ষা

গাজীপুর ও খুলনার ভোট নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি : প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে আজ
স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আগামী ১৫ মে প্রথম ধাপের গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হতে দুই দলই মরিয়া। অনেক দিন পর নৌকা ও ধানের শীষের এই লড়াইকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে ব্যাপক আলোচনা। উভয় পক্ষই অগ্নিপরীক্ষা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জয়ী হয়ে তারা নিজেদের পক্ষে ইতিবাচক বার্তা দিতে চায়। দুই দলটি জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে চায়। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দুই দলেরই একক মেয়র প্রার্থী আজ রোববার চূড়ান্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুই সিটিতে যারা বিজয়ী হবেন তারা আগামী নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন। আর সরকারকে একদিকে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করার প্রমাণ করতে হবে, অপরদিকে নৌকার জয় ঘরে তুলতে হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ বেশি।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ আগামী ১২ এপ্রিল। ১৫ ও ১৬ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল। আর ভোট হবে ১৫ মে। তফশিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার কৌশল নির্ধারণে নেমে পড়েছেন দুই দলের নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের ব্যাপক সফলতা জনগণের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছে। অনেকটা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই অতীতে এ দুটি সিটিতে পরাজয় হয় আওয়ামী লীগের।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দলের জন্য ত্যাগ, অবদান, জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতাসহ সবকিছু বিবেচনা করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। সবাইকে এক হয়ে তার জন্য কাজ করতে হবে। কেউ বিরোধিতা বা অসহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দুই সিটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাত্কার গ্রহণ করা হবে। পরে নৌকার একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।
দুই সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াকে চেয়ারপারসনের কারামুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপূরক হিসেবে দেখছে বিএনপি। বিএনপির দু’জন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে জয় মানে আন্দোলনেরও জয়। এ জয়ের মধ্যদিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আরো বেগবান হবে।
প্রার্থী চূড়ান্ত হবে আজ। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপিকে মোকাবেলায় তালুকদার আবদুল খালেককে রাজি করাতে চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকে বিএনপির প্রার্থী ধরে তাকে মোকাবেলার যে ছক কষা হচ্ছে, তাতে খালেককেই সবচেয়ে ভালো বিকল্প ভাবছে আওয়ামী লীগ। তবে খালেক যদি মেয়র পদে প্রার্থী হন, তাহলে তাকে ছাড়তে হবে বাগেরহাট-৩ (রামপাল, মংলা) আসন। তার স্ত্রী হাবিবুন নাহারকে আবারও এই আসনে মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তা আছে ক্ষমতাসীন দলে। এমনটি হলে খালেক রাজি হতে পারেন বলে জানা গেছে। আজ মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বিষয়টির সুরাহা হবে।
খুলনা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে যে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে তাতে খালেক ছাড়াও সদর আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, কাজী এনায়েত হোসেন, শেখ সৈয়দ আলী, সাইফুল ইসলামসহ নয়জনের নাম আছে। তালুকদার আবদুল খালেক গতকাল ইত্তেফাককে জানান, প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে তৃণমূল থেকে দাবি তুললেই হবে না। দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে ডেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তাহলেই আমি সেই নির্দেশ মেনে নির্বাচন করবো।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমতউল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলসহ ১০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছেন। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে কয়েক মাস আগে থেকেই মাঠে নামেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে আজমত উল্লাহ খানও সম্প্রতি মাঠে নেমেছেন। গাজীপুর মহানগর এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশী উভয়ের পোস্টার ছেয়ে গেছে।
অন্যদিকে মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীকের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন গাজীপুরে ৭ জন ও খুলনায় ৩ জন। আজ রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাত্কার গ্রহণ করবে দলটির মনোনয়ন বোর্ড। দলীয় সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম জমা দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটির বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসানউদ্দিন সরকার, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, মেয়র মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল কবির প্রমুখ। খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র পথে মনোনয়ন ফরম জমা দেন বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম এবং জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম। জানা গেছে, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট দুই সিটিতে দলীয় প্রার্থীদের জয়ের মুখ দেখাতে এই নির্বাচনকে রীতিমতো বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে দেখছে। আজ প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর বিএনপি নেতারা জোরেশোরে মাঠে নেমে পড়বেন।
জাপার মনোনয়নপত্র বিতরণ ৮-৯ এপ্রিল: এদিকে খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে আগামী ৮ ও ৯ এপ্রিল। দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের বনানী কার্যালয় থেকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আগ্রহীদের মাঝে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। ১০ এপ্রিল সাক্ষাত্কার গ্রহণ শেষে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।